reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ মে, ২০২৪

সম্পাদকীয়

স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় কমাতে পদক্ষেপ কাম্য

মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে চিকিৎসা একটি। সুস্থভাবে বাঁচার জন্য সুচিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু এই চিকিৎসা পেতেই অনেককে হিমশিম খেতে হয়। নিম্নবিত্ত মানুষকে রোগাক্রান্ত হলে আয়ের বড় একটি অংশই ব্যয় করতে হয় চিকিৎসায়। তাদের স্বাস্থ্যব্যয়ের প্রায় ৭০ ভাগ নিজেকে ব্যয় করতে হয়। এটি অনেক পরিবারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক সংকট এবং এটি মানুষের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবাকে বিলম্বিত করে। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়।

এসডিজি অ্যাকশন অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বলছে, দেশের দরিদ্র ২০ শতাংশ পরিবার মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবায় সরকারি সুবিধার ২০ শতাংশও ভোগ করতে পারে না। ৪৬ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা খরচ মেটাতে কোনো না কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন। দরিদ্র জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য সরকারের বরাদ্দও অপর্যাপ্ত। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, করোনা মহামারির সময়ই স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দুরবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছিল। কিন্তু এরপরও বাজেটে এ খাত প্রত্যাশিত মনোযোগ পাচ্ছে না। টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়লেও বাজেট ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় বরাদ্দ খুব একটা বাড়ছে না। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় করে, যা বৈশ্বিক গড় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে অনেক কম। সবার জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের সক্ষমতা তৈরির ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা। গত রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরে ওই প্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে একজন বাংলাদেশির বছরে ৮৮ ডলার খরচ করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে মাথাপিছু খরচ হয় ৫৮ ডলার, যার বড় অংশই নাগরিকরা নিজেরা সংস্থান করেন। এটি অনেক পরিবারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক সংকট এবং এটি মানুষের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবাকে বিলম্বিত করে। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। জীবনের সংকট সময়ে মানুষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিত্তহীন বা নিম্নবিত্তের মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালই একমাত্র ভরসা। তারা সেখানে ভিড় করেন, নানা বিড়ম্বনার শিকার হন। সরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের আউটডোরে বিনা দর্শনীতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র পেলেও অনেক ওষুধ কিনতে হয় বাইরের দোকান থেকে। এখন ওষুধের মূল্য হয়েছে আকাশছোঁয়া। রোগ নির্ণয়ের জন্যও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শরণাপন্ন হতে হয় বাইরের ল্যাবরেটরির কাছে। তাতেও রয়েছে অঢেল অর্থব্যয়। কখনো অপরিপক্ব বা ভুয়া চিকিৎসকের কবলে পড়ে রোগীকে অকালে প্রাণ হারানোর ঘটনাও ঘটে। বাংলাদেশে ওষুধের মান ও দাম নিয়ন্ত্রণেও নেই, তেমন কার্যকর উদ্যোগ। সবকিছু মিলিয়ে দুর্ভোগটা নেমে আসে রোগী বা রোগীর পরিবারের ওপরেই।

স্বাস্থ্য খাতে সরকারি সেবার মান উন্নয়ন করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কোনো মানুষ অসুস্থ হলে যাতে সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এতে মানুষের চিকিৎসা ব্যয় কমে আসবে। স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়কে দেশের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে সরকারের পদক্ষেপ কাম্য। বেসরকারি খাতে আকাশচুম্বী স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় কমিয়ে আনতে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ আসবে- এমন প্রত্যাশা সবার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close