কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়
স্থায়ী পল্লীর অভাবে শুঁটকি ব্যবসায় মন্দা
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় উৎপাদিত শুঁটকি থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের সুযোগ থাকলে নানা সংকটে তা সম্ভব হচ্ছে না। সামুদ্রিক তাজা মাছ থেকে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে স্থায়ী পল্লী না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন ব্যবসায়ীসহ শ্রমিকরা।
এ জন্য শুঁটকি ব্যবসার স্থানের পরিধি বাড়াতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি সংশ্লিষ্টদের। তাই সরকারের কাছে স্থায়ী পল্লী নির্মাণসহ শ্রমিকদের আর্থিক প্রণোদনা দাবি জানিয়েছে তারা। শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহার।
সামুদ্রিক মাছের সহজলভ্য হওয়ায় প্রতি বছরের মতো এবারও কুয়াকাটায় বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম। এ কাজে অংশ নেয় নারী, পুরুষ ও শিশুসহ এ পেশায় জড়িত পরিবারের একাধিক সদস্য।
কলাপাড়ায় পোয়া, সোনাপাতা, মধুফাইস্যা, রূপচাঁদা, শাপলাপাতা, চাপিলা, ফাইস্যা, লইট্টা, চিংড়ি, ছুড়ি, হাঙ্গর, ভোল ও কোড়ালসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির কাঁচা মাছ থেকে শুঁটকি তৈরি করা হয়। বাজার থেকে সংগৃহীত মাছ খোলা জায়গায় বাঁশের মাচা বানিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুঁটকি।
কোনো প্রকার কীটনাশক ছাড়াই কয়েক প্রজাতির মাছে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের লক্ষ্যে শুধু লবণ মেখে প্রক্রিয়াজাত করায় এর রয়েছে আলাদা স্বাদ, দেশের অধিকাংশ জেলায় এর রয়েছে আলাদা কদর। তবে নির্দিষ্ট কোনো পল্লী না থাকায় বছরের ৬ মাস চলে এ ব্যবসা। ফলে বছরের বাকি সময় কর্মহীন ও ন্যায্য মজুরি পান না শুঁটকি শ্রমিকরা।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক এনামুল কবির বলেন, কুয়াকাটার শুঁটকির অনেক সুনাম রয়েছে। এখানে এসে নিজ চোখে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা দেখেছি। তারা কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করে না। শহুরে এলাকার চেয়ে দাম অনেক কম।
শুঁটকি শ্রমিক আব্দুর রহিম বলেন, শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করার কোনো নির্ধারিত জায়গা না থাকায় আমরা সৈকতের পাশে এবং নদীর মোহনা কেন্দ্রিক মাছ শুকাই। অনেক সময় উচ্ছেদ অভিযানে সব কিছু ভেঙে ফেলে।
শুঁটকি ব্যবসায়ী বাচ্চু বলেন, অনেক বছর ধরে শুঁটকি ব্যবসা করি। কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে অনেক জনপ্রিয়ই হচ্ছে শুঁটকি মাছ। তাই সরকারের কাছে আমরা স্থায়ী শুঁটকি মার্কেট স্থাপনের দাবি জানাই।
কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, সারা দেশে কুয়াকাটার শুঁটকির একটা সুনাম রয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে শ্রমিকদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিতে পারি এবং স্থায়ী শুঁটকি পল্লীর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তবে উন্নত মানের শুঁটকি উৎপাদনের জন্য এই পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরকে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
"