বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি

  ১১ জুন, ২০২৪

সাঁথিয়ায় অভিযোগ

কয়েক পরিবারের জন্য ৩৬ লাখ টাকার সেতুর অনুমোদন

পাবনার সাঁথিয়ায় কয়েকটি পরিবারের সুবিধার জন্য সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণে অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার পুন্ডুরিয়া গ্রামের মো. কামরুজ্জামান পারিবারিক সুবিধার জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে এ অনুমোদন নিয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে তারা।

এদিকে কাজটি বন্ধের দাবিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ (পাউবো) সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্থানীয়দের স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়েছে। আপাতত কাজটি বন্ধ রাখা হয়েছে জানান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।

জানা গেছে, কয়েক মাস আগে ৩৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ের সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেয় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। পরিপত্র জারি করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদিকে এলাকায় পাকা সড়কসহ অবকাঠামোগত নানা সংকট থাকলেও শুধু তিনটি পরিবারের জন্য সেতু নির্মাণকে সরকারি বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হিসেবে দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা গেছে, পুন্ডুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা কামরুজ্জামান আগে ঢাকা উত্তরা রাজউক কলেজের কম্পিউটার ডেমোরেস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ সময় তিনি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সন্তানদের প্রাইভেট পড়াতেন। সেই সুবাদে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ (পাউবো) কয়েকটি দপ্তরের কর্মকর্তার সঙ্গে বেশ সখ্য গড়ে ওঠে তার।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্যতার সুযোগে এলাকার স্বার্থকে তুচ্ছ করে নিজের পারিবারিক সুবিধার জন্য ৩৬ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের অনুমোদন নেন পুন্ডুরিয়া গ্রামের কামরুজ্জামান। সেতুটি নির্মাণ হলে এলাকার কৃষি জমিতে সেচ, জলাবদ্ধতা দূরকরণ ও জলপথে সহজে ফসল আনা নেওয়ার খালে নৌকা চলাচল ও পানি প্রবাহ ব্যাহত হবে। এতে প্রায় ৫০০ একর কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণস্থলে সবগুলোই ব্যক্তি মালিকানা জমি। কাজের পরিপত্র অনুযায়ী নির্মাণ কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণের সুযোগ নেই। তবুও জোরপূর্বক ব্যক্তি মালিকানা জমির ওপর সেতু নির্মাণে কামরুজ্জামান ও তার পরিবার চাপ দিচ্ছেন জমি মালিকদের।

জমির মালিক ওয়াদুত মাওলানা বলেন, এলাকার স্বার্থে নয়, ব্যক্তি স্বার্থে এক ইঞ্চি জমিও দিব না। সরকারি কাজ জনস্বার্থে হওয়া উচিত।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান মাস্টার বলেন, এলাকায় ফসল আনা নেওয়ার রাস্তাঘাট নাই। এ কাজের অনুমোদন বাতিল করে রাস্তার কাজ করার আহ্বান জানাই।

স্থানীয় আলম ব্যাপারী ও ময়নুল সহ কয়েকজন জানান, খালের ওপাশের মসজিদে মুসল্লি আসা যাওয়ার জন্য এ সেতু নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এটি ঠিক নয়। মসজিদে যাওয়ার জন্য পাশেই বিকল্প রাস্তা আছে। এ ছাড়া এর ২০০ মিটার দূরত্বে একটি সেতু রয়েছে। শুধু নিজেদের সুবিধার জন্য ওই ব্যক্তি জমির ওপর দিয়ে সেতু নির্মাণের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে মো. কামরুজ্জামান জানান, অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কাজের জন্য আবেদন করেছিলেন স্থানীয় মেম্বর চেয়ারম্যান ও সুপারিশ করেছেন ইউএনও। ওটি তিনটি নয় কয়েকটি বাড়ির মিলে একটি পাড়া। ওই পাড়াটিকে খালের এপারের সঙ্গে সংযোগ করতে কাজটির অনুমোদন হয়েছে।

এদিকে এ বিষয়ে করমজা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী বাগচী কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মুলতান হোসেন জানান, কাজটির অনুমোদন নিয়ে যে অভিযোগগুলো এসেছে সেগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। আপাতত কাজটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close