দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর

  ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৩

মেহেরপুরে মাম্পস রোগের প্রাদুর্ভাব, শয্যা সংকট

মেহেরপুরে শহরসহ গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ছে মাম্পস রোগ। হঠাৎ করেই ভাইরাসজনিত মাম্পস রোগের প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কিত আক্রান্ত পরিবারগুলো। একই সঙ্গে বেড়েছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগী। এসব রোগে আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু। স্থান সংকুলান হচ্ছে না ২৫০ শয্যার মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।

হাসপাতালটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, মাম্পস ছোঁয়াছে রোগ হলেও আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। জনবল সংকট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালটিতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা। এ রোগটি গবাদিপশুর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে। জেলার মুজিবনগরের সিমান্তবর্তী সোনাপুর গ্রামে ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে মাম্পস।

ব্যাংক কর্মকর্তা ওয়াহেদ সায়েম জানান, তার কিশোরী মেয়ে সারিতা (৯) সাতদিন আগে মাম্পসে আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাইয়েও কমছে না। প্রথমে চোয়াল ব্যথা শুরু হয়। পরে মুখমণ্ডল পুরোটা ফুলে গেছে। শরীরে ব্যাপক তাপামাত্রা। তার কয়েকজন স্কুল বান্ধবীও আক্রান্ত হয়েছে।

জানা যায়, প্রায় ৭ লাখ জনসংখ্যার জেলার মানুষের চিকিৎসাসেবা জেলা সদরের ২৫০ বেডের হাসপাতালটিতে শিশু শয্যা আছে মাত্র ২৫টি। অথচ প্রতিদিনই শিশু ওয়ার্ডে গড়ে ভর্তি থাকে ৪০ থেকে ৬০ জন। এছাড়া হাসপাতালে গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিনশ রোগি ভর্তি থাকে।

সদর হাসপাতালের কনসালটেন্ট (শিশু) চিকিৎসক ডা. তানজিলা মাহবুব জানান, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়েছে। শিশুদের জন্য ৬০টি বেড থাকার কথা থাকলেও স্থান সংকটে আছে ২৫টি। বর্তমানে গত সোমবার শিশু ভর্তি আছে ৮৭ জন। এদের মধ্যে ৬১ জন শিশু ঠান্ডাজনিত নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া এবং ২৬ জন শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।

এই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এটিএম ওবায়দুল্লাহ জানান, চিকিৎসক ও জনবল সংকট থাকায় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা প্রদানে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকেন তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ রোগী। বহির্বিভাগেও প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার থেকে ১১ শ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এর পরও তারা সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, মৌসুম পরিবর্তনের কারণে ভাইরাসজনিত মাম্পস রোগ ছোঁয়াচে হলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে হোম আইসোলেশনে থাকলে সেরে যায় এ রোগ। 

সরেজমিনে হাসপাতালটিতে দেখা যায়, শয্যা সংকট থাকায় ওয়ার্ডের ফ্লোরে এবং ওয়ার্ডের বাইরে বারন্দায় রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালের ওয়ার্ড ও বারান্দার কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। রোগীর চাপে হাসপাতালের এখানে সেখানে পড়ে আছে খাবারের উচ্ছিষ্ট, ডাব ও কলার খোসা। ফলে হাসপাতালের পরিবেশ খুবই নোংরা, বিশ্রি দুর্গন্ধের কারণে ওয়াসরুম পর্যন্ত যাওয়া কষ্টের।

হাসপাতালের সুপার ডা. জামির হসিবুস সাত্তার জানান, এই রোগে কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি নেই। তবে মাম্পস একটি ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে ব্যক্তিতে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি থেকে তার সূক্ষ্ম কনাগুলো বাতাসে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে জ্বর, মাথাব্যথার সঙ্গে কানের নিচে বা চোয়ালের ওপর দুপাশের লালাগ্রন্থি ফুলে যায়। খাবার গিলতে বা চিবাতে ব্যথা হতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close