reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২০ মে, ২০২৪

সম্পাদকীয়

অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উদ্যোগ নিন

বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা অনেকাংশেই দায়ী। ইটভাটার ধোঁয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। দেশের বেশির ভাগ ইটভাটা চলছে নিয়মবহির্ভূত। কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এসব ইটের ভাটা। এই ইটভাটার বেশির ভাগেরই নেই কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র। ফসলি জমির মাটি ও বাগানের গাছ উজাড় করে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। এতে ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে রোগবালাই। পাশাপাশি বিনষ্ট হচ্ছে সরকারি রাস্তা, উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষিজমি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে নির্মিত ইটভাটার সংখ্যা ৬ হাজার ৮৭৬টি। এর মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র অনুযায়ী বৈধ ভাটার সংখ্যা ৩ হাজার ৩৮৫টি এবং অবৈধ ৩ হাজার ৪৯১টি। গত তিন বছরে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হয়েছে ৯২৫টি। এসবের মধ্যে ঢাকা বিভাগে বৈধ ১ হাজার ১৬৩টি ও অবৈধ ৬৬৪টি, রাজশাহীতে ২৫২টি ও অবৈধ ৭৭১টি, বরিশালে ৩৫৯টি ও অবৈধ ১৪২টি, সিলেটে ২৬৩টি ও অবৈধ ৩৬টি, খুলনায় ৩০৮টি ও অবৈধ ৭৯০টি, রংপুরে ১৯৪টি ও ৮৪৪টি, ময়মনসিংহে ৮১টি ও অবৈধ ৪৩৪টি এবং চট্টগ্রামে ৭৬৫টি ও অবৈধ ৭৩৫টি। এ ছাড়া অধিদপ্তরের হিসাবের বাইরে দেশে রয়েছে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা। বিশ্বব্যাংকের একটি তথ্যানুযায়ী, ইটভাটা থেকে দেশে পরিবেশদূষণ ঘটছে ১৩ শতাংশ। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলেছে, এ তথ্যটি সঠিক নয়। কারণ এই সেক্টর থেকে পরিবেশদূষণ হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ।

ভয়াবহ বায়ুদূষণকারী ইটভাটার কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বাড়ছে মানুষের রোগবালাই। ভাটার আশপাশে বসবাস করা বাসিন্দাদের শ্বাসকষ্ট থেকে মরণঘাতী রোগ দানা বাঁধছে। অন্যদিকে, ইটভাটাকে পুঁজি করে মাটি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। তাতে একদিকে কমছে ফসলি জমি, অন্যদিকে জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অথবা নদীর তীরে পতিত দেড় একর ভূমিতে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। সরকারি সড়ক দিয়ে নয়, বরং ইটভাটার নিজস্ব রাস্তা দিয়ে চলবে মাটি বহনকারী ট্রাক্টর। সেই সঙ্গে ইটভাটায় খনন করতে হবে পুকুর। অথচ বাস্তবতার সঙ্গে কোনো কিছুই মানছেন না ভাটা মালিকরা। মাটি বহনের ট্রাক্টরগুলো পাকা সড়কে নিয়মিত চলাচল করছে। এতে জনসাধারণ ধুলাবালিতে ভোগান্তিসহ যানবাহন চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা।

ইটভাটার দূষণ ছড়াচ্ছে ভয়াবহভাবে। পরিবেশ রক্ষায় এ মুহূর্তে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা জরুরি হয়েছে। এটি রোধ না করলে বায়ুদূষণ কমবে না। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জমি যেভাবে তার উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে, সে হিসেবে মাটি পুড়িয়ে ইট বানানো বন্ধ না করলে ২০৪০ সালে দেশের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ খাদ্য ঘাটতিতে পড়বে। ইটভাটার নির্গত সালফার ও নাইট্রোজেন অক্সাইড অ্যাসিড বৃষ্টির জন্য দায়ী। এতে ফসলের হানি ঘটছে ও নদীর মাছ মরে যাচ্ছে। এ ছাড়া ইটভাটার আশপাশের এলাকায় পাখিসহ অন্য প্রাণী উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। ইটভাটার কারণে বছরে ১৩ কোটি টন মাটি নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমির। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া ক্ষতিকর উপাদান ইটভাটায় ব্যবহার হওয়ার কারণে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বলা যায়, জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে।

সারা দেশে অধিকাংশ ইটভাটাই মানছে না কোনো আইন বা নিয়মনীতি। এ অবস্থায় অনুমোদনহীন ইটভাটার কার্যক্রম কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সে উপায় খুঁজতে হবে। একই সঙ্গে নতুন ইটভাটা স্থাপনে অনুমোদনদানে সতর্কতা অবলম্বন এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ইটভাটা তৈরিতে নীতিগত সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close