সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি

  ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

সিংড়ার চলনবিল

৬০ কোটি টাকা শুঁটকি কেনাবেচার আশা, বিদেশেও বাড়ছে কদর

* লবণ ছাড়া অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করায় বাড়ছে শুঁটকির চাহিদা * তবে মাছের স্বল্পতার কারণে বিলের চিংড়ি মাছ পাওয়া যাচ্ছে না * উপজেলায় শুঁটকি তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ৩ শতাধিক মানুষ

দেশ-বিদেশে নাটোরের সিংড়ার চলনবিলের মিঠা পানির মাছের শুঁটকির কদর বাড়ছে। নতুন উদ্যোক্তা ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় দেশসহ ভারতেও রপ্তানি হচ্ছে শুঁটকি। লবণ ছাড়া অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করায় এখানকার শুঁটকির চাহিদা বাড়ছে জানায় স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। এ বছর ২৫০ টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ৫০-৬০ কোটি টাকার কেনাবেচার আশা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

জানা গেছে, প্রতি বছরই সিংড়ার চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া থেকে প্রচুর পরিমাণে দেশি ছোট-বড় মাছ আহরণ করা হয়। এই মাছের একটি বড় অংশ বিক্রি হয় না। এই অবিক্রিত মাছ থেকেই তৈরি হয় শুঁটকি। আর ক্রমেই সিংড়ার মিঠাপানির মাছের শুঁটকির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। চারটি বড় চাতালসহ ৩০টি এলাকায় বিলের মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ৩ শতাধিক মানুষ।

সরেজমিনে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের নিংগইন শুঁটকি চাতালে দেখা গেছে, টাকি, শোল, পাতাসি, চান্দা, পুঁটি, টেংরা, কই, চিংড়িসহ হরেক প্রজাতির দেশি মাছ কেটে বাঁশের মাঁচায় শুকাতে দেওয়া রয়েছে। চাতালের পাশে ছাউনির নিচে মাছ নিয়ে বসেছেন কয়েকজন নারী। তারা মাছ কেটে টুকরিতে রাখছেন। মাঁচায় দেওয়ার আগে ধুয়ে নেওয়া হচ্ছে মাছগুলো। মাঁচায় থাকা ভেজা মাছগুলোও এপিঠ-ওপিঠ উল্টে রাখছেন কেউ কেউ। চাতাল ঘরে রাখা শুঁটকিগুলো আবার রোদে শুকানো হচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ কাটা, বাছাই, ধোঁয়া, রোদে শুকানো, মাঁচা থেকে চাতালে তোলার কাজে শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে মাছের স্বল্পতার কারণে বিলের চিংড়ি মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। দেশি চিংড়ি মাছ খুবই সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে তোলা মাত্র তা বিক্রি হয়ে যায়। শুঁটকি তৈরির জন্য চাতাল পর্যন্ত চিংড়ি আর আসে না।

শুঁটকি ব্যবসায়ীরা বলেন, এই এলাকায় প্রতিদিন ১০-১৫ মণ শুঁটকি বিক্রি হয়। তবে সিংড়ার শুঁটকিগুলোর বেশিরভাগ চলে যায় নীলফামারীর সৈয়দপুরের বাজারে। এছাড়া রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, দিনাজপুর, কক্সবাজার, রাজশাহী, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পাইকাররা শুঁটকি কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। এখানকার শুঁটকি প্রস্তুতে লবণ ছাড়া অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করায় চাহিদা বাড়ছে। সেসঙ্গে ভারতে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করা হয় চলনবিলের শুঁটকি।

সৈয়দপুরের শুঁটকি ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার ও জমির উদ্দীন বলেন, সৈয়দপুরের শুঁটকির বাজারে সিংড়ার শুঁটকির চাহিদা বেশি। তবে মাছ রাখার নির্দিষ্ট একটা জায়গা দরকার। বর্ষাকালে কম দামে যেসব মাছ বিক্রি হয় সেগুলো শীতকাল পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারলে সারা বছর শুঁটকি বিক্রি করা সম্ভব।

শুঁটকি চাতাল মালিক নাসির উদ্দীন বলেন, পর্যাপ্ত উৎপাদন হলেও এখনো স্থানীয় বাজার সৃষ্টি হয়নি। সড়কের ধারে চাতাল থেকে শুঁটকি কিনতে পারেন না অনেকেই।

সিংড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন বলেন, স্থানীয় জেলে ও চাতাল মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে শুঁটকিপল্লী স্থাপনের বিষয়ে কাজ করছি। দেশের বাজার ছাড়িয়ে ভারতে প্রচুর পরিমাণে চলনবিলের শুঁটকি রপ্তানি হয়। এ বছর ২৫০ টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা আছে এতে ৫০-৬০ কোটি টাকার কেনাবেচা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close