সিরাজুল ইসলাম আপন, ভাঙ্গুড়া (পাবনা)

  ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

পাবনার ভাঙ্গুড়া

নাব্য হারিয়ে গুমানী ও বড়াল এখন মরা খাল

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় একসময়ের খরস্রোতা গুমানী ও বড়াল নদী এখন নাব্য হারিয়ে সংকুচিত হয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এর তলদেশে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন ফসল। দখল-দূষণ আর অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদীর বুকে পলি জমে উঁচু হয়েছে। দখল আর দূষণের কারণে দুই পাড় কমে গেছে। ফলে খরস্রোতা গুমানী ও বড়াল নদী আগের মতো নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ও অকাল বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য বড়াল ও গুমানীর উৎপত্তিস্থলে একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া পরে আটঘড়িয়, দহপাড়ায় ও পাবনার চাটমোহরে ক্রসবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে প্রায় তিন যুগ পদ্মার পলিযুক্ত পানির স্বাভাবিক প্রবাহ গুমানী ও বড়াল নদীতে বন্ধ থাকায় নাব্য হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া নদের দুই পাড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর নির্মাণ করে দখল করে চলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে পড়েছে। বর্তমানে গুমানী ও বড়াল শুকিয়ে যাওয়ায় চলনবিলের ৮টি উপজেলার মধ্যে নৌ-চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেমে এসেছে স্থবিরতা।

জানা যায়, সড়কপথে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীরা স্বল্পখরচে নৌপথে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, আরিচাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্য পরিবহন করে আসছিলেন। এখন নৌপথ বন্ধ থাকায় সড়কপথে অধিক খরচে পণ্য পরিবহন করতে হয়।

স্কুলশিক্ষক আবদুুল খালেক জানান, পানি না থাকায় এ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলো তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। সেচসহ প্রতিদিনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এখনই সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করে এ নদী পুনর্খনন করা না হলে গুমানী ও বড়াল নদী এক দিন হারিয়ে যাবে।

স্থানীয় জেলে জগন্নাথসহ একাধিক জেলে জানান, একসময়ে এই গুমানী ও বড়াল নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হলেও এখন আর মাছ শিকার করা হয় না। পানি না থাকায় অনেক জেলে আজ অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। পদ্মার মুখে পলি মাটি জমে পানির প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গুমানী ও বড়াল নিজের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। নদী দুটি পুনর্খনন করে অবাধ পানিপ্রবাহের ব্যবস্থার দাবি জানান স্থানীয় জেলেরা।

নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির চলনবিল অঞ্চলের সদস্য সচিব মো. মিজানুর রহমান বলেন, রাজশাহীর পদ্মা থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত গুমানি ও বড়ালসহ প্রায় ১০টি নদী আছে। পদ্মা থেকে বাঘাবাড়ি ২২০ কিলোমিটার নদী পথের মধ্যে নদী দখল করে ৫৬টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এবং নাটোরের আটঘরি ও রাজশাহীর চারঘাট এলাকায় দুটি স্লুইচগেট হয়েছে। এগুলো অপসারণ করা হলেই নদী আবারও প্রাণ ফিরে পাবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। অচিরে স্থাপনা ও স্লুইজগেট ভেঙে ফেলা হবে। যদি তা না হয়, তাহলে আন্দোলন গড়ে তুলব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close