reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

আবুল কালাম আজাদের হাসির গল্প

আগে ভাইরাল পরে লেখালেখি

কয়েকজন যুবক গোল হয়ে বসেছিল বইমেলা চত্বরের ঘাসের গালিচায়। বসে বসে তারা গল্প করছিল। তাদের সামনে ছিল প্যাকেট ভরে বাদাম। গল্প করতে করতে সবাই বাদাম খাচ্ছিল।

এক সাংবাদিক গিয়ে হাজির সেই যুবকদের কাছে। সাংবাদিক বলল- আপনারা কি বন্ধু?

যুবকদের যেন কথা বলার আগ্রহ নেই। একজন অনেক কষ্টে বলল- জি।

- আমি আপনাদের সঙ্গে একটু আলাপ করতে চাই। সমস্যা আছে কোনো?

অপার সমস্যা চেপে গিয়ে যুবকটা বলল- না, সমস্যা নেই।

- আপনার জীবনের স্বপ্ন কী?

যুবকটা নিচের দিকে তাকিয়ে ঘাসের ডগায় হাত বুলাচ্ছিল। মাথা তুলে বলল- আমার জীবনে কোনো স্বপ্ন নেই।

- বলেন কি! স্বপ্ন নেই! স্বপ্ন ছাড়া মানুষ হয়?

- হয়। এই যে আমি।

- স্বপ্ন ছাড়া মানুষ আর হালবিহীন নৌকা সমান কথা।

- আমি হালবিহীন নৌকা। আমি কোনো ঘাট খুঁজে পাব না। আমি অঘাটে ভিড়ব। আপনার তাতে কোনো সমস্যা আছে?

- আমার সমস্যা নেই। তবে মানুষ হিসেবে স্বপ্ন থাকা উচিত।

- আমি উচিত কাজ করব না। অনুচিত নিয়ে থাকব। আপনার কোনো সমস্যা আছে?

সাংবাদিক বুঝল যুবকটা রেগে যাচ্ছে। সে আরেক যুবকের কাছে গেল- আচ্ছা ভাই, আপনি কেমন উদাস দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছেন। আপনার স্বপ্ন কী?

- আমার স্বপ্ন লেখক হওয়া।

- উপযুক্ত একজন পেলাম। বইমেলায় কবি হওয়ার, লেখক হওয়ার স্বপ্নবাজ মানুষ না পেলে ভালো লাগে না। তা বই কিনেছেন?

- গত বছর একটা কিনেছিলাম।

- গত বছর! বুঝলাম না ঠিক।

- বইটা খুব মোটা ছিল। পড়তে গেলেই ঘুম চলে আসে। এক পৃষ্ঠা পড়তে না পড়তেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যেতাম। এভাবে বিশ/পঁচিশ পৃষ্ঠা পড়ার পর আগের সবকিছু ভুলে যেতাম। আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হতো। এই এক বছরে বইটা পড়ে শেষ করতে পারিনি। তাই এবার কোনো বই কিনছি না।

- তা লিখছেন তো।

- না, লেখা এখনো শুরু করিনি।

- বলেন কি! লেখক হবেন অথচ...। রবীন্দ্রনাথ তো আট বছর বয়সে কবিতা লিখেছিলেন। নজরুলও ছোট বয়সেই...।

- এখন সেই যুগ নেই। তখন লেখালেখি করে বিখ্যাত হতে হতো। আর এখন বিখ্যাত হয়ে তারপর লিখতে হবে। বিখ্যাত না হয়ে লিখলে কোনো প্রকাশক দুই পয়সা দাম দেবে না, কোনো পাঠক চেয়েও দেখবে না।

- আপনি যেটাকে বলছেন সেটা বিখ্যাত না, সেটা ভাইরাল।

- জি, ঠিক তাই। ভাইরাল না হয়ে বর্তমানে লেখালেখিতে আসার কোনো মানে হয় না।

- তা কীভাবে ভাইরাল হবেন তা নিয়ে কি কিছু ভাবছেন?

