মোরশেদুল ইসলাম

  ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩

The Booker Prize 2023

ভয়ংকর ভবিষ্যতের কাল্পনিক গল্পে বাজিমাত

‘প্রফেট সং’ উপন্যাসের জন্য এ বছর বুকার পুরস্কার পেলেন পল লিঞ্চ। তিনি ১৯৭৭ সালে আয়ারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। একসময় পরিচিত ছিলেন চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে। সাহিত্য জগতে পা দেন ২০১৩ সালে। প্রকাশিত বই পাঁচটি

আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিন শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাইরে ছুরিকাঘাতের হামলায় তিন শিশু আহত হয়। সঙ্গে সঙ্গেই শহর জুড়ে শুরু হয় প্রচণ্ড বিক্ষোভ। পুলিশের তরফে বলা হয়, ‘কট্টর ডানপন্থি মতাদর্শ দ্বারা চালিত পুরো এক পাগলের দল’ এ হাঙ্গামার সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনার কয়েক দিন পরই ওই শহরের একজন ঔপন্যাসিক এমন একটি উপন্যাসের জন্য একটি সাহিত্য পুরস্কার জয় করেন, যে বইয়ের উপজীব্য ওই শহরেরই কাহিনি ঘিরে।

বলছি বুকার পুরস্কারের কথা। ইংরেজিভাষী দুনিয়ার অন্যতম প্রধান সাহিত্য পুরস্কার এটি। মর্যাদায় নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের পরপরই এর স্থান।

আইরিশ লেখক পল লিঞ্চ (৪৬) তার ‘প্রফেট সং’ উপন্যাসের জন্য এ বছর (২০২৩) বুকার পুরস্কার জিতেছেন। বইটি লিঞ্চের লেখা পঞ্চম বই এবং তিনি এটির পেছনে চার বছর ধরে কাজ করেছেন।

‘প্রফেট সং’ উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহ আবর্তিত হয়েছে অত্যাচারে নিমজ্জিত কল্পিত এক ডাবলিন শহরের পটভূমিতে। টোটালিটারিয়ানিজম বা একনায়কতন্ত্রবাদের দিকে ঝোঁকা সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত গোপন পুলিশের সদস্যরা এক দিন মাইক্রোবায়োলজিস্ট আইলিশের বাসায় আসে; তার স্বামী আয়ারল্যান্ডের শিক্ষক ইউনিয়নের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা; তারা তাকে চায়। শিগগির অন্য শত শত বেসামরিক লোকের সঙ্গে তিনি অদৃশ্য হয়ে যান। পেছনে রেখে যান শুধু আইলিশকে; তাদের চার সন্তান এবং তার বৃদ্ধ বাবার দেখাশোনা করার জন্য। এভাবেই গৃহযুদ্ধের মধ্যে পরিবারটিকে একসঙ্গে রাখার জন্য লড়াই করেন উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আইলিশ। উপন্যাস জুড়ে পরিবারটির ভয়ংকর এক নতুন দুনিয়ার সঙ্গে লড়াই দেখানো হয়েছে, যেখান থেকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো অদৃশ্য হতে শুরু করে।

ডাবলিন শহরে প্রায়ই এমন দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনা ঘটে। শুধু ওই কল্পিত ডাবলিন শহর নয়, ঘটনাপ্রবাহের বাস্তবতা ছাড়িয়ে গেছে দেশ-দেশান্তরে। দুনিয়ার দেশে দেশে আজ একনায়কতন্ত্র, গৃহযুদ্ধ আর মানুষের দুর্দশা যেন এক অমোঘ নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসবেরই বাস্তবতার ছায়ায়, কল্পনামিশ্রিত হয়ে ঘটনাগুলো আশ্চর্যজনকভাবে উঠে এসেছে ‘প্রফেট সং’ উপন্যাসে। মজার বিষয় হলো, এ বইতে কোনো প্যারাগ্রাফ নেই।

পুরস্কারের জন্য গঠিত বাছাই কমিটি এমন একটি উপন্যাস চেয়েছিল, যা সমকালের কথা বলতে পারে এবং একই সঙ্গে সময়কে ছাড়িয়ে গিয়ে দীর্ঘস্থায়ী টিকে থাকার সম্ভাবনাও রাখে। তারা বলেছেন, ‘এ অস্থির সময়ে, আমরা একটি পথনির্দেশক দৃষ্টিভঙ্গিসহ একটি উপন্যাসের সন্ধান করেছি- একটি বই যা আমাদের মনে করিয়ে দেবে যে, আমরা আমাদের চেয়েও বেশি; আমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে, যা সংরক্ষণ করার যোগ্য। সেদিক থেকে এটি একটি মর্মস্পর্শী এবং সত্য উপন্যাস, যেখানে আমাদের সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক উদ্বেগ তুলে ধরা হয়েছে।

সাহিত্যবোদ্ধা এইমি ওয়ালশ লিখেছেন, ‘লিঞ্চের কল্পিত আয়ারল্যান্ড তাবৎ দুনিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে, যেখানে শরণার্থীরা স্থলের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে সমুদ্রে যায়। “প্রফেট সং” ফিলিস্তিন, ইউক্রেন এবং সিরিয়ার সহিংসতার প্রতিফলন করে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো থেকে পালিয়ে আসা সবার অভিজ্ঞতাও প্রতিফলিত করে।’

লিঞ্চ নিজেও বলেন, ‘প্রফেট সং’ সিরিয়ার যুদ্ধ এবং শরণার্থী সংকট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছেন তিনি। ‘এখানে একটি সতর্কবাণী আছে- বিশেষ করে এ কথা বলার জন্য আমি বইটি লিখিনি, বইটি লিখেছি একটি বার্তা দেওয়ার জন্য। এ বইটিতে যা ঘটছে, তা যুগ যুগ ধরে ঘটছে এবং সম্ভবত এ ধরনের ধারণার প্রতি আমাদের নিজেদের প্রতিক্রিয়া আরো জোরালো করতে হবে।’ যদিও তার মতে, তিনি স্পষ্টভাবে কোনো রাজনৈতিক ঔপন্যাসিক নন।

পল লিঞ্চ ১৯৭৭ সালে আয়ারল্যান্ডের লিমেরিক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। কাউন্টি ডোনেগালে বেড়ে ওঠেন এবং এখন থাকেন ডাবলিনে। একসময় তিনি পরিচিত ছিলেন চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে। সাহিত্য জগতে পা দেন ২০১৩ সালে। তার অন্য উপন্যাসগুলো হলো- ‘বিয়ন্ড দ্য সি’, ‘গ্রেস’, ‘দ্য ব্ল্যাক স্নো’ ও ‘রেড স্কাই ইন মর্নিং’। তিনি আইরিস মারডক, জন ব্যানভিল, রডি ডয়েল এবং অ্যান এনরাইটের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বুকার পুরস্কার জেতা পঞ্চম আইরিশ লেখক।

এ নিয়ে টানা দুই বছর রাজনৈতিক সংঘাত নিয়ে লেখা উপন্যাস বুকার পুরস্কার জিতেছে। ২০২২ সালে শেহান করুনাতিলাকা ‘দ্য সেভেন মুন অব মালি আলমেদা’র জন্য জিতেছিলেন। বইটি শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, বুকার পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ৫০ হাজার পাউন্ড, বাংলাদেশের হিসাবে যা প্রায় ৭০ লাখ টাকা। ১৯৬৯ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। বুকার জয়ের শর্ত হলো, উপন্যাসটি ইংরেজিতে লেখা হতে হবে এবং যুক্তরাজ্যে বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত হতে হবে।

(বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে)

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close