সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৩ মে, ২০২৪

সিরাজগঞ্জ

যমুনা চরের ৫ লাখ বাসিন্দার শিক্ষা-চিকিৎসায় দুর্ভোগ

প্রতি বছর প্রবল ভাঙন, ভূমিক্ষয়, বন্যা, ঝড়, আর দারিদ্র্যে জর্জরিত যমুনা চরের মানুষ * শিক্ষা ও ভালো চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত চরবাসী * যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত

সিরাজগঞ্জের যমুনা চরের পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের জীবন কাটে কষ্টে। জেলার কাজিপুর, চৌহালী, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে। প্রতি বছর যমুনার প্রবল ভাঙন, ভূমিক্ষয়, বন্যা, ঝড়, বঞ্চনা আর দারিদ্রে জর্জরিত এসব মানুষের জীবন কাটে অর্ধাহারে। বাঁচার জন্য তারা ছুটে যায় এক চর থেকে অন্য চরে। তবে আগের থেকে বর্তমানে কিছু চর এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো জানান কাজিপুর উপজেলার চেয়ারম্যান।

জানা গেছে, জেলার ৫টি উপজেলার চরগিরিশ, নিশ্চিন্তপুর, তেকানী, খাসরাজবাড়ি, মনসুরনগর, নাটুয়াপাড়া, চৌহালীর ঘোড়জান, স্থল, সাদিয়াচাঁদপুর, খাসকাউলিয়া, ওমারপুর, শাহজাদপুরের কৈজুরী, জালালপুর, রুপবাটি, সোনাতনী, পোরজনা, বেলকুচির বরধুল এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মেছড়া, কাওখোলা ও কালিয়াহরিপুর ইউনিয়নের দেড় শতাধিক চরাঞ্চলের অধিবাসী নদী ভাঙন, বন্যা, ঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে বেঁচে আছে।

সদর উপজেলার কাওয়াখোলা ইউনিয়নের জহির উদ্দিন জানান, তার ৬০ বছরের জীবনে চারবার নদী ভাঙন দিয়েছে। আজ সব হারিয়ে তাদের পরিবার পথে বসার উপক্রম হয়েছে। বাপ-দাদার প্রায় ৫০ বিঘা জমি ছিল। বাড়িতে ৪-৫ জন কামলা থাকত। কিন্তু যমুনা তাদের সব কেড়ে নিয়েছে। বর্তমানে তারা নিঃস্ব।

নাটুয়াপাড়া চরের আমিন উদ্দির, জহিন মন্ডল সহ কয়েকজন জানায়, অধিকাংশ চরেই তেমন সুযোগ-সুবিধা না থাকায় শিক্ষার হার অনেক কম। ফলে কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও চরবাসী অবহেলিত। প্রতিটি চরে চিকিৎসা কেন্দ্র না থাকায় তারা আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া চরাঞ্চলে বাল্যবিবাহের সংখ্যাও বেশি। এখানে ১২-১৪ বছরের ছেলে-মেয়েদের বিবাহের প্রবণতা বেশি হওয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীরা মাঝে মাঝে এলেও তা চাহিদার তুলনায় কম।

মেছড়া চরের রইসউদ্দিন জানান, প্রতি বছর বন্যায় জমিতে পলি পড়ায় জমিগুলো উর্বর শক্তি বেড়ে যাওয়ায় এখানে কম পরিশ্রম ও কম খরচে প্রচুর পরিমাণে মরিচ, ভুট্টা, বাদাম, তিল, তিসি, কাউন, পাট, সরিষা, ধানসহ নানা ধরনের শাক-সবজি জন্মে। যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে চরবাসী তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।

কাজিপুর উপজেলার চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী জানান, চরের মানুষের বেশি কষ্ট হয় শুষ্ক মৌসুমে। কারণ এ সময় পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পার দিতে হয়। তবে বর্ষায় পানি থাকায় তাদের তেমন দুর্ভোগ পোহাতে হয় না। প্রায়াত মন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জের কৃতি সন্তান মোহাম্মদ নসিম ও বর্তমান সাংসদ প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়ের নির্দেশনায় কাজিপুরের বিভিন্ন চরে মাটির রাস্তা, পাকা রাস্তা ও হেরিংবন রাস্তা করা হয়েছে। এ ছাড়া মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলা থেকে বিদ্যুৎ আনা হয়েছে। প্রাইমারী স্কুল, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, আগে চরে মরিচের চাষ বেশি হতো, এখন ব্যাপকভাবে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল ভালো দামে বিক্রি করতে পারছে। জেলা সদর ইউএনও মো. মনোয়ার হোসেন জানান, চর এলাকা গুলোতে এখন বিদ্যৎ আনা হয়েছে। আগের থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। শিক্ষার আলো ছড়ানো হচ্ছে, ফসল ফলাতে পারছে, নানা পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close