reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ মে, ২০২৪

সম্পাদকীয়

পাহাড় কাটা বন্ধে চাই কার্যকর উদ্যোগ

সৃষ্টি জগতে পাহাড়-পর্বত শুধু প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের অংশই নয়, প্রাণিকুলের জীবন সুরক্ষায়ও রয়েছে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পাহাড় হচ্ছে পৃথিবীতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় খুঁটির মতো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিহত করে এই পাহাড়। একই সঙ্গে পাহাড় হলো মানুষ এবং জীববৈচিত্র্যের সুপেয় পানির আধার। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, মহান আল্লাহ আসমান-জমিনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য পৃথিবীতে পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি করেছেন। পাহাড়কে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। পবিত্র কোরআন মজিদে এ বিষয়টির উল্লেখ আছে। সুরা নাবায় (আয়াত-৬-৭) আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি কি জমিনকে করিনি বিছানাসদৃশ ও পাহাড়গুলোকে পেরেকস্বরূপ’। কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই জমিনের মধ্যে পাহাড়গুলো রেখে দিয়েছেন, যাতে করে জমিন তোমাদের নিয়ে ঢলে না পড়ে।’ (সুরা নাহল : ১৫)

অথচ প্রকৃতি-পরিবেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এই পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলছে মানুষ। বছরের পর বছর ধরে পাহাড়ের অত্যাচার চলছে। পাহাড়ের গাছপালা অবাধে কেটে ধ্বংস করে ফেলায় অনেক বন্য পশুপাখি আজ বিলুপ্তির পথে। গাছপালা কাটার ফলে প্রাণিজগতের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। অতীতে গ্রামাঞ্চলে যেসব বন্য পশুপাখি দেখা যেত, পরিবেশের বিরূপ প্রভাবে তাদের অধিকাংশ এখন আর দেখা যায় না। এ ছাড়া পাহাড় কাটার অর্থই হলো জমিনের খুঁটিগুলোকে উপড়ে ফেলা। আর মানুষ যখন জমিনের খুঁটি উপড়ে ফেলে দেয়, তখন পাহাড় স্বাভাবিক নিয়মে ধসে পড়ে। অন্যদিকে পাহাড় ধসে মানুষের প্রাণহানি ঘটে। পাহাড় কেটে বন-জঙ্গল উজাড় করার ফলে সাম্প্রতিককালে পরিবেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। মানুষ যখন থেকে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের বিরুদ্ধে আচরণ করে তথা প্রকৃতিকে ধ্বংস করে, তখনই প্রকৃতি তার স্বরূপে পরিবেশের সঙ্গে করে বৈরী আচরণ।

প্রতিদিনের সংবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে একের পর এক বিলাসবহুল আবাসিক এলাকা। ফলে ক্রমেই পাহাড়শূন্য হচ্ছে এই এলাকা। ৪০ বছর আগেও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২০০ পাহাড়ের অস্তিত্ব ছিল। যার ৬০ শতাংশ এরই মধ্যে সাবাড় হয়ে গেছে। পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে একের পর এক বিলাসবহুল আবাসিক এলাকা। বাকি পাহাড়ও রাতের আঁধারে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী মহল সবকিছু ম্যানেজ করে পাহাড়গুলো কাটছে। চট্টগ্রামে পাহাড় দখলের প্রতিযোগিতায় আছে নামসর্বস্ব সংগঠন ও নানা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দখলদারদের তালিকায় রয়েছেন জনপ্রতিনিধিরাও। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ১৩টি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি পরিবার বাস করছে। তবে এই সংখ্যা আরো বেশি হবে। গত কয়েক বছরে পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে মারা গেছে ২০০-এরও বেশি মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড় যেভাবে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে, তাতে চট্টগ্রামে আগামী ১০ বছরের মধ্যে পাহাড়ের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া না। এতে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা বহু গুণে বেড়ে যাবে। ক্রমবর্ধমান ইট-কংক্রিটের সৃষ্ট উত্তাপ পরিশোধন করার বিকল্প না থাকায় মহানগরীর তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাবে।

পাহাড় কেটে আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন করে মানুষ যতটুকু আর্থিক লাভবান হচ্ছে, বাস্তবে প্রাকৃতিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। সুতরাং পাহাড় সংরক্ষণে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পাহাড় কাটা, পাহাড়ের বৃক্ষ উজাড়, উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close