এম এ মাসুদ, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)

  ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ

মডেল মসজিদের কাজ বন্ধ মরিচা ধরছে লোহায়

* জমির বাজারদর ও অধিগ্রহণ দরের পার্থক্য থাকায় বন্ধ হয় মসজিদের কাজ * মসজিদের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় সোয়া ১২ কোটি টাকা * আবার দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে জানান গণপূর্ত অধিদপ্তর, গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী * ২০১৯ সালের ১১ জুন দরপত্র আহ্বান করে গাইবান্ধা গণপূর্ত অধিদপ্তর

দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা ও পৌরসভায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রকল্পের অধীনে ৫৬০টি মডেল মসজিদের মধ্যে ইতোমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে প্রায় অর্ধেক মসজিদ। কিন্তু গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পৌরসভায় ভূমি মালিকের সঙ্গে কথা না বলেই কাজ শুরু করায় থমকে গেছে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় মরিচা ধরছে পড়ে থাকা লোহায়।

জানা যায়, পৌরসভার পূর্ব বাইপাস সড়কের উত্তর পাশে পুরোনো মসজিদে দান করা সাড়ে পাঁচ শতাংশ জমির সঙ্গে আরো ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে তাতে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ২০১৯ সালের ১১ জুন যথারীতি টেন্ডারও আহ্বান করে গাইবান্ধা গণপূর্ত অধিদপ্তর। জমি অধিগ্রহণসহ মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩৯০ টাকা। কাজের দায়িত্ব পান ঢাকার মুক্তা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড অ্যান্ড কনভয় সার্ভিস নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ে কাজও শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। খোঁড়াখুঁড়ির পর কয়েকটি পিলারের ছকও দেয় তারা। কিন্তু মূল রাস্তার সঙ্গে বাড়ি ও দোকান থাকা ২৩ শতাংশ জমির মালিক খোকন ও তার ভাই এবং পশ্চিমে চা দোকানি লাল মিয়া ও ভাইয়ের বাড়ির সাড়ে ৮ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বাধে বিপত্তি। বাজারদর ও অধিগ্রহণ দরের মধ্যে পার্থক্য থাকায় বেঁকে বসেন তারা। বন্ধ হয়ে যায় কাজ।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার ধারে টাঙানো সাইনবোর্ডটি থেকে খসে পড়েছে মসজিদ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য। টিন দিয়ে ঘেরা বাউন্ডারির ভেতরে পড়ে রয়েছে মসজিদ নির্মাণে ব্যবহার হবে এমন বেশ কয়েক টন লোহা। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় মরিচা ধরেছে তাতে। মসজিদের পিলার তৈরিতে খনন করা হয়েছে দক্ষিণ দিকে। তাতে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি পিলার তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। তারপর হঠাৎ করেই স্থগিত হয়ে যায় নির্মাণকাজ। দেখা যায়, অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত জায়গার পশ্চিম পাশে এখনো রয়েছে লাল মিয়ার বাড়ি এবং উত্তর-পশ্চিম পাশে টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া খোকন ও তার ভাইদের জমি।

জমির মালিক খোকন বলেন, আমরা মালিক হওয়ার পরও না জানিয়ে খনন শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যেখানে প্রতি শতক জমির বাজার দাম কয়েক লাখ টাকা, সেখানে দাম ধরা হয়েছে মাত্র ৭৫ হাজার।

সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী আসর উদ্দিন মুন্সী বলেন, তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে জমির টাকা না দিয়েই কাজ শুরু করেছে ঠিকাদার। অনেকের টাকাই পরিশোধ হয়েছে। তবে এখনো দুই-তিনজনের টাকা বাকি আছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে দায়িত্বে থাকা গার্ড ও গণপূর্ত অধিদপ্তর, গাইবান্ধায় বিভিন্নভাবে ফোন নম্বর সংগ্রহের চেষ্টা করেও তা পাওয়া যায়নি।

গণপূর্ত অধিদপ্তর, গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রফিকুল হাসান মোবাইলে বলেন, আবার টেন্ডার করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, মডেল মসজিদের জন্য নির্ধারিত জায়গাটি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জমির ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলেও শাখা থেকে প্রদান করা হয়। যোগাযোগ করলে সংশি¬ষ্ট শাখা থেকে বিধি অনুযায়ী তারা টাকা পাবেন।

সংসদ সদস্য নাহিদ নিগার জানান, আমিও সরেজমিনে দেখেছি- মডেল মসজিদের কাজ আসলেই আটকে রয়েছে। ঢাকা গিয়ে মন্ত্রীর কাছে কাজ আটকে থাকার বিষয়টি খোলাসা করব। আশা করছি, খুব দ্রুতই কাজ শুরু হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close