এইচ বি রিতা
দেশপ্রেমে প্রবাসে সংস্কৃতিচর্চা
প্রবাসী বাঙালি সংস্কৃতি বলতে বাঙালিদের সাংস্কৃতিকচর্চা, ঐতিহ্য, ভাষা এবং পরিচয়কে বোঝায়। জন্মভূমি থেকে ভৌগোলিক দূরত্ব সত্ত্বেও, প্রবাসী বাঙালিরা তাদের গৃহীত দেশের স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গিয়ে নিজ সাংস্কৃতিক শেকড়ের সঙ্গে একটি দৃঢ় সংযোগ বজায় রেখেছেন যুগ যুগ ধরে এবং নিজ ঐতিহ্যকে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিয়ে তা সংরক্ষণ করছেন। প্রবাসী বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্যবাহী বাঙালি রীতিনীতি এবং যেসব দেশে বাঙালিরা বসতি স্থাপন করেছেন, তাদের প্রভাবের সংমিশ্রণ দ্বারাই চিহ্নিত করা হয়। এই সংস্কৃতিচর্চা শুধু ভাষার চর্চা নয়, রন্ধনপ্রণালি, বাগান চাষ, ধর্মীয়-সামাজিক বিভিন্ন উৎসব ও বিশ্বাসকেও লালন-পালন করে। প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে এই সাংস্কৃতিকচর্চা দেশপ্রেম, সহনশীলতা এবং অভিযোজনকে খুব দৃঢ়তার সঙ্গে প্রদর্শন করে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছি। অভিজ্ঞতা জন্মেছে বেশ ভিন্ন সংস্কৃতিরও এবং এই ভিন্ন সংস্কৃতির আবহে থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের কথা বলতে গেলে, যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালি সংস্কৃতি রক্ষায়, ভাষাএকটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। বাঙালি, তার সমৃদ্ধ সাহিত্যিক ঐতিহ্যের সঙ্গে, সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মূল ভিত্তি হিসেবেই রয়ে গেছে। এখানে বিভিন্ন কবিতা পাঠ, গল্প পাঠ, গানের আসর, নৃত্য-অনুষ্ঠান চলে। মঞ্চ নাটকের আয়োজন থাকে। সিনেমা থিয়েটারে থাকে দেশীয় চলচ্চিত্র। বিপুলভাবে বিভিন্ন জায়গায় আয়োজন করা হয় গান, নৃত্য, নাটক, সাহিত্যিক অনুষ্ঠানগুলো। অনলাইনে জুমের মাধ্যমেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শামসুর রাহমান এবং আরো অনেক ইতিহাসখ্যাত কবি-লেখকের জন্মদিন বা মৃত্যুদিনে বাঙালি কবি, লেখকরা তাদের রচনা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে নিজ ভাষাকে সমুন্নত রাখেন। প্রতি বছর মুক্তধারা থেকে আয়োজন করা হয় প্রবাসী বইমেলা, যা বলা যায় দেশের বাইরে আরেক মিনি একুশে বইমেলা। বহু লেখক তাদের প্রকাশিত বই নিয়ে উপস্থিত হন এই মেলায়। দেশের প্রকাশকরা অতিথি হিসেবে যুক্ত হন প্রতি বছর বইমেলায়। এখানে বিভিন্ন কমিউনিটিমূলক মুদ্রণ পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়, যেখানে থাকে খবর, বিনোদন, মতামত, ভাবনা, খেলাধুলাসহ সাহিত্যচর্চার এক বিরাট বিভাগ। সাহিত্য ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এসবই মূলত অবদান রাখে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভাষাকে প্রাণবন্ত করে রাখে।
বাঙালি প্রবাসীদের মধ্যে সাংস্কৃতিকচর্চার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রন্ধনপ্রণালি। বাঙালি রন্ধনপ্রণালি, তার স্বতন্ত্র স্বাদ এবং খাবারের জন্য পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ করে নিউইয়র্কে বাঙালি রেস্টুরেন্টগুলো ধরে রেখেছে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের স্বাদ। বাঙালি রেসিপিতে সব ধরনের খাবার রয়েছে রেস্টুরেন্টগুলোয়। ভাত, নানা পদের মাছ-মাংসের তরকারির সঙ্গে থাকে সবজি ভাজি। গ্রামবাংলার সুস্বাদু ও মজার খাবার খুদের ভাতের সঙ্গে থাকে নানা পদের শুঁটকি ভর্তা। থাকে পান্তা-ইলিশ।