খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
খাগড়াছড়ি
ভিক্ষা নয়, দিনমজুরিতে সংসার চলে প্রতিবন্ধী দম্পতির
ভিক্ষা না করে দিনমজুরির করেন অসহায় শারীরিক প্রতিবন্ধী মোহন ত্রিপুরা (৫৪) ও নয়ন বালা ত্রিপুরার (৪০)। খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার নীলাধন পাড়া এলাকায় একটি জরাজীর্ণ ঘরে এই দম্পতি মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
জানা গেছে, গত সাত বছর আগে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ভিক্ষা করেই চলত তাদের সংসার। যে মায়ের সহায়তায় শুকনো মৌসুমে ভিক্ষায় বের হতো সে মাও মারা যায় এক বছর আগে, তাই ভিক্ষাও বন্ধ। সংসারের হাল ধরতে নয়ন বালা শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও শুরু করেন দিনমজুরির কাজ। প্রতিদিন সকালে সাহস নিয়ে বের হয় কাজের সন্ধানে। কখনো ধান খেত, কখনো জুমে, কখনো বিভিন্ন বাগানের মাটি কাটা, কখনো কচু খেতে কাজ শেষে বিকেলে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শ্রম দিয়ে তার বিনিময়ে ২০০-৩০০ টাকা যাই পান তা দিয়ে চাল, ডাল কিনে নিয়ে যান। অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হয়। অসুস্থ হযে পড়লে তখন আরও মানবেতর হয়ে পড়েন।
এ দম্পত্তি জানায়, অজি মোহন নীলাধন পাড়ার মৃত জ্ঞান রঞ্জন ত্রিপুরার সন্তান। তিন ভাই ও দুই বোনের সংসারে সে দ্বিতীয়। ১৭ বছর আগে তার বাবা মারা যায়।
অজি মোহন ইশারা করে বললেন ‘দেখেন আমার ঘরটি জরাজীর্ণ। আমি অন্ধ কিন্তু এলাকার জনপ্রতিনিধিরা, সচেতন নাগরিক ও প্রশাসন তো আর অন্ধ না। উপজেলার শত শত পরিবার ঘর পেলেও আমি পেলাম না। জরাজীর্ণ ঘরে ঘুমায় রাতে বৃষ্টি হলে সব ভিজে যায়। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর একটা দিলে খুই উপকার হব।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য সজেন ত্রিপুরা বলেন, এ ওয়ার্ডে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছে মাত্র একটি। অজি মোহন জন্ম থেকেই অন্ধ। তার ঘরটির অবস্থাও ভালো না। এই দম্পত্তি একটি ঘরের যোগ্য।
বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ পানছড়ি উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা মুনীন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দিয়েই তারা কোনো রকম দিন পার করছে। প্রতিবন্ধী ভাতাও সামান্য। অজি মোহনকে একখানা ঘরের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তাও প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সু-নজর কামনা করছি।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিবন্ধী অফিসার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তারা দুইজনেই প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। সরকারি ঘরের ব্যাপারে তারা ইউএনও বরাবর আবেদন করে আমাদের অনুলিপি দিলে আমরা প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবো।
"