চার কবির ৮ কবিতা
রহমান মুজিব
হেমন্ত কুহক
ছাতিম ফুলে হেমন্ত আসে
হিমের বাক্সে শিশিরের করাত দেখে
ঝলসে উঠে চোখের কোটপিন
মক্তবগামী বালিকার দুপায়ে লেগে থাকে
আমপারা ভোর
ভোরে শিশির আর ভাপার ধোঁয়া
মিশে গেলে, ধোঁয়াশার বনে হারিয়ে যায়
সোনারঙ ধানের মতো শিশিলিয়ার হৃদয়
ফুটে জবার লাল কুহক।
পাপেট শো
চোখ ছাড়া আর কোনো নদী নাই
অশ্রু ছাড়া জলের কোনো প্রতিভূ রং নাই
এখানে রং মাত্রই রক্তের হোলি
ব্যথার অন্তর্বাস হতে যখন বেরিয়ে আসে
খণ্ডিত বিশ্বাস, প্রত্ন সারথিরা তখন জলরঙে
যাপন করে পাপেট শো
হৃদয় রেখায় সহস্র গোলাপ খুন হতে দেখে
লাল লিটমাসও এক দিন নীল হয়ে যায় আর
মিনারে মিনারে উড়তে থাকে রঙের ফানুস।
আমিনুল ইসলাম সেলিম
হাঁটা
আমরা হাঁটছি- এক অন্ধতা থেকে অন্য অন্ধতায়
হেঁটে যাচ্ছি এক গুহামুখ থেকে অন্য গুহামুখে
নদীর গহিন স্রোতে- ঘোলাজলে- সমুদ্রসন্ধ্যায়
আমরা পেরিয়ে যাই জলাখেত
লাল মাটি- পাহাড়িয়া পথ
পেরোই অন্ধকার- বন থেকে বন
এক পথ থেকে যাই অন্য কোনো পথে
এক আল ভেঙে যাই অন্য আল ধরে
আমরা জেনেছি-
মানুষের হাঁটা ফুরোলেই নামে গতিস্থির দৃশ্যছায়া
জীবনের অবরোহকাল
হেঁটে হেঁটে বহুদূর এসে দেখি-
পুরাতন খরমের মতো, প্রাক-ইতিহাসজুড়ে
আমরা এসেছি ফেলে জীবনের ভীষণ জরুরি দুটো পা।
দরদি
অবশেষে আমাকে সে বিক্রি করে দিয়ে গেল
সমুদ্রের কাছে
কেননা সে জানে-
সমুদ্র ছাড়া এত দুঃখ আমি লুকোবো কোথায়!
শারমিন সুলতানা রীনা
মানুষ
প্রতিমা বানাতে চাও নিথর শরীরে
অর্চনা চাই না তুমি মানুষ বানাও
শীতের পাখির ভাষা নীরবে বুঝেছি
জীবনের চেয়ে তো বড় আর কিছু না
ধূসর জীবন বলো কে চায় আবার
চরণে দিও না ফুল হয়ো না পূজারি
মানুষ মানুষ খেলি মাটির মায়ায়
ফিনিক্স পাখির মন কে পারে বুঝতে
পাখির জীবন জানি কেউ না তা চায়
আমাকে মানুষ ভাবো প্রতিমা তো নয়।
খোঁজ
পাণ্ডুলিপির বাড়তি শব্দের মতো মুছে দিলে
বাল্য শিক্ষার শ্লেটে লেখা হরফ
এতটুকু অনুতাপে কাঁপেনি হাত
এলোমেলো ক্ষতচিহ্নে
রক্তাক্ত করলে বুক
সাদা কাফনে মাটিতে শোয়ালেও শুধু মৃত্যু নয়
নিয়ন বাতির আলো-আঁধারিতে
কত প্রাণ পড়ে থাকে নিঃসার দেহে
কে রাখে তার খোঁজ।
কাউসার মাহমুদ
মতিভ্রম
আবারও বৃষ্টি এলো
চারপাশ অন্ধকার করে-
মসৃণ আলোটি ফুরোল
তখন সবুজ ভেবে সামনে তাকালে
দেখি শূন্য মরুভূমি
ভাবি বাংলায় আজ তো দোসরা অঘ্রাণ
এই বিষণ্ণ বাদলায়-
পৃথিবীর কোনো এক খানে
পড়ে আছে বেদনার সকল নিরীহ ছবি।
বৃক্ষ
একটি বৃক্ষের কাছে গিয়ে দাঁড়ালে মনে হয়-
এখনো জীবনের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ আছে
এখনো বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে
এর শাখা-প্রশাখায় যত ইতিহাস ছড়িয়ে আছে
কাণ্ডের প্রবল অস্তিত্বের মাঝে
পাতাদের বিচিত্র রঙের মতো তাতে মিশে গিয়েছি
কখনো হাওয়ায়, কখনো ঝড়ে
যেকোনোভাবেই ঝরে গিয়েছি ঠিক
তবু, কেবল একটিমাত্র জলবিন্দুর স্পর্শে
সমস্ত শৈবাল ঝেড়েমোছে
পুনর্বার শিশু গাছের মতো মাটি ফুঁড়ে তাকিয়েছি।
"