দেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান যে অবস্থা, সেটা পতন নয়, বরং এটাই বাজারের আচরণ। তাই এটাকে স্বাভাবিক বলে মনে করেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। তবে আগামীতে এটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনের সমস্যা নিরসনে গতকাল সোমবার অংশীজনদের সঙ্গে আয়োজিত বৈঠক শেষে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, সূচক ও লেনদেনের বর্তমান যে অবস্থা, সে পরিস্থিতিতে এটাকে ঠিক পতন বলা যাবে না। আমাদের বুঝতে হবে ওঠানামাটাই হলো পুঁজিবাজারের কাজ। আমরা গত কয়েকদিনে দেখেছি মূল সূচকটি নেগেটিভ মুভ করেছিল, তবে আজ (সোমবার) আবার পজিটিভ মুভ করেছে। ওঠানামার মধ্য দিয়েই পুঁজিবাজার এগিয়ে চলে। আমরা মনে করি, এগুলো স্বাভাবিক। এর আগে দেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের অংশীজন এবং ব্রোকাররা বাজারের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বাজার সংশ্লিষ্টদের মতামত গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করে থাকে এবং পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টদের মতামত ও পরামর্শের মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করাই বিএসইসির লক্ষ্য। পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণে আজকের সভায় বাজার সংশ্লিষ্টদের মতামত ও পরামর্শ আমলে নিয়ে কাজ করবে বিএসইসি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও আর্থিক অবস্থান যেমন উন্নতি হচ্ছে এবং দেশের পুঁজিবাজারও দ্রুতই প্রাণবন্ত ও বলিষ্ঠ রূপে ফিরবে বলে আশা করা যায়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুতই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ও পুঁজির সুরক্ষা নিশ্চিত করে দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন তরান্বিত করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সভায় আগত সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।

সভায় বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং বিএসইসির নিবন্ধনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর (স্টক ডিলার, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদি) বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানান। এছাড়া ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে ব্যাংকগুলোর হেড অব ট্রেজারিদের সঙ্গে একটি সভা অনুষ্ঠানের বিষয়ে মতামত দেন তিনি।

সভায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশগ্রহণ করে মতামত দেন। উপস্থিত ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রতিনিধিরা দেশের বাজারকে আরো ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে নিজেদের সর্বাত্মক চেষ্টা ও সহযোগিতা থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিসহ দেশের পুঁজিবাজারে সংকট ও সংকট উত্তরনের উপায় এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। বাজারের তারল্য সমস্যা, অর্থনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথাও তুলে ধরেন তারা। এসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে বিএসইসি ও ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধিরা সমন্বিতভবে কাজ করার বিষয়ে একমত হন।

অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টসহ পুঁজিবাজারের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

"