reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১০ মার্চ, ২০২৪

হানিফ ওয়াহিদের হাসির গল্প

ম্যাচিং

ফোরকান সাহেবের একটা গল্পের বই বের হয়েছে। তিনি তো মহাখুশি।

যাক, এখন থেকে তিনি নিজেকে লেখক হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন। বন্ধুপরিচিত মহলে তার নাম ফাটবে।

নাচতে নাচতে বউ নাতাশাকে খুশির সংবাদটা সবার আগে দিলেন। তারপর বললেন, দেখো বউ, বইমেলায় এই বই সাড়া ফেলে দেবে।

নাতাশা তাচ্ছিল্য করে বলল, তুমি বলতে চাও, সাড়াজাগানো বই তুমি লিখে ফেলেছো?

অবশ্যই। কেন, তোমার সন্দেহ আছে?

অবশ্যই। এখন সবাই সাড়াজাগানো বই লিখে, কাউকেই ন্যাতানো বই তো লিখতে দেখলাম না। আফসোস!

বইমেলার আগের দিন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বাসায় চা চক্রে দাওয়াত দিলেন। উদ্দেশ্য, শুভ সংবাদটা বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করা।

চায়ের সঙ্গে টা খাওয়ার পর কিছুক্ষণ চলল আড্ডা, এরপরই তিনি দিলেন খুশির খবর, তিনি হাসি হাসি মুখে বললেন, দোস্তরা তোমরা শুনলে খুশি হইবা, এই বইমেলায় আমার একটা বই বের হয়েছে।

কেউ কেউ খুশি হলো, কেউ কেউ বলল, ও আচ্ছা, তুই আবার বইও লিখতে পারিস?

কারো মধ্যে বই কেনার আগ্রহ দেখা গেল না।

বন্ধু সিহাব বলল, আজকাল বই লেখার এত ফালতু সময় পাস কীভাবে? এই স্মার্টফোনের যুগে কেউ বই কিনে পড়ে? আমার তো বই দেখলেই বিরক্ত লাগে।

লিটন বলল, বই দেখলেই আমার ঘুম পায়। মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা কীভাবে বই নিয়ে পড়ে থাকে ভাবলেই আমার জ্বর আসে।

ফোরকান সাহেব হাসি হাসি মুখে বন্ধু নাসিরকে বললেন, দোস্ত, তুই তো একসময় বই পড়তি। তুই নিশ্চয়...

ফোরকান সাহেব কথা শেষ করার আগেই নাসির বলল, দোস্ত, বই পড়া ছেড়ে দিছি বহু আগে। বন্ধু হিসেবে আমাকে বিষ কিনে খেতে বল খাবো, বই কিনে পড়তে বলিস না। হাতে এত সময় কই?

ফোরকান সাহেব আর কথা বাড়াতে সাহস করলেন না। বন্ধুরা তাস খেলে এবং আরেকবার চা চক্র শেষ করে যে যার মতো চলে গেল। যাওয়ার আগে অবশ্য দু-একজন বলে গেল সৌজন্য সংখ্যা পাঠিয়ে দিতে। বন্ধুর বই তারা পড়ে দেখতে চায়।

তিনি হতাশ হয়ে বসে রইলেন। এই বন্ধুদের তিনি কত আপন ভেবেছেন!

ফোরকান সাহেব হাসিখুশি মানুষ, বেশিক্ষণ মনখারাপ করে বসে থাকার মানুষ তিনি নন। মন খারাপ ভাব দূরে ঠেলে দিয়ে তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় অনেককেই ফোন করে খুশির খবরটা দিলেন। অনেকেই খুশি হলো, তবে কেউ বই কেনার আগ্রহ দেখাল না।

কেউ কেউ অবশ্য ফ্রি সৌজন্য সংখ্যা চেয়ে বসল। তার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল। তিনি মন খারাপ করে বললেন, পাঠিয়ে দেব।

বইমেলা শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই তিনি প্রকাশককে ফোন করে খবর নেন, দু-এক কপি বিক্রি হয়েছে কি না।

খবর শুনে তিনি হতাশ হন।

এক শুক্রবার তিনি বইমেলায় তার স্টলের সামনে কাঁচুমাচু মুখে গিয়ে দাঁড়ান। মেলায় প্রচুর মানুষ কিন্তু বই কিনছে হাতে গোনা দু-একজন। বেশির ভাগ মানুষ এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ তার বইটা হাতে নেড়েচেড়ে দেখে চলে যাচ্ছে। কেউ তার বইটা হাতে নিলেই তার বুকটা ধরাস ধরাস করে উঠছে।

বই বিক্রি না হওয়ার কারণে প্রকাশক একবার ‘কেমন আছেন’ বলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তিনি নীরবে চলে এলেন।

পরের দিন বউ নাতাশাকে ডেকে বললেন, আমার বই তো আত্মীয় প্রতিবেশী কেউ কেনে না, তুমি অন্তত একটা বই কিনে ইজ্জত রক্ষা করো। তাহলে আমি গর্ব করে বলতে পারব, আমার অন্তত একটা বই বিক্রি হয়েছে।

স্বামীর মুখ দেখে নাতাশার মায়া হলো। আহা বেচারা!

সঙ্গে সঙ্গে সে বইমেলায় যাওয়ার জন্য রেডি হতে শুরু করল। ফোরকান সাহেব ভাবলেন, বই হাতে বউয়ের একটা ফাটাফাটি ছবি পোস্ট করবেন। পাবলিক ভালো খাবে। ক্যাপশনে লিখবেন, ‘এই মাত্র একজন সুন্দরী পাঠিকা আমার বইটা কিনলেন। তিনি জানিয়েছেন, শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও শুধু আমার বইটা কেনার জন্য তিনি মেলায় ছুটে এসেছেন।’

পাবলিক তো জানবে না, এটা তার বউ।

ক্যাপশন লিখে রেডি করে একঘণ্টা পর এসে দেখেন নাতাশার সাজকর্ম চলছেই। তিনি বিরক্ত গলায় বললেন, দুইশো টাকার বই কিনতে যাবে, এক হাজার টাকার তো মেকআপই খরচ করে ফেললে!

এরও আধঘণ্টা পর সবচেয়ে দামি শাড়িটা পরে রেডি হয়ে এসে নাতাশা বলল, তোমার মোবাইলটা দেখি। ফোরকান সাহেব মোবাইল এগিয়ে দিতেই সে গ্যালারিতে গিয়ে বইয়ের প্রচ্ছদ বের করল, তারপর হতাশার সুরে বলল, এই তোমার সাড়াজাগানো বই? ফালতু!

ফোরকান সাহেব ভয়ে ভয়ে বললেন, আবার কী হলো?

তোমার বইয়ের প্রচ্ছদ তো আমার শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে নাই। আমি তন্নতন্ন করে খুঁজেও একটা শাড়ি পেলাম না, যা তোমার বইয়ের সঙ্গে ম্যাচ করে। এ রকম ফালতু বই তো আমি কিনতে যাব না। আমার একটা ইজ্জত আছে না! আমি বইমেলায় যাব আজেবাজে বই কিনতে? কাভি নেহি!

ফোরকান সাহেব দাঁড়িয়ে ছিলেন। বউয়ের কথা শুনে ঠাস করে সোফার ওপর এলিয়ে পড়লেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close