reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ড. মুকিদ চৌধুরীর দুই বই

জার্মানির বিবর্তনের ইতিহাস-সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ দলিল

‘জার্মান সাহিত্য : প্রারম্ভ থেকে অধুনা’ গ্রন্থে জার্মান সাহিত্যের ব্যাখ্যামূলক ধারাবাহিক বিবরণ পাওয়া যায়। লেখক ড. মুকিদ চৌধুরী এখানেই সফল। বইটি জার্মান সৃজনশীল চিন্তাধারার এক পরিপূর্ণ ইতিহাস। জার্মান ভাষায় লিখিত সাহিত্যের ভিত্তি প্রস্তুত হয় মৌখিক কাব্য ‘উত্তরাঞ্চলীয় কিংবদন্তি’র মধ্য দিয়ে। সপ্তম শতকে লেখা ‘হিলডেব্রানডের কীর্তন’ থেকে শুরু করে উচ্চজার্মান ও ব্যারোক যুগ হয়ে ক্যানট, লেসিং, ক্লোপস্টক, হারডার, ক্লিংগার, ভাগনার, গ্যেটে, শিলার, ফিশচে, নোভালিশ, ক্লাইস্ট, কার্ল মার্কস, কাফকা, ম্যান, ব্রেশট, রেমার্ক, গ্রাস, মুলার প্রমুখ কথাসাহিত্যিক, কবি, দার্শনিকের রচনার নিদর্শন এ গ্রন্থে দেওয়া হয়েছে। জার্মান সাহিত্যের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য, মানবিকতাবোধ, সমাজব্যবস্থার সমালোচনা- কখনো উগ্র, কখনো-বা বৈপ্লবিক; যুক্তিবোধের সঙ্গে দেশের ও দশের মঙ্গলসাধন; ন্যায়পরায়ণতা ও গণতান্ত্রিক প্রত্যয়, পুঁজিতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক আর্থসামাজিক ব্যবস্থা- সমগ্রভাবে এ গ্রন্থে জার্মান সাহিত্যের বিবর্তন ও ক্রমবিকাশ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থটি স্বাতন্ত্র্য, অভিনব, সার্থক, সরস ও তথ্যপূর্ণ। এবং গুরুত্ব, সময়ের দাবির চেয়ে অনেক বেশি। পাঠকের পুরোপুরি চাহিদা মেটাতে পারবে গ্রন্থটি।

‘জার্মানি : অতীত ও বর্তমান’ একটি ইতিহাস গ্রন্থ। বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠায় পাওয়া যাবে জার্মান সম্পর্কে নানা তথ্য। অনেকটা ইতিহাসের মতোই। জার্মানি বলতে জার্মান জাতির আবাসভূমিকেই বোঝানো হয়। তবে জার্মান জাতি বলতে যা বোঝায়, তা অতীতে অনেক ব্যাপক ছিল। অস্ট্রিয়া, হল্যান্ডসহ ইউরোপীয় কিছু দেশের অনেক মানুষই জার্মান জাতির অন্তর্ভুক্ত। এসব দেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সব খোঁজ পাওয়া যাবে বইটির পৃষ্ঠায় চোখ রাখলেই। খ্রিস্টপূর্বের রোমান ঐতিহাসিকদের রচনায় জার্মান জাতি ছিল বর্বর, মদ্যসিক্ত ও যুদ্ধপ্রিয়। তাদের ছিল প্রভুভক্তি, সাহস ও বিক্রম। মুকিদ চৌধুরী তার লেখায় এসব ঘটনার বর্ণনা করেছেন চমৎকার ভাষায়। ফ্যাংকীয় উপজাতিই প্রথমে রোমান ভাষা, ধর্ম, রীতিনীতি আয়ত্ত করে রোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপ থেকে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। অটো ফন বিসমার্ক ১৮ জানুয়ারি ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে নতুন রাষ্ট্র জার্মানির জন্ম দেন। লেখকের লেখা পাঠ করে মনে হবে- আপনি যেন নিজের চোখে জার্মানির অতীত দেখছি। ইউরোপীয় রাজনীতিতে ফ্রান্সের শক্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে জার্মানির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর দানবের মতো বিশাল পদক্ষেপে শিল্পজগতে প্রবেশ করে। রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ, অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ, সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ, কৃষি সাম্রাজ্যবাদ ও সমরতন্ত্রের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। জার্মানিরা কীভাবে পৃথিবীতে নিজেদের জায়গা করে, তার চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে বইয়ে। তারপর লেখক আমাদের তার লেখনীর মাধ্যমে নিয়ে যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জার্মানি দুই ভাগে বিভক্ত হয় : পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি। নির্মিত হয় বার্লিন প্রাচীর। ১৯৯০-এ বার্লিন প্রাচীর ভেঙে দুই জার্মানি এক হয়। জার্মান জনগোষ্ঠী ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে অনেক অবদান রেখেছে ও রাখছে। জার্মান অনেক লেখক, শিল্পী, স্থপতি, সংগীতজ্ঞ এবং দার্শনিক জন্মগ্রহণ করেছেন। জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি। জার্মানির সুদীর্ঘ ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সাহিত্য, দর্শন, রাজনীতি, কূটনীতি, আর্থসামাজিক, গণতান্ত্রিক ও মানবিক দিকগুলো ‘জার্মানি : অতীত ও বর্তমান’ গ্রন্থে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন মুকিদ চৌধুরী। বাংলা ভাষায় সমগ্রভাবে জার্মানির বিবর্তনের ইতিহাস-সংক্রান্ত প্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ হিসেবে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ও চমকপ্রদ দলিল হয়ে থাকবে।

* খরুল হাসান

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close