- সে ব্যাপারে ভাবছি, অবিরত ভাবছি।

- আসলে এ রকম প্ল্যান করে ভাইরাল হওয়া যায় না। কে কখন কীভাবে ভাইরাল হবে তা কেউ বলতে পারে না।

- আমার বিশ্বাস টুডে অর টুমরো আমি ভাইরাল হবই। তখন আমি লেখালেখি শুরু করব। আমার বই বেস্ট সেলার হবে।

ঠিক তখনই এক দল লোক পাগলের মতো তাদের দিকে ছুটে আসতে লাগল। তাদের সামনে একজন শুধু হাত উচিয়ে বলছে- আইলরে আইলো! আইলরে আইলো!

সেই যুবকরাও তাদের মতো দৌড়। কিন্তু ঝামেলা করে ফেলল সেই ভাইরাল আকাঙ্ক্ষি যুবক। যুবকটা দৌড় দিতে গিয়ে এক ইটের টুকরায় উষ্ঠা খেয়ে হুমরি খেয়ে পড়ল। পড়বি তো পর মালির ঘাড়ে। সে গিয়ে পড়ল ইয়া মোটা আনুমানিক সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার এক নারীর ঘাড়ে। নারী হাতে ছিল এক ঠোঙা ঝালমুড়ি আর দুইটা আইসক্রিম। তা ছিটকে পড়ে গেল। আর নারীটি খপ করে ধরে ফেলল যুবকটির জামার কলার। ধরে একেবারে শূন্যে তুলে ফেলল। যুবকটা এমনভাবে ঝুলে রইল যেন ফাঁসির দড়িতে ঝুলে আছে। সে কোনোমতে বলল- আমি উষ্ঠা খেয়ে পড়ে গেছি।

অগ্নিমূর্তি নারী বলল- উষ্ঠা খেয়ে আমার ঘাড়ে পড়বি? চোখে দেখোস না? আমি কি তোর মতো পাঁচ ফুটের ইঁন্দুর? আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।

‘আইলোরে আইলো’ শুনে যারা ছুটছিল দিগবিদিক তারা সবাই ফিরে এলো এখানে। মুহূর্তে বিশাল এক মানববৃত্ত তৈরি হয়ে গেল। সেই বৃত্তের ভেতর দশাসই এক নারীর হাতের মুঠোয় ঝুলে আছে এক যুবক। দেখার মতো দৃশ্য। এ রকম দৃশ্য অতীতে কেউ কখনো দেখেনি। সচল হয়ে উঠল সবার হাতে মোবাইল ক্যামেরা। ভিডিও করছে, স্থিরচিত্র নিচ্ছে। এসে গেল আরো অনেক মিডিয়ার লোক।

ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেল এক লোক। সে গিয়ে নারীকে অনুরোধ করল- তাকে ছেড়ে দিন। দোষটা আমাদের। আমাদের এক বন্ধুর মাথায় কিঞ্চিৎ সমস্যা আছে। এমনিতে সব ভালো। লোকজনের ভেতরে গেলে আচানক চিৎকার শুরু করে দেয় ‘আইলোরে আইলো।’ সেই চিৎকারে লোকজন ভয় পেয়ে প্রাণপনে দৌড়াতে থাকে। কেউ কেউ উষ্ঠা খেয়ে পড়ে যেতেই পারে। তাকে ছেড়ে দিন প্লিজ। নারীটি যুবককে ছেড়ে দিল। যুবকটা ধপ করে নিচে পড়ে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে লাগল। নারীটি মুখ বাঁকিয়ে বলল- হুঁ! কত জাতের পাগল যে এই দুনিয়ায় আছে।

ভিড় কমে গেলে সেই যুবকের কাছে এলো সেই সাংবাদিক। বলল- আপনার আশা পূর্ণ হয়েছে। আপনি ভাইরাল হয়ে গেছেন। এতক্ষণে অন্তর্জাল সয়লাব হয়ে গেছে আপনার ছবিতে। আপনি ঝুলে আছেন দশাসই এক নারীর হাতের মুঠোয়। দেখার মতো দৃশ্য। এ রকম দৃশ্য দেখার কপাল এক জীবনে সবার হয় না। আপনি এবার একটা বই লিখে ছেড়ে দিন। ভাইরাল না হলে লেখালেখি করে এই সময়ে কোনো লাভ নেই। আর ভাইরাল নিয়ে লজ্জা করলে হবে না। লজ্জা থাকলে ভাইরাল হওয়া যাবে না। ভাইরাল মানেই অস্বাভাবিক কিছু।

যুবকটা কেঁদে দিয়ে বলল- আমি যে এভাবে ভাইরাল হতে চাইনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close