reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৬ নভেম্বর, ২০২৩

তারাপদ রায়ের হাসির গল্প

স্ত্রী রত্ন

মহাকবি গ্যেটে বলেছিলেন, মানুষ যে স্বর্গলোক থেকে নির্বাসিত হয়েছে সেই নির্বাসনে ক্ষতিপূরণ হলো তার সহধর্মিণী।

মহাকবি কালিদাস গৃহিণী, সখী ও সচিবের কথা বলেছিলেন, আদর্শ সহধর্মিণী হলো একাধারে এই তিনটি।

সংস্কৃত শাস্ত্রে ও সাহিত্যে স্ত্রী রত্ন বিষয়ে ভূরি ভূরি কথা বলা আছে। সেখানে বলা আছে স্ত্রী রত্ন খারাপ বংশ থেকেও সংগ্রহ করা চলে এবং এও বলা আছে, স্ত্রীবুদ্ধি প্রলয়ঙ্করী। প্রবাদণ্ডপ্রবচনে বলা আছে, বাড়ির বাইরের পথে বেরোনোর সময় নারীকে বর্জন করা ভালো। অর্থাৎ স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে যেয়ো।

এসব প্রাচীন প্রবচনে আমাদের অতিরিক্ত উৎসাহ দেখিয়ে লাভ নেই। বরং আধুনিক গল্পে আসি।

সম্প্রতি একটা গল্প শুনলাম। এক ভদ্র মহিলা স্বামীর সঙ্গে অনবরত ঝগড়া করতে করতে অবশেষে ক্লান্ত হয়ে স্বামীকে বলেছিলেন, ‘দ্যাখো এভাবে ঝগড়া করার কোনো মানে হয় না।’

পতিদেবতা নাকি স্ত্রীর মুখে এই কথা শুনে জানতে চেয়েছিলেন, ‘তাহলে, আর কীভাবে ঝগড়া করা যাবে?’

এই প্রশ্নের উত্তর শুনেছি পত্নীঠাকুরানি দেননি এবং এর উত্তর আমরাও দিতে পারব না। তবে বাদণ্ডবিসম্বাদণ্ডকলহ পঁচিশ বছর ধরে লাগাতার চালিয়ে গেছেন এমন একটি দম্পতিকে আমি জানি।

পঁচিশ বছরের বিবাহবার্ষিকীর দিন স্ত্রী স্বামীকে বলেছিলেন, ‘ওগো, আমাদের এই বিয়ের রজতজয়ন্তী আমরা কীভাবে উদযাপন করতে পারি।’ একটুও চিন্তা না করে স্বামী সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিয়েছিলেন, ‘পাঁচ মিনিটের জন্য নীরবতা পালন করে।’

এবার স্বামী নির্বাচনের প্রসঙ্গে আসি। আমি সেই তরুণীর কথা বহুকাল আগে লিখেছিলাম। যে বলেছিল, ‘আমার স্বামী হবে ঝকঝকে, স্মার্ট, আধুনিক, গান-বাজনা, কথাবার্তায় নিপুণ, সবজান্তা এবং বর্ণোজ্জ্বল।’ তরুণীটির এই আবদার শুনে তাকে কে যেন বলেছিল, ‘আসলে তুমি একটা রঙিন টিভি সেটের কথা বলছো। কোনো মানুষের কথা বলছো না।’

হয়তো তাই। এ বিষয়ে আরো একটা অন্যরকম জটিল গল্প শুনেছি।

দুই বান্ধবী চিড়িয়াখানায় গেছেন। তারা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন খাঁচায় জীবজন্তু দেখছেন। অবশেষে তারা পাখির খাঁচার সামনে এসেছেন। সেখানে চিড়িয়াখানার এক কর্মচারী তাদের একটা বড়সড়, ল্যাজঝোলা পাখি দেখালেন। পাখিটা গুটিসুটি মেরে খাঁচার এক প্রান্তে লুকিয়ে রয়েছে।

পাখিটাকে দেখে মহিলাদের একজন জিজ্ঞাসা করলেন, ‘পাখিটা ও রকম জড়সড় হয়ে গুটিয়ে আছে কেন?’ কর্মচারীটি বললেন, ‘এ পাখিটা খুব ভিতু স্বভাবের। সব সময়ই ভয়ে ভয়ে থাকে। তার ওপরে কানে ভালো করে শুনতে পায় না। চোখেও ভালো দেখে না। তবে এর একটা ভালো গুণ আছে। এই পাখিটাকে হাবিজাবি, ছাইভস্ম যাই দেওয়া হোক তাই খায়। কোনো আপত্তি করে না। আর বেশ হজমও করতে পারে।’

এই কথা শুনে প্রশ্নকারিণী তার সঙ্গিনীকে বললেন, ‘চমৎকার! এই পাখিটার দেখছি আদর্শ স্বামী হওয়ার পক্ষে সমস্ত গুণই রয়েছে।’

অতঃপর একটি প্রাক-পরিণয় প্রণয়কাহিনি বলা যেতে পারে।

কমলের সঙ্গে কমলার গভীর প্রেম। গলায় গলায় ভাব। বন্ধুবান্ধব সবাই সেটা জানে। হঠাৎ এক দিন কমলকে ক্লাবে দেখা গেল অত্যন্ত বিমর্ষভাবে, চিন্তান্বিত মুখে বসে রয়েছে। কমলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শ্যামল। সে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘কী ব্যাপার, এত চিন্তা কীসের?’

কমল করুণ কণ্ঠে বলল, ‘কমলা সব ঠিক করে ফেলেছে।’

শ্যামল প্রশ্ন করল, ‘কী ঠিক করে ফেলেছে?’

কমল খুব গম্ভীর হয়ে বলল, ‘কমলা বিয়ে করছে।’

শ্যামল এ কথা শুনে যথারীতি সান্ত¡না দিয়ে বলল, ‘তাতে কী হয়েছে? কমলার মতো, কমলার চেয়ে ভালো আরো কত মেয়ে আছে। এতে চিন্তার কী আছে?’

কমল বলল, ‘চিন্তার যথেষ্ট ব্যাপার আছে। কমলা আমাকেই বিয়ে করছে।’

পুনশ্চ:

অনেক গাড়িতে নাম্বার প্লেটের পাশে ‘এল’ (খ) লেখা একটা অতিরিক্ত প্লেট থাকে। এই ‘এল’ (খ)-এর মানে হলো লার্নার শিক্ষার্থী। যারা গাড়ি চড়া শেখে তারা লার্নার লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালায়।

সে যা হোক, দুটি সতেরো-আঠারো বছরের নাবালক-নাবালিকা ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের অফিসে গেছে বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে। বলা বাহুল্য, ম্যারেজ রেজিস্ট্রার মহোদয় তাদের বলেছেন, ‘তোমরা বিয়ের উপযুক্ত হওনি। প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের বিয়ে হতে পারে না।’

অনেক ভেবেচিন্তে ছেলেমেয়ে দুটি ম্যারেজ রেজিস্ট্রারকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আমরা কি আপাতত লার্নার লাইসেন্স পেতে পারি?’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close