reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৫ নভেম্বর, ২০২৩

হানিফ ওয়াহিদের হাসির গল্প

নবনী

ছেলেপক্ষ নবনীকে দেখতে এসেছে। মেহমান চলে যাওয়ার পর আয়েশা বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বললেন, নিশ্চয়ই তোর এই ছেলেটা পছন্দ হয়েছে?

নবনী বলল, এইটা তুমি কী বললা, মা? ছেলের হাইট দেখেছো? রাস্তায় হাঁটতে গেলে তো এই ছেলে আমার হাটুর নিচে পড়ে থাকবে। মানুষ ডাকবে খাট্টা পীর বলে! কোথাও বেড়াতে গেলে ওকে তো আমাকে কোলে করে রিকশায় তুলতে হবে। তোমার একমাত্র মেয়ের জামাই এমন দুই ফুটের হোক তা তুমি চাও?

আয়েশা বেগম অবাক হয়ে বললেন, কী বলছিস তুই! ছেলের হাইট পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি! এই ছেলে খাট্টা পীর হলো কেমনে?

তা হোক, এই ছেলে ক্যানসেল করে দাও। খাটো ছেলে আমার পছন্দ না।

পরের সপ্তাহে ঘটক এক লম্বা ছেলের সন্ধান নিয়ে এলো। ছেলে সদ্য ইনজিনিয়ারিং পাস করেছে। আয়েশা বেগমের ছেলে পছন্দ হলো। তিনি মেয়েকে বললেন, এই ছেলের সঙ্গেই তোর বিয়ে দেব, এবার না করতে পারবি না।

নবনী বলল, তোমার কি মাথাটা গেছে, মা! এই ছেলের হাইট দেখেছো? এই ছেলের সঙ্গে আমার যায়? বাসর রাতে তো চেয়ারের ওপর উঠে ওর গলায় আমাকে মালা পরাতে হবে। আয়েশা বেগম আর কথা বাড়ালেন না।

এর এক মাস পর ঘটক একটা অসম্ভব ভালো ছেলের সন্ধান নিয়ে এলেন। ছেলে ডাক্তার। উচ্চবংশজাত ছেলে। আয়েশা বেগম আল্লাহকে ডাকতে লাগলেন। মেয়ের যেন এই ছেলেকে পছন্দ হয়।

নবনী বলল, দুর মা, এই ছেলের চোখ দুটো দেখেছো? বিড়ালের মতো চোখ। দেখলেই ভয় লাগে। তুমি শেষমেশ একটা বিড়ালের সঙ্গে আমার বিয়ে দেবা?

আয়েশা বেগম মেয়ের বিয়ের আশা ছেড়ে দিলেন। বাপের আদরের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তিনি কী যে যন্ত্রণায় আছেন তা একমাত্র আল্লাহ মাবুদ জানে।

নবনীও হাফ ছেড়ে বাঁচল।

রাহাত এবার ভার্সিটির ফাইনাল ইয়ারে। লেখাপড়ায় অসম্ভব মেধাবী, কিন্তু নবনীর কেন যেন ওকে বোকা বলে মনে হয়। তার এই চাচাতো ভাইটা লেখাপড়া ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না। ওদের বাসায় থেকেই লেখাপড়া করে, নবনী ওকে আকারে-ইঙ্গিতে অনেক কিছুই বোঝাতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে। নবনী যে এক কথায় এই গাধাটার জন্য জীবন বিসর্জন দিতে পারে, তা গাধার মাথায় ঢুকেই না। রাহাত যদি বলে নবনী, এই বোতলে বিষ আছে, আমাকে খেয়ে দেখাতে পারবে? নবনী কোনো প্রশ্ন না করেই সেই বিষ খেয়ে ফেলবে! দুঃখ একটাই মা-বাবা কখনোই এই গাধাকে মেনে নেবে না।

আজ নবনীর মনটা ভীষণ খারাপ। সে রাহাতের রুমে ঢুকল, রাহাত বইয়ে মুখ গুঁজে আছে। নবনী যে রুমে ঢুকল তার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। নবনী পাশে বসতে বসতে বলল, রাহাত ভাইয়া, একটা কথা বলি?

রাহাত বই থেকে মুখ না তুলেই বলল, কী কথা?

তোমার কখনো মন খারাপ হয় না?

রাহাত অবাক হয়ে বলল, আমার অহেতুক মন খারাপ হবে কেন? এইটা কেমনতর কথা?

জানো, আজ আমার একটা বান্ধবী তার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে পালিয়েছে।

রাহাত বলল, আচ্ছা।

তোমার কাউকে নিয়ে পালাতে ইচ্ছে করে না?

আমার এসব বাজে ইচ্ছে করবে কেন? কী বলছিস পাগলের মতো?

তোমার কখনো কাউকে ভালো লাগেনি?

লেগেছে তো।

নবনী উৎসাহ নিয়ে বলল, কাকে?

একটা ছাগলকে। জানিস, ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে বাজারে গিয়েছিলাম, একটা কালো ছাগল আমার মনে ধরল। বাবাকে বলতেই কিনে দিল। তিনটা বাচ্চাও হয়েছিল, এক দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি ছোট বাচ্চাগুলো রাতের বেলা কুকুরে খেয়ে ফেলেছে! কী যে কষ্ট পেয়েছিলাম তখন!

নবনী ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। মনে মনে বলল, ব্যাটা ছাগল!

নবনী বলল, জানো, রাহাত ভাইয়া, আমার মাঝে মাঝে মরে যেতে মন চায়। কীভাবে সহজে মরা যায়, আইডিয়া আছে তোমার?

রাহাত নির্বিকার কণ্ঠে বলল, ছাদ থেকে লাফ দে, সহজেই মামলা খতম। চলন্ত গাড়ির নিচে লাফিয়ে পড়লেও কাজ হবে।

আয়েশা বেগম মেয়েকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। মেয়ে কোনো ছেলেকেই পছন্দ করছে না। ওর কি কোনো পছন্দ আছে? তাও তো বলছে না। নবনীর বাবা, মামা, চাচারা আয়েশা বেগমকে বলেছেন মেয়ের ব্যাপারে খোঁজ নিতে। তারা অচিরেই মেয়ের বিয়ে দিতে চান।

আজ একটা ছেলের আসার কথা। ঘটক বলেছে, এই ছেলেকে নবনীর পছন্দ হবেই। রূপেগুণে অনন্য ছেলে। এ রকম ছেলে কোটিতে একটা পাওয়া যায়। আয়েশা বেগম মেয়ের রুমে ঢুকলেন। কিছুক্ষণ বসে থেকে গলা খাকারি দিতে লাগলেন।

নবনী বলল, মা কিছু বলবা?

আয়েশা বেগম বললেন, আজ একটা ছেলের আসার কথা।

নবনী বলল, আমি জানি।

তোর কি পছন্দের কেউ আছে?

আরে না! কি যে বলো!

আমি কাউকে বলব না। আমাকে সত্যি কথাটা বলো।

আমাকে আবার কোনো গাধা পছন্দ করবে? আমার পছন্দের কেউ নাই...

আয়েশা বেগম ফিসফিস করে বললেন, তুই আমাকে বান্ধবী মনে করে সবকিছু বলতে পারিস। কথা দিচ্ছি তোর বাবাকে বলব না।

নবনীও ফিসফিস করে বলল, সত্যি জানতে চাস?

আয়েশা বেগম অবাক হয়ে বললেন, তুই আমাকে তুই তোকারি করছিস কেন?

নবনী বলল, বান্ধবীকে কেউ আপনি করে বলে নাকি? আশ্চর্য!

আয়েশা বেগম রাগ করে বেরিয়ে যেতে গিয়ে দরজার সামনে থেকে ফিরে এলেন। মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন, ঠিক আছে বলো।

নবনী বলল, একবার কী হলো শোনো, তুই আমাকে গত সপ্তাহে মার্কেটে পাঠালি না রাহাত ভাইয়ার সঙ্গে? সেদিন তো ব্যাটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলছে।

আয়েশা বেগম ফিসফিস করে বললেন, কী ঘটনা?

নবনীও ফিসফিস করে বলল, ব্যাটা আমাকে একা পেয়ে রিকশার হুড লাগিয়ে দিল, তারপর জড়িয়ে ধরল...

আয়েশা বেগম চাপা চিৎকার দিয়ে বললেন, বলিস কি রে! হারামজাদা এত খারাপ!

খারাপের আর দেখেছিস কী তুই? এক দিন তো আমাকে কু প্রস্তাব দিয়ে দিল!

হায় আল্লাহ! বলিস কী! তুই কী করলি?

কী আর করা, রাজি হয়ে গেলাম!

তুই আমাকে এসব বলছিস, লজ্জা করছে না?

গাধার মতো কথা বলিস না তো! তুই আমার বান্ধবী না!

আয়েশা বেগম কোৎ করে একটা শব্দ করলেন, দরজার দিকে যেতে যেতে ঘটককে ফোন করে বললেন, ছেলেকে বল, আসার দরকার নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close