reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

জোবায়ের রাজুর হাসির গল্প

বৃথা অপেক্ষা

এই যে এত হাড় কাঁপানো শীত, বাজারে লোকসমাগম আগের মতো চোখে পড়ে না। আর তাতেই যেন রনির মেডিসিন ব্যবসায় লাল বাত্তি জ্বলে উঠল। কাস্টমারদের আনাগোনা নেই। মন খারাপ রনির।

মেডিসিন ব্যবসায়ী হিসেবে যে প্রত্যাশা নিয়ে দোকান খুলেছে রনি, সেই আশানুরূপ জায়গায় পৌঁছাতে যারপরনাই ব্যর্থ সে। দুই নম্বর ওষুধ বেচার বদনামে তার দোকানের সঙ্গে ক্রেতাদের দূরত্ব বাড়ে। বেশি লাভের আশায় আজেবাজে কোম্পানি থেকে কমদামে ওষুধ কিনে বেশি দামে সেল করার কৌশলটি এখন সবাই ধরতে পেরেছে। ফলে সচেতন ক্রেতা ভুলেও তার ফার্মেসির আশপাশেই আসে না। তবে একশ্রেণির ক্রেতা ঠিকই রনির দোকানের নিয়মিত কাস্টমার, যারা গ্রামের কম শিক্ষিত হাবাগোবা টাইপের বৃদ্ধ। কিন্তু এবারের কঠিন শীতে তারাও যেন বাজারে আসার মহাসড়কের সঙ্গে আড়ি পেতেছে। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে রনিকে আধা কেজি কাঁচকি মাছ কেনার পয়সা জোগাড় করতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা দোকানের শক্ত চেয়ারে বসে থেকে কোমরের বাতের ব্যথাকে স্বাগত জানাতে হয় এবং মোবাইলে এমবি ভরার টাকাটাও নেই বলে আজ চার দিন ধরে ইন্টারনেটে ঢুকতে পারছে না।

২.

শীতের প্রাদুর্ভাবে রাত আটটার পরে বাজারের সব দোকান বন্ধ হয়ে যায়। শীতের উপস্থিতি এতটাই তীব্র যে রাত আটটার পর সবাই দোকানপাট বন্ধ করে বাড়ি ফিরে যায়। রনিও দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নিতেই ফোনটা বেজে ওঠে। জামালের কল এসেছে। জামাল রনির নিয়মিত কাস্টমার।

- ভাইজান, দোকান খোলা?

- খোলা। বন্ধ করে দেব।

- একটু বসবেন? জলদি আসছি। আজ বাড় খালা এসেছেন। উনার পুরো এক মাসের ওষুধ লাগবে।

পুরো এক মাসের ওষুধ লাগবে জেনে তৃপ্তির ঢেকুর গিলল রনি। যাক বাবা, এই অবেলায় বড় লেভেলের একটা কাস্টমার পাওয়া গেছে। নিশ্চয়ই অনেক টাকা আয় করা যাবে।

- কতক্ষণ লাগবে আপনার আসতে?

- হেঁটে রওনা দিয়েছি ভাইজান। শীতের রাত। কোনো রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। ঘণ্টাখানেক তো লাগবেই।

- এতক্ষণ?

- একটু বসতেন যদি ভাইজান।

- ঠিক আছে। আসুন।

লাইন কেটে দেওয়ার পর রনি মনে মনে ভাবে এতবড় কাস্টমারের জন্য এক ঘণ্টা কেন, দুই ঘণ্টা বসে থাকতেও রাজি।

তারপর অপেক্ষা। সময় যত গড়াচ্ছে, শীতের মাত্রা যেন ততই বাড়ছে। শুধু শরীর নয়, এবার থুতনিও কাঁপছে রনির। তবুও সে জামালের অপেক্ষায় থাকবে। এত বড় কাস্টমার বলে কথা। রনি কল দেয় জামালকে।

- ভাইজান, এই তো আর কিছুক্ষণের মধ্যে হাজির হয়ে যাব।

- সমস্যা নেই। আসুন। আচ্ছা কী কী ওষুধ লাগবে, বলুন তো। আমি রেডি করে রাখি।

- ইয়ে মানে...! আমি অশিক্ষিত মানুষ, আমি কি আর ওষুধের নাম পড়তে পারব? মোবাইলে সবগুলো ওষুধের ছবি তুলে এনেছি। ইমোতে পাঠিয়ে দেব আপনাকে? ইন্টারনেট চালু করেন।

- আমার এমবি নেই।

- তাহলে বসে থাকেন। এত বড় দোকানদারের মোবাইলে এমবি নেই, এটা কেউ বিশ্বাস করবে না কখনো।

দেড় ঘণ্টা পর জামালের আগমন ঘটে। বেচারা শীতের জন্য পুরাই ডিফফ্রিজ হয়ে গেছে। কিন্তু বড় খালার ওষুধগুলোর ছবি মোবাইলে দেখে বেকুব হয়ে গেল রনি। তার এতক্ষণের সব অপেক্ষাই যেন বৃথা। কারণ ওষুধের যে ছবিগুলো দেখা যাচ্ছে মোবাইলে, সবগুলো হোমিওপ্যাথিক, যা এলোপ্যাথিক দোকানে পাওয়া যাবে না। সে কথা জেনে জামাল বলল, ‘এগুলো হোমিও? আহারে, আজ অশিক্ষিত বলে জানতে পারিনি। শীতে বসিয়ে রেখেছি আপনাকে। মনে কষ্ট নিয়েন না ভাইজান।’

জামাল চলে যাচ্ছে। রনি মনে মনে বলে, ‘শালা, তুই শুধু অশিক্ষিত না, গাধাও। এ মুহূর্তে আমাকেও গাধা বানিয়ে ফেলেছিস।’

রাগে-ক্ষোভে রনি শীতে কাঁপতে কাঁপতে দোকান বন্ধ করার জন্য ফাইনালি রেডি হতে থাকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close