আবদুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ

রূপগঞ্জে সবজি মৌসুমে ৫ কোটি টাকা বিক্রি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৪০ গ্রামের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করে বদলে গেছে দৃশ্যপট। আড়তদারদের হিসাবে প্রতি মৌসুমে প্রায় ৫ কোটি টাকার সবজি বিক্রি হয় ঢাকাসহ সারা দেশে। এখান থেকে অর্ধকোটি টাকার সবজি চলতি মৌসুমে বিদেশ রপ্তানি হয়। এ এলাকাকে মানুষ সবজির গ্রাম বলেই চেনে।

জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়ন হলো রূপগঞ্জ সদর ও অন্যটি দাউদপুর ইউনিয়ন। এখানকার ৪০টি গ্রামের কয়েকহাজার কৃষক পরিবার সবজি চাষ করে এখন স্বাবলম্বী। উপজেলার রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চাপরি, গোবিন্দপুর, কামতা, হারারবাড়ি, পরশি, কুমারটেক, বাতান, মাঝিপাড়া, কুচিলাগর, সুলপিনা, আলমপুর, ইছাপুরা, বাড়িয়াছনি, গোয়ালপাড়া ও দাউদপুর ইউনিয়নের কালনি, জিন্দা, কালিকুটিসহ প্রায় ৪০টি গ্রামের চাষি সবজির আবাদ করে স্বচ্ছল জীবনযাপন করছে। এসব এলাকায় লাউ, কাকরোল, চিচিঙ্গা, করলা, বরবটি, শসা, কচু, ধুন্দুল, জিঙ্গা, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির চাষ হয়।

কাঁচপুরের ইকবাল, নারায়ণগঞ্জের রবিউল, ও গাউছিয়ার বাবুল হোসেন আড়তদার জানান, প্রতি মৌসুমে প্রায় ৫ কোটি টাকার সবজি বিক্রি হয় ঢাকাসহ সারাদেশে। এখান থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকার সবজি চলতি মৌসুমে বিদেশ রফতানি হয়।

রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের পরশী গ্রামের আলী হোসেন মাষ্টার জানান, এই এলাকায় একটু পরিশ্রম করলেই কৃষি কাজেও ভাগ্য খুলে যায়। এলাকায় কৃষি ফার্ম গড়ে শুরু করেন সবজি বিপ্লব। তার সবজি ফার্মে এখন পেপে, মূলা, করলা, বরবটি, শসা, ফলে। এবার তিনি ৪ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করছে।

এছাড়া রূপগঞ্জের ইছাপুরায় বসে বৃহত্তর সবজির হাট। বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা হরেকরকম তরিতরকারি নিয়ে নিয়ে এ হাটে আসেন। ভ্যান কিংবা রিক্সা যোগে তরকারি ইছাপুরা বাজারে আনা হয়। ক্রেতারও ভোর বেলা ট্রাক নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গিয়ে অপেক্ষায় থাকেন।

চাষি ওমেদ আলী, ফটিক সহ অনেকে জানান, শসা উৎপাদন করে চাষিদের বিক্রির চিন্তা করতে হয় না। ফড়িয়ারা গ্রামে ঘুরে শসা কিনে নিয়ে যায়। আর তারাই আবার পাইকারদের কাছে বিক্রি করে। প্রতি গ্রামেই অসংখ্য ফড়িয়া রয়েছে। আছে পাইকারও। