রকি উল হাসান, কুবি

  ০৩ এপ্রিল, ২০২৪

ছাত্রলীগ নেতার বাইক ‘চুরি’ আরেক নেতার

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কাজী নজরুল ইসলাম হল থেকে মোটরসাইকেল ‘চুরির’ অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলটির মালিকানা দাবি করে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আরেক নেতা।

গত রবিবার (৩১ মার্চ) প্রক্টরকে অভিযোগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক নূর উদ্দীন হোসাইন। এতে কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল মোস্তফা রিয়াদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী।

এদিকে মোটরসাইকেলের মালিকানা দাবি করলেও এর পক্ষে কোনো দাপ্তরিক প্রমাণ দেখাতে পারেননি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক নূর উদ্দীন হোসাইন। এমনকি এ প্রতিবেদককে মোটরসাইকেলে রেজিস্ট্রেশন নম্বরও তিনি জানাতে পারেননি। অন্য হলের শিক্ষার্থী হয়েও তিনি কাজী নজরুল হলে মোটরসাইকেল রেখে ঢাকা যান।

এর আগে ২৩ মার্চ কাজী নজরুল ইসলাম হল থেকে পালসার ব্রান্ডের ১৫০ সিসির কালো রঙের মোটরসাইকেলটি খোয়া যায়। নূর উদ্দীন জানান, ২০ মার্চ মোটরসাইকেল কাজী নজরুল ইসলাম হলে রেখে ঢাকা যান তিনি। ২৫ মার্চ রাতে ক্যাম্পাসে ফেরেন। ২৬ মার্চ নজরুল হলে বাইক নিতে এসে দেখেন বাইক নেই। হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চুরির তারিখ নির্ধারণ করেন। পরে প্রক্টরকে লিখিত অভিযোগ দেন নুর উদ্দীন।

নূর উদ্দীন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে আমি হলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সর্বশেষ ২৩ মার্চ রেজাউল মোস্তফা রিয়াদ আমার মোটরসাইকেল নিয়ে হল থেকে বের হচ্ছে। তার আগে সেখান থেকে বেরিয়েছে জিলান আল সাদ এহসান।’

ছাত্রলীগ নেতা নুর উদ্দিনের উল্লেখ করা সিসিটিভি ফুটেজ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম হলের গেট দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ বের হওয়ার সময় তার আগে ও পরে আরো দুজন শিক্ষার্থী বের হচ্ছেন। তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জিলান আল সাদ এহসান ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আরমান সিদ্দিকী। এদের মধ্যে আরমান সিদ্দিকী নজরুল হলের থাকলেও জিলান থাকেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে।

ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে জিলান আল সাদ এহসান বলেন, ‘নূর উদ্দিনের থেকে চাবি নিয়ে নজরুল হল থেকে বাইক নিয়ে বের হয়েছে রিয়াদ। আমি তার সঙ্গেই ছিলাম। পরে আমি কাজ করতে যাই, রিয়াদ কোটবাড়ি বাজারে যায়। এরপর রিয়াদ ফোন দিয়ে বলে বাইকটি ওখান (কোটবাড়ি বাজার) থেকে হারিয়ে গেছে।’

বাইকচুরির অভিযোগের ব্যাপারে কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল মোস্তফা রিয়াদ বলেন, ‘আমি নূর উদ্দিনের থেকে চাবি নিয়ে তার বাইক নিয়ে কোটবাড়ি বাজারে গিয়েছিলাম। বাইক নিয়ে বের হওয়ার সময় সে গেটের বাইরে ছিল। পরে কোটবাড়ি বাজারের একপাশে বাইক রেখে আমি ফল কিনে এসে দেখি তা নেই। এরপরই আমি নূর উদ্দিনকে বিষয়টা জানাই। কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতেও গিয়েছি। কিন্তু নূর উদ্দিনের বাইকের কাগজপত্র না থাকায় পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারি নাই। এখন যে অভিযোগটি করছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

রিয়াদকে চাবি দেওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে নূর উদ্দিন বলেন, ‘অসম্ভব। আমি ২০ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ঢাকায় ছিলাম, সে সময় বাইকের চাবি আমার কাছেই ছিল। আমি তাকে বাইকের চাবি দেব কীভাবে? চাবি তো এখনো আমার কাছে আছে।’ এ সময় নূর উদ্দিন তার কাছে থাকা একটি চাবির গুচ্ছ প্রতিবেদককে দেখান। বাইকটি সেকেন্ড-হ্যান্ড কেনায় তার কাছে কাগজপত্র নেই বলে দাবি করেন তিনি।

অভিযোগ পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘মোটরসাইকেল চুরির একটা অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু হলের বিষয়, তাই এটা হল প্রশাসন দেখবে। হল প্রশাসন যদি আমাদের সাহায্য চায় সেক্ষেত্রে আমরা সাহায্য করব।’

এদিকে অভিযোগ ও তদন্ত বিষয়ে জানতে কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ নাসির হোসেনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে অভিযোগদানের দিন (৩১ মার্চ) ও মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close