আজিজুল হাকিম, মানিকগঞ্জ

  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

সুদের জন্য নির্যাতন, মামলা প্রতিবাদে রাস্তায় পরিবার

মানিকগঞ্জে সুদের টাকার জন্য দরিদ্র ও জেলেগোষ্ঠীর নারী-পুরুষদের নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মো. রবিন মিয়ার নামে একজনের বিরুদ্ধে। এমনকি ঋণের আসল পরিশোধের পরও সুদের কয়েকগুণ বেশি টাকা দাবি করা হচ্ছে। মামলা দেওয়াসহ থানা-পুলিশ দিয়ে হুমকিও দেওয়া হয়। এখন নির্যাতন ও প্রশাসনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে অনেক ঋণগ্রহীতাকে।

এর প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলা সদরের কৈতরা এলাকায় মানববন্ধন করেছে কৈতরা মাঝিপাড়ার জেলে জনগোষ্ঠী। এতে ভুক্তভোগী পরিবার ও জেলা হিন্দু মহাজোটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মানববন্ধন থেকে রবিন মিয়ার নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রশাসনের সহায়তা চান তারা।

অভিযুক্ত মো. রবিন মিয়া মানিকগঞ্জ সদরের মিতরা এলাকার বাসিন্দা। দারিদ্র্যকে পুঁজি করে এলাকায় তিনি ঋণের বিনিময়ে সুদের ব্যবসা করেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, সংসারে অভাব-অনটনের কারণে রবিন মিয়ার কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নেন মিতরা ও কৈতরা এলাকার দরিদ্র অর্ধশতাধিক হিন্দু এবং মুসলিম পরিবারের সদস্য। শর্ত অনুযায়ী প্রতিমাসে সুদের টাকাও পরিশোধ করেন তারা। পরে মূল টাকা দেওয়ার পরও সুদের কিছু টাকা বাকি ছিল কারো। এই টাকার জন্য ভুক্তভোগীদের শারীরিক নির্যাতন করেন রবিন। এমনকি টাকা দিতে দেরি হলে অনেকের বাড়ির আসবাবপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন সুদের টাকা দিতে না পারায় নির্যাতনের ভয়ে অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

ভুক্তভোগী গোপী রাজবংশী জানান, ‘প্রায় দুই বছর আগে রবিন মিয়ার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নেই। প্রতিমাসে সুদের টাকা পরিশোধ করেছি। আসল ৭০ হাজার টাকাও পরিশোধ করা হয়েছে। সুদের ১০ হাজার টাকা দেওয়া বাকি ছিল। এ জন্য আমাকে বেশ কয়েকবার মারধর করেছে রবিন। ওই ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ২ লাখ টাকা দাবি করছে সে। এখন মার খাওয়ার ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’

ভুক্তভোগী ইয়াসমিন হাসান জানান, ‘২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে লক্ষাধিক টাকা সুদ দিয়েছি। মাঝে সুদের টাকা দিতে না পারায় জোর করে আমার কাছ থেকে ফাঁকা চেকে স্বাক্ষর নেয়। পরে আদালতে আমার নামে ৯ লাখ টাকার মামলা করেছে রবিন। আমার ঘরের খাট ও বিভিন্ন আসবাবপত্র নিয়ে গেছে সে। রবিনের নির্যাতনের ভয়ে আমি স্কুলের চাকরি ছেড়ে চার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে ছিলাম। এখনো রবিন বাড়িতে গিয়ে ভয় দেখিয়ে আসছে।’

ভুক্তভোগী সাধন রাজবংশী বলেন, ‘সুদের টাকার দিতে দেরি হলে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে নেয় রবিন মিয়া। এরপর ইচ্ছেমতো টাকার অংক বসিয়ে মামলা করেন। অনেক সময় থানার পুলিশ দিয়ে ভয় দেখায়। বরিনের সঙ্গে পুলিশের ভালো সম্পর্ক থাকায় মাঝে মধ্যেই আমাদের মাঝিপাড়ায় পুলিশ নিয়ে আসে। রবিনের নির্যাতন আর পুলিশের ভয়ে কিছু বলতেও পারি না। একজন প্রতিবাদ করছিল, রবিন ও তার লোকজন তাকে বেধড়ক মারধর করেছে।’

এদিকে কৈতরা মাঝিপাড়ায় রবিনের নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় হরি রাজবংশীকে রাস্তায় একা পেয়ে মারধর করে রবিনসহ তার লোকজন। এ সময় মাছ বিক্রির দেড় লক্ষাধিক টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। অভিযোগ বিষয়ে জানতে সুদি কারবারি মো. রবিন মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিক যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন সরকার জানান, ‘সুদের জন্য নির্যাতনের বিষয়ে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করেন, তাহলে তদন্ত করে রবিন মিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close