শরীফ উল্যাহ

  ১৬ মে, ২০২৪

মুক্তমত

সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে

সদ্যপ্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে অনেকেই প্রত্যাশিতভাবে ভালো ফল করেছেন আবার অনেকে অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো করেছেন। কেউ কেউ আবার তার বিপরীত, অর্থাৎ খারাপ করেছেন। গত বছর এবং তার আগের বছর একটি উপজেলায় ইউএনও হিসেবে কাজ করার সুবাদে শিক্ষার মানোন্নয়নে অল্পসময়ে নিজের মতো করে কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বলা যায় অনেক বেশি বেপরোয়া ছিলাম। তাই, এবারের পরীক্ষার রেজাল্ট দেখা থেকে বিশেষ করে ওই উপজেলার প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ও শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট দেখার আগ্রহ থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখতে পারিনি। আর রেজাল্ট দেখার পর তৎক্ষণাৎ এই লেখাটি লেখা থেকেও নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারিনি। যাই হোক, যে বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি- আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ তথা বর্তমান শিক্ষার্থীদের একটি ব্যাচের এসএসসি পরীক্ষার ফল সদ্য প্রকাশিত হয়েছে। কারো জন্য এই ফল সুখকর হয়েছে, আবার কারো জন্য তার উল্টো। কারো কারো ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার মা-বাবারাও যারপরনাই আনন্দিত। আবার কারো মা-বাবা হতাশ হয়েছেন। তবে, এ ক্ষেত্রে আমি বলব- এসব আনন্দ-হতাশাকে সময়ের ফ্রেমে আবদ্ধ করে সামনে দৃষ্টি দিতে হবে। আজ যে শিক্ষার্থী খারাপ করল সে যেমন আগামীতে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে, আবার যে শিক্ষার্থী এখন ভালো রেজাল্টের মাধ্যমে এসএসসি জয় করল, আগামীতে তারও অনাকাঙ্ক্ষিত পরাজয় দেখতে হতে পারে। তাই সবকিছু জয় করার মতো অতি আনন্দিত হয়ে ভবিষ্যতে যেমন ঢিলেমি দেওয়া কখনোই ঠিক নয়, আবার একটু খারাপ ফল করে পরাজিত হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে নিজেকে আরো তলিয়ে দেওয়ার চিন্তা পুরোপুরিই আত্মঘাতী।

আমি যে উপজেলায় কাজ করেছি সেখানে দেখলাম- এবার এসএসসিতে পাসের হার শতকরা ৯২ ভাগের ওপরে, বিগত বছরের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ বেশি। অনেক প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিষ্ঠানগুলোর ফলাফলে দারুণ ভারসাম্য পরিলক্ষিত হয়েছে। আমার জন্য বিষয়টি খুবই প্রত্যাশিত ছিল। আর এটি ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আশা করি, ভবিষ্যতেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সাফল্য অর্জনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন এবং সঠিকভাবে কাজ করবেন। তবেই আগামীতে আমরা আরো ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখতে পারব। আর এ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আমার বক্তব্য হচ্ছে- এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনই কিন্তু সবকিছু নয়। তবে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষা হচ্ছে শিক্ষাজীবনে ওপরে ওঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করা। পর্যায়ক্রমে এইচএসসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স-মাস্টার্স ইত্যাদি কয়েকটি কঠিন অ্যাকাডেমিক ধাপ অতিক্রমের মাধ্যমে আমরা শিক্ষাজীবনে নিজেদের সফল বলার মতো একটা স্তরে পৌঁছে যাই। তারপর শুরু হয় কর্মজীবনের যুদ্ধ, অন্য এক প্রতিযোগিতা। শিক্ষাজীবনে কে, কোথায়, কোন বিষয়ে পড়াশোনা করবে, কে তার স্বপ্নকে ছুঁতে পারবে, এটা আগে থেকে বলা মুশকিল। তবে এ ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর জন্য অপরিহার্য বিষয় হচ্ছে- সুনির্দিষ্ট গন্তব্য ঠিক করা। প্রথমত, গন্তব্য ঠিক করতে পারলেই পরে লক্ষ্যে এগোনোর অনেক রাস্তা বের হয়ে যাবে। আর সেই রাস্তা ধরে ঠিকভাবে চলতে পারলে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম।

শিক্ষাজীবনে ভালোভাবে পড়াশোনা আর সাফল্য একসূত্রে গাঁথা। এর ব্যতিক্রম হিসাব করা চরম বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। শিক্ষাজীবনে প্রত্যেকটা দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে এক দিনের জন্য কেউ পিছিয়ে গেলে আরেকজন ঠিকই এগিয়ে যাবে। আর আপনি হয়তো পেছনেই পড়ে থাকবেন। এখানে সাফল্যের দরজাটা আপনার জন্য খোলা থাকবে না কিংবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে না। আপনাকে অবশ্যই কষ্ট করে ও পরিশ্রম করে খুলতে হবে। একটি দৌড় প্রতিযোগিতায় যেমন সবার আগে থাকা, প্রতিযোগী ফিনিশিং লাইনে না পৌঁছে বিজয়োল্লাস করার সুযোগ নেই। তেমনি শিক্ষাজীবনেও বলা যায়, একটা ফিনিশিং লাইন আছে। সেখানে যেতে হলে আপনাকে আপনার প্রচেষ্টায় অবশ্যই ধারাবাহিক হতে হবে। সব প্রতিবন্ধকতা সুন্দরভাবে মোকাবিলা করতে হবে। যাবতীয় খারাপ বিষয় ও খারাপ সঙ্গ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। তবেই আপনার সাফল্যের মুকুটে একটি একটি করে পালক যোগ হতে থাকবে। আর ভবিষ্যতে আপনি নিজেকে যেখানে বা যে অবস্থানে দেখতে চাচ্ছেন, সেখানে পৌঁছে যাওয়া আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।

লেখক : নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ, সুনামগঞ্জ সিলেট

সাবেক ইউএনও, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close