শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ১২ জুন, ২০২৪

শিবালয়ের আলোদিয়া চর

ভাঙা বিদ্যালয়গুলোর আশ্রয় ‘মুজিব কেল্লা’ বিলীনের শঙ্কা

গত এক সপ্তাহে দুই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন * বিলীনের শঙ্কায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে দেড় হাজার ঘরবাড়ি * দিন দিন তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মানিকগঞ্জের শিবালয়ের আলোদিয়া চর মধ্যনগর এলাকায় প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা মূল্যের ‘মুজিব কেল্লা’ যমুনায় বিলীনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার আলোকদিয়া চরাঞ্চলে এ বছর বর্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যমুনা নদীর তীরে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে গত এক সপ্তাহে দুই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। ওই নদীর তীরে বসবাসকারীরা নদীতে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার শঙ্কায় প্রায় এক-দেড় হাজার ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। দিন দিন নদী ভাঙন তীব্র হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার সমেজঘর তেওতা, পাটুরিয়া ফেরিঘাট, নয়াকান্দি, শিবালয়, দক্ষিণ শিবালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।

ওই এলাকার মিজানুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীর ভাঙনের কারণে শত শত ঘরবাড়ি ও হাজারো একর ফসলি জমি নদীতে দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর এভাবে ঘরবড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেলেও যেন দেখার কেউ নেই। আলোদিয়া এলাকার ঘরবাড়ি হারা পরিবারের লোকজন রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়ে অতি কষ্টে জীবন যাপন করছেন।

নদীগর্ভে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়া ছালাম মোল্লা, নুরজাহান মোল্লা, কহিনুর শেখ, আব্দুল্লা শেখ, রশিদ মোল্লা, হামজা শেখ, আফসার শেখসহ ২৫ থেকে ৩০ জন জানান, নদীর গর্ভে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ায় উপজেলার টেপড়া এলাকায় কেউ আত্মীয় বাড়ি, আবার কেউ কেউ রাস্তায় পাশে পরিবারের লোকজন নিয়ে থাকতে হচ্ছে।

চরমধ্যনগর রুস্তোম হাওলাদার মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ন কবির জানান, প্রায় ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের তিন তলা ভবনটি ২০১৮ সালে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। আবার পরে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন করা হয়। কিন্তু সেটিও ২০২৩ সালে বিলীন হয়ে যায়। এরপর ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আলোকদিয়া চরের একটি বাজারের গাছতলায় পাঠদান করানো হয়। এ অবস্থায় কিছুদিন শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানোর পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় আলোকদিয়া একাব্বর মাতব্বরের পাড়ায় প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া মুজিব কেল্লায় শিক্ষার্থীদের পাঠ দান করা হচ্ছে। বিদ্যালয়টি পর পর দুবার বিলীন হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। ওই বিদ্যালয়ে এখন মাত্র ১৪০ জন শিক্ষার্থী আছেন। এ মুজিব কেল্লাটিও বিলীন হওয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ কেল্লা থেকে প্রায় দেড়শ গজ দূরে নদীভাঙন রয়েছে। যেভাবে নদীভাঙন শুরু হয়েছে তাতে প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যেই কেল্লাটি বিলীনের শঙ্কা করা হচ্ছে।

এর আগে, গতবছরে ২ নম্বর চরমধ্যনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও টেংগর হাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন তলা ভবন নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

তেওতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন জানান, নদীভাঙন থেকে মুজিব কেল্লাটি রক্ষা করতে হলে জিও ব্যাগ ফেলতে হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল খায়ের জানান, নদীভাঙনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলাল হোসেন বলেন, নদীর তীরবর্তী এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাইনুদ্দিন বলেন, আলোকদিয়া চরাঞ্চল পরিদর্শন করা হয়েছে। তবে চরাঞ্চলের জন্য আমাদের কোনো বাজেট নেই। আর এত বড় ভাঙন রোধ করা সম্ভব না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close