বাজারগুলোয় বাংলাদেশের সবকিছুই পাওয়া যায়। এমনকি লইট্টা শুঁটকি, চ্যাপা শুঁটকি, ইলিশ শুঁটকি থেকে শুরু করে কতবেল, জলপাই, কাঁঠাল, খুদের চাল, দেশি লেবু, তালের শাঁসের মতো ব্যয়বহুল জিনিসগুলোও বাজারে আনা হয়। রাস্তার পাশে সাইডওয়াকে থাকে দইবড়া, ফুচকার মতো মজাদার ঐতিহ্যবাহী প্রিয় খাবার। এসবই প্রবাসের মাটিতে আমাদের সংস্কৃতির সংরক্ষণ।
প্রবাসের বাঙালি উৎসব এবং উদযাপনগুলো নজর কাড়ার মতো। উৎসব সম্ভবত প্রবাসীদের মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রকাশ। রোজার মাস এলেই মসজিদগুলোয় থাকে বিনামূল্যে ইফতার, সাহরি এবং ধর্মীয় কাজ সম্পন্ন করার সুযোগ ও আয়োজন। ঈদ পালন করা হয় ঘটা করে। ঈদের আগের রাতে বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতে বসে মেহেদি আয়োজন। নানা ডিজাইনের ঈদ পোশাক কেনাকাটায় ব্যস্ত হন প্রবাসীরা। প্রবাসে ধর্মীয় দুর্গাপূজা, দেবীদুর্গার উপাসনা, বাংলায় উৎসবের জাঁকজমক ও উদ্দীপনাকে প্রতিফলিত করে অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে উদযাপিত হয়। প্রবাসীরা একত্র হয়ে প্যান্ডেল স্থাপন করেন, পূজার অনুষ্ঠান করেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোয় অংশগ্রহণ করেন। এখানেও থাকে নাচ, গানের আয়োজন। অন্যান্য উৎসব যেমন সরস্বতী পূজা, পহেলা বৈশাখ এবং রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়। থাকে বিভিন্ন আঞ্চলিক পিঠা উৎসব।
যুক্তরাষ্ট্রের বহু স্টেটে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো উল্লেখযোগ্য, বিশেষ করে নিউইয়র্কে। প্রবাসী বাঙালিরা প্রায়ই অনুষ্ঠান আয়োজন, উৎসব উদযাপন এবং বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার সুবিধার্থে সাংস্কৃতিক সংগঠন ও দল গঠন করেন। এই সংগঠনগুলো সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে, বাংলা ভাষা, সংগীত (উভয় ধ্রুপদি এবং রবীন্দ্রসংগীত), নৃত্য (কথকের মতো ঐতিহ্যবাহী নৃত্য) এবং এমনকি নাটকের রিহার্সালের মতো ক্লাসগুলো অফার করে। দেশ থেকে এ দেশে আনা হয় বিভিন্ন সংগীতশিল্পী, অভিনয়শিল্পীদের। এসবই মূলত বিদেশে বসবাসকারী বাঙালিদের মধ্যে সম্প্রদায়ের বোধ জাগ্রত করে। অনেক সংগঠন বাঙালিদের মৃত্যুর পর জানাজা ও কবরের ব্যবস্থা করেন। থাকে মৃতদেহ অন্ত্যেষ্টিস্থলের ব্যবস্থা।
প্রবাসে থাকা মানে কর্মজীবন নিশ্চিত। এখানে পেটে ভাত জোগানোর চিন্তা করতে হয় ঘুম ভেঙেই। বিল পরিশোধ করতে হয় নিয়মিত। কাজেই প্রবাসীদের কর্মরত থাকতে হয়। তারপর আসে সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো। কেউ সপ্তাহে পাঁচদিন কাজ করেন আট ঘণ্টা করে। কেউ সপ্তাহে সাতদিনই কাজ করেন। কাউকে আবার দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করার পর শরীমণ্ডমন উভয়ই ক্লান্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয়টি হলো, এতকিছুর পরও বাঙালিরা নিয়মিত শিল্প-সংস্কৃতিমূলক কাজগুলো করে যাচ্ছেন। এ এক দুর্লভ কাজ, যা প্রশংসার দাবি রাখে। বিশেষ করে একজন নারীর জন্য প্রবাসের জীবন আরো কঠিন। তাকে চাকরি করতে হয়, সংসার সামলাতে হয়। পরিবারে সন্তান ও বয়স্কদের যত্ন করতে হয়। তারপরও তারা যেভাবে শিল্প-সাহিত্যচর্চা বজায় রেখেছেন, নিয়মিত লিখছেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসব বা আয়োজনে যুক্ত হচ্ছেন, তা অবিশ্বাস্য এক যাত্রা এবং প্রশংসনীয়।
আরো আছে, সন্তানের মধ্যে নিজ ভাষা ও ধর্মীয় সাংস্কৃতিক বীজ পোঁতে দেওয়ার বিষয়টি। এ দেশে জন্ম নেওয়া বা বেড়ে ওঠা আমাদের সন্তানদের মৌলিক ভাষা ইংলিশ। তারা বাংলায় কথা বলতে পারলেও বেশিরভাগ বাচ্চাদের জন্য বাংলায় পড়া বা লেখা কঠিন কাজ। অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের তাই বাংলা স্কুলে নিয়ে যান, কখনো নিজেরাই শেখান। ভাষা ও সংস্কৃতিচর্চায় এ দেশের অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানকে নিয়ে যান বিভিন্ন গান ও নৃত্যের ক্লাসগুলোয়। বহু বাচ্চা প্রবাসের মসজিদ ও মন্দিরে যুক্ত হয় ধর্মীয় শিক্ষা নিতে। ছোট বয়সেই কোরআন খতম করে তারা। এই কাজগুলোর বেশিটাই মায়েদের করতে হয়।
তবে, সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে যে বিষয়টা না বললেই নয় তা হলো- জেনারেশন গ্যাপসংকট, যা সন্তানদের ওপর নিজ বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক ধারণাগুলো অনেক সময় চাপিয়ে দেয় এবং যা মূলত ক্ষতিকর। যেকোনো সম্প্রদায়ের বাবা-মায়েরা সাধারণত দেশীয় সাংস্কৃতিক বিশ্বাসব্যবস্থা এবং প্রচলিত সাংস্কৃতিক আচরণের ধরনগুলোর প্রতি বিশ্বস্ত এবং যত্নশীল হন। কখনো কখনো তাদের সাংস্কৃতিকভাবে নির্মিত মনোভাব এতটাই পোক্ত হয় যে, তারা নিজের সন্তানদের সম্পর্কে কী বলা যায় বা কী করা যায় তা উপেক্ষা করেন। প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপের দেশ সামোয়া। সেখানে একটি অবাধ্য শিশু সম্পর্কে প্রাপ্তবয়স্কদের বক্তব্য হলো, E lë fefe le tamaitiiti অর্থাৎ শিশু ভয় পায় না/শিশুর কোনো ভয় নেই। সামোয়ান সংস্কৃতির বিশ্বাস হলো, প্রাপ্তবয়স্করা যেমন ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধেয় ভীতশীল এবং আজ্ঞাবহ, তেমনি বাচ্চাদেরও প্রাপ্তবয়স্কদের (বাবা-মা এবং শিক্ষকদের) প্রতি শ্রদ্ধাশীল, বাধ্য এবং কিছুটা ভীত হতে হবে। তাই যত্নশীল, শিক্ষক এবং বাবা-মা, প্রয়োজনে সামোয়ান শিশুদের উপযুক্ত আচরণ ও সামাজিকীকরণ নিশ্চিত করতে শারীরিক শাস্তি দেন। তারা মনে করেন, সামাজিকভাবে মূল্যবান আচরণ শিশুদের অ্যাকাডেমিক সাফল্যের দিকে পরিচালিত করে এবং সন্তানরা তাদের বাবা-মার প্রতি দায়বদ্ধতা পূরণ করতে পারে।
এমন কিছু সাংস্কৃতিক বিশ্বাস প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যেও আছে। আমরা কীভাবে একটি শিশুসন্তানের যত্ন নিচ্ছি, শিশুদের কতটা স্বাধীনতা দিচ্ছি, তাদের মতামত ও অনুভূতিকে কতটা মূল্যায়ন করছি, লালনপালনে কতটা সীমাবদ্ধ থাকা দরকার, সন্তানের কোন আচরণটার ওপর জোর দিতে হবে- এসবের ওপর সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। অনেক প্রবাসী বাঙালি যেমন এসব ক্ষেত্রে এগিয়ে, সন্তানদের প্রাধান্য দিতে শিখেছেন, আবার অনেক বাঙালি এখনো এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন। প্রবাসে অনেকেই এই সাংস্কৃতিক বিশ্বাস ও মূল্যবোধ ধরে রাখতে গিয়ে বাচ্চাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন, যেমন- বাংলা ভাষা পড়তে হবে, লিখতে হবে, বাংলায় শুদ্ধভাবে কথা বলতে হবে, গান, নাচ শিখতে হবে বা বিভিন্ন সাংস্কৃতিকমূলক অনুষ্ঠানে বাবা-মায়ের সঙ্গে যেতেই হবে, ধর্মীয় শিক্ষা নিতে হবে, এমন কাপড় পরা যাবে না, বাবা-মায়ের স্বপ্নপূরণ করতে ওমুক-তমুক হতেই হবে, বড়দের চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না, বড়দের ভুল ধরা যাবে না, বড়রা ভুল বললেও সেটা মানতে হবে, বাচ্চাদের সঙ্গে শারীরিক গোপনীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে নেই...ইত্যাদি। আমরা অনেকেই বুঝতে চাই না যে, তারা জন্মেছে, বেড়ে উঠছে ভিন্ন এক সংস্কৃতিতে, যেখানে ভাষা ভিন্ন, জীবনযাপন ভিন্ন এবং চিন্তাধারা আরো উন্মুক্ত। জোর দিয়ে নয়, আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার মাধ্যমে সন্তানদের মধ্যে নিজ বিশ্বাস বা সংস্কৃতি পোঁতে দেওয়ার চেষ্টা করা দরকার। যদি তারা সেটা গ্রহণ না করে, তবে জোর করে কিছু হবে না বরং জোর-জবরদস্তিতে বাচ্চাদের যতটুকু মেধা, ধারণক্ষমতা বা সহন ক্ষমতা আছে, তাও নষ্ট হয়ে যাবে। তারা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হবে। আমাদের যদি বলা হয়, আমেরিকান হতে, সম্পূর্ণটা কি হতে পারব? পারব কি নিজ সংস্কৃতি থেকে সম্পূর্ণ বেরিয়ে এসে পূর্ণাঙ্গ আমেরিকান হতে? পারব না। কারণ আমরা জন্মেছি এবং বেড়ে উঠেছি বাঙালি পরিবেশে, বাঙালি সংস্কৃতি ও নিজ মূল্যবোধে। একইভাবে এ দেশে জন্মানো, বেড়ে ওঠা সন্তানদের আমরা পূর্ণাঙ্গ বাঙালি করতে পারব না। তাই যতটা সম্ভব পোঁতে দেওয়ার চেষ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। জোর করা যাবে না। এতে তারা কোন সংস্কৃতি ধারণ করবে, কীভাবে জীবনযাপন করবে এবং নিজ পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্ত হবে। আর এসবের কারণে প্রবাসে মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব ও বিচ্ছেদের সংখ্যাও বাড়ছে।
আমরা যা করব, তা-ই সন্তানরা শিখবে। যেভাবে কথা বলব, তারা সেভাবেই কথা বলতে শিখবে। ছোট থেকে তাই তাদের মধ্যে নিজ সংস্কৃতির বীজ বপন করার চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে পরিবেশ যে তাদের জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে, তাও মাথায় রাখতে হবে। স্কুল-কলেজের পরিবেশ তাদের জীবনযাপন, চিন্তাধারা বদতে দিতে পারে। সেটাও ভাবতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সন্তান যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সংস্কৃতিকে বিকৃত না করে সম্মানে রাখছে, যতটুকুই ধারণ করছে বা যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অন্যের প্রতি মানবিক, নৈতিক, উদার, সহনশীল- ততক্ষণ পর্যন্ত বাকি সব বিষয় নিয়ে বিচলিত হওয়ার খুব একটা দরকার নেই।
যা হোক, দিনশেষে বলতেই হয়, নিজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রাখার পাশাপাশি প্রবাসী বাঙালিরা তাদের স্বাগতিক দেশের সংস্কৃতিকে আলিঙ্গন করেন। এই একীকরণ রন্ধনপ্রণালি, দ্বিভাষিকতা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণের সংমিশ্রণে স্পষ্ট। তরুণ প্রজন্ম, একটি দ্বিসাংস্কৃতিক পরিচয় নেভিগেট করে, তাদের বাঙালি ঐতিহ্যকে নিয়ে বৈশ্বিক সংস্কৃতির অংশে মিশে যায়। মোটকথা, প্রবাসী বাঙালি সংস্কৃতি একটি গতিশীল এবং বিকশিত ঘটনা, যা ঐতিহ্যের সংরক্ষণের সঙ্গে বিশ্বায়িত বিশ্বে বসবাসের সঙ্গে আসা অনিবার্য পরিবর্তন- উভয়কেই প্রতিফলিত করে। বাঙালিসমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ক্রমাগত অনুশীলন এবং অভিযোজনের মাধ্যমে, বিদেশে বাঙালিরা তাদের গৃহীত সমাজের বহু সংস্কৃতিতেও অবদান রাখে।
"