চাঁপদপুর ও মেহেরপুর প্রতিনিধি

  ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪

হাসপাতালে শয্যা সংকট বাড়ছে রোগীর চাপ

হঠাৎ শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে ৭০-৮০ জন শিশু। রোগীর অভিভাবকদের অভিযোগ চিকিৎসাসেবা পেলেও হাসপাতালে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে, মেহেরপুরে জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে মাঘের ঠান্ডায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মেহেরপুরেরর তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। হাসপাতালগুলোয় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে। ঠান্ডায় গত সাত দিনে চিকিৎসা নিয়েছে ১,৩৬৮ জন রোগী।

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, সরেজমিনে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে দেখা গেছে, শয্যার তুলনায় রোগী বেশি হওয়ার কারণে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে অনেককেই মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। অনেক শিশুর অভিভাবককে জায়গা সংকটের কারণে দিনের বেলায় হাসপাতালের বারান্দায় অবস্থান করতে হয়।

জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর জেলাসহ আশপাশের জেলার বাসিন্দাদের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসাস্থল ২৫০ শয্যার চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতাল। চলতি শীত মৌসুমে গত কদিন ধরে হঠাৎ ঠান্ডার প্রকোপ বেশি থাকায় শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে শিশুদের জন্য ৪২টি বেড থাকলেও প্রতিদিন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গড়ে ভর্তি হচ্ছে ৭০-৮০ জন রোগী। যে কারণে বেড না পেয়ে অনেক শিশুকে হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ১ হাজার ২০০ শিশু। এর মধ্যে ভর্তি হয়েছে ৩১৫ রোগী। চিকিৎসাসেবায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৯৫ শিশু। ২০ শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। চিকিৎসা নিতে আসা দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

জেলা শহরের পুরান বাজার এলাকার রোকসানা বেগম জানান, তার শিশু সন্তানকে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। সরকারি হাসপাতাল হিসেবে ডাক্তাররা এসে প্রতিদিন চিকিৎসা দিচ্ছে। তবে চিকিৎসা পেলেও ওষুধ পাচ্ছেন না তিনি। ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে তাদের।

সদর উপজেলার বাবুরহাট এলাকার জেসমিন আক্তার বলেন, আমাদের চিকিৎসা ও ওষুধ দুটি দেওয়ার কথা থাকলেও তা পাচ্ছি না। হাসপাতালের বাইরে ফার্মেসিতে ওষুধের দাম দ্বিগুণ। জেলা সদর হাসপাতালের শিশু ও কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসমা বেগম বলেন, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের হাসপাতালে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু রোগী বেড়ে যাচ্ছে। যার ফলে আমাদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ কে এম মাহবুবুল আলম বলেন, সারা দেশে শৈত্য প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় চাঁদপুরেও নিউমোনিয়া ও ঠান্ডাজনিত শিশু রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ আছে ও চিকিৎসা সেবায় কোনো ত্রুটি করা হচ্ছে না।

এদিকে মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, গত ১২ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি দুপুর ১২টা পর্যন্ত মেহেরপুর সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ১,৩৬৮ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগির সংখ্যা বেশি। প্রতিদিন হাসপাতালে আউটডোরে তিন থেকে সাড়ে ৩০০ নারী-পুরুষ চিকিৎসা নিচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক নারী-পুরুষ বেশি।

সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জামির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার জানান, পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। তবে ১০০ বেডের হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা ঘোষণা করা হলেও সেই ১০০ বেডের জনবল দিয়েই চলছে। ফলে রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। ২৫০ বেড ঘোষিত ১০০ বেডের এই হাসপাতালে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ভর্তি আছে ২৩০ জন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close