reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

সুকুমার রায়ের হাসির গল্প

রাগের ওষুধ

কেদারবাবু বড় বদরাগী লোক। যখন রেগে বসেন, কাণ্ডাকাণ্ড জ্ঞান থাকে না। এক দিন তিনি মুখখানা বিষণ্ণ করে বসে আছেন, এমন সময় মাস্টারবাবু এসে বললেন, ‘কি হে কেদারকেষ্ট, মুখখানা হাঁড়ি কেন?’

কেদারবাবু বললেন, ‘আর মশাই, বলবেন না। আমার সেই রুপো বাঁধানো হুঁকোটা ভেঙে সাত টুকরো হয়ে গেল মুখ হাঁড়ির মতো হবে না তো কি বদনার মতো হবে?’

মাস্টারমশাই বললেন, ‘বলো কি হে? এ তো কাচের বাসন নয় কি মাটির পুতুল নয়, অমনি খামখা ভেঙে গেল, এর মানে কী?’

কেদারবাবু বললেন, ‘খামখা ভাঙতে যাবে কেন, কথাটা শুনুন না। হলো কী, কাল রাতে আমার ভালো ঘুম হয়নি। সকালবেলা উঠেছি, মুখণ্ডহাত ধুয়ে তামাক খেতে বসব, এমন সময় কলকেটা কাত হয়ে আমার ফরাসের ওপর টিকের আগুন পড়ে গেল। আমি তাড়াতাড়ি যেই আগুনটা সরাতে গেছি অমনি কি না আঙুলে ছ্যাঁক করে ফোস্কা পড়ে গেল।

আচ্ছা, আপনিই বলুন মাস্টারমশাই এতে কার না রাগ হয়? আরে, আমার হুঁকো, আমার কলকে, আমার আগুন, আমার ফরাস, আবার আমার ওপরেই জুলুম! তাই আমি রাগ করে বেশি কিছু নয়, ওই মুগুরখানা দিয়ে পাঁচণ্ডদশ ঘা মারতেই কি না হতভাগা হুঁকোটা ভেঙে খান খান!’

মাস্টারমশাই বললেন, ‘তা যাই বলো বাপু, এ রাগ বড় চণ্ডাল। রাগের মাথায় এমন কাণ্ড করে বসো, রাগটা একটু কমাও।’ কেদারবাবু বললেন, ‘কমাও তো বললেন রাগ যে মুখের কথায় বাগ মানবে এ রাগ আমার তেমন নয়।’

মাস্টারমশাই বললেন, ‘দেখো, আমি এক উপায় বলি। শুনেছি, খুব ধীরে ধীরে এক-দু-তিন করে দশ গুনলে রাগটা নাকি শান্ত হয়ে আসে। কিন্তু তোমার যেমন রাগ, তাতে দশ-বারোতে কুলোবে না তুমি একেবারে একশো পর্যন্ত গুনে দেখো।’

তারপর এক দিন কেদারবাবু স্কুলের সামনে দিয়ে যাচ্ছেন। তখন ছুটির সময়, ছেলেরা খেলা করছে। হঠাৎ একটা মার্বেল ছুটে এসে কেদারবাবুর পায়ের হাড়ে ঠাঁই করে লাগল। আর যায় কোথায়! কেদারবাবু ছাতের সমান এক লাফ দিয়ে লাঠি উঁচিয়ে দাঁড়িয়েছেন। ছেলের দল যে যেখানে পারে একেবারে সটান চম্পট। তখন কেদারবাবুর মনে হলো মাস্টারবাবুর কথাটা একবার পরীক্ষা করে দেখি। তিনি আরম্ভ করলেন, এক-দু-তিন-চার-পাঁচণ্ড

স্কুলের মাঝখানে একজন লোক দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে অঙ্ক বলছে, তাই দেখে স্কুলের দারোয়ান ব্যস্ত হয়ে কয়েকজন লোক ডেকে আনল। একজন বলল, ‘কী হয়েছে মশাই?’ কেদারবাবু বললেন, ‘ষোলো-সতেরো-আঠারো-উনিশ-কুড়ি-’

সবাই বলতে লাগল, ‘এ কী? লোকটা পাগল হলো নাকি? আরে, ও মশাই, বলি অমনধারা কচ্ছেন কেন?’ কেদারবাবু মনে মনে ভয়ানক চটলেও তিনি গুনেই চলেছেন, ‘ত্রিশ-একত্রিশ-বত্রিশ-তেত্রিশ-’ আবার খানিক বাদে আর একজন জিজ্ঞাসা করল, ‘মশাই, আপনার কি অসুখ করেছে? কবিরাজ মশাইকে ডাকতে হবে?’

কেদারবাবু রেগে আগুন হয়ে বললেন, ‘উনষাট-ষাট-একষট্টি-বাষট্টি-তেষট্টি-’ দেখতে দেখতে লোকের ভিড় জমে গেল, চারদিকে গোলমাল, হই চই। তাই শুনে মাস্টারবাবু দেখতে এলেন, ব্যাপারখানা কি!

ততক্ষণে কেদারবাবুর গোনা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তিনি দুই চোখ লাল করে লাঠি ঘোরাচ্ছেন আর বলছেন, ‘ছিয়ানব্বই-সাতানব্বই-আটানব্বই-নিরানব্বই-একশো কোনো হতভাগা লক্ষ্মীছাড়া মিথ্যাবাদী বলেছিল একশো গুনলে রাগ থামে?’ বলেই ডানে-বাঁয়ে দুমদাম লাঠির ঘা।

লোকজন ছুটে পালাতে লাগল। এদিকে মাস্টারমশাই এক দৌড়ে সে যে ঘরের মধ্যে ঢুকলেন, আর সারা দিন বেরোলেন না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close