জহুরুল ইসলাম খোকন, সৈয়দপুর (নীলফামারী)

  ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

সৈয়দপুর বিমানবন্দর

অনুমোদন ছাড়াই বহুতল ভবন নির্মাণ, দুর্ঘটনার শঙ্কা

সৈয়দপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই রানওয়ের ৫০০ ফুট উত্তরে নির্মাণ হচ্ছে বহুতল ভবন। নুর ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ওই ভবন নির্মাণ করলেও আইনি কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছেন না এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরের ২৫ নটিকেল মাইল এলাকার মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমতি না থাকলেও শুধু পৌর কর্তৃপক্ষের নকশা অনুমোদন নেওয়ার কথা বলে নির্মাণকাজ চলছে বহুতল ভবনের। এ নিয়ে বিমান দুর্ঘটনার শঙ্কায় কর্তৃপক্ষ।

বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্ষা মৌসুমে বা আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটলে যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তায় বিপৎসীমার অনেক নিচে দিয়ে ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উড়ন্ত বিমান অবতরণ করা হয় বিমানবন্দরে। ওই সময় ঘন মেঘের কারণে বিমান পাইলট সামনের কোনো উঁচু স্থাপনা বা টাওয়ার ভালোভাবে দেখতে পান না। যার ফলে পাইলট বার বার বিমান বন্দর টাওয়ারের কাছে জানতে চান অবতরণ বিমানের সামনে কোনো বহুতল ভবন, টাওয়ার বা গাছপালা আছে কি না। থাকলে সেখানে আঘাত লেগে বিমান ক্রাশের সম্ভাবনা থাকে শতভাগ। এ কারণে শুধু বিমান ক্রাশের ভয়েই বিমানবন্দরের ২৫ নটিকেল মাইলের মধ্যে কোনো প্রকার বহুতল ভবন বা টাওয়ার স্থাপনে অনুমতি দেওয়া হয় না। বিমান ও যাত্রীদের নিরপত্তায় ওই নির্দেশনা দেওয়া না হলেও সৈয়দপুর বিমানবন্দরের উত্তর পাশেসহ কয়েক স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন।

সরেজমিন দেখা যায়, বিমানবিমানবন্দর রানওযের উত্তর পাশে ৫০০ ফুটের মধ্যে নুর ইসলাম নামের এক ব্যক্তি সিভিল অ্যাভিয়েশনের আইনকে তোয়াক্কা না করে বহুতল ভবন নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছেন। বিমান কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও পোরসভার নকশা আছে কি না- জানতে চাইলে নুর ইসলাম বলেন, কারো অনুমতির দরকার নাই। ভবনটি নির্মাণের জন্য উপর মহলের নির্দেশ রয়েছে।

জানা গেছে, সৈয়দপুর বিমানবন্দরের পূর্বপাশে সেনানিবাস, উত্তর ও পশ্চিম পাশে পৌর এলাকা এবং দক্ষিণ পাশে বাঙ্গালীপুর ইউনিয়ন। বিধি অনুযায়ী ২৫ নটিকেল মাইল এলাকা বাদ দিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য সৈয়দপুর পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। ওই চিঠির জবাবে সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আখতার হোসেন বাদল ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুসা উদ্দিন বিমানবন্দরের ২৫ নটিকেল মাইলের মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণের নকশা পাশ করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া, যদি কোনো ভবনের কারণে বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে বা সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ওইসব বহুতল ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তারা। কিন্তু তারা মারা যাওয়ার পর কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বর্তমান পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে বিমান ওঠানামায় আতঙ্কের সৃষ্টি হচ্ছে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক শুপ্লব কুমার ঘোষ জানান, বর্তমানে এ বিমানবন্দরে প্রতিদিন বাংলাদেশ বিমান ও ইউএস-বাংলার বিমান চলাচল করছে। যাত্রীসেবাও দেওয়া হচ্ছে শতভাগ। কিন্তু বিমানবন্দরের ২৫ নটিকেল মাইলের মধ্যে উঁচু ভবন থাকায় আতঙ্কে রয়েছে বিমানের পাইলটরা। তিনি বলেন, নুর ইসলাম নামের ওই ব্যক্তিকে রানওয়ে সংলগ্ন ভবন নির্মাণের কোনো প্রকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবতরণে আতঙ্কিত ভবনগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পৌর কর্তৃপক্ষ ও সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবি বলেন, নিরাপদে বিমান চলাচলের স্বার্থে রানওয়ে সংলগ্ন বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য কোনো নকশা পাস করা হয়নি। যারা রানওয়ের আশপাশ এলাকার বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন তারা একপ্রকার গায়ের জোরেই করছেন। রানওয়ের আশপাশ এলাকার সব অবৈধ বহুতল ভবন গুড়িয়ে দিতে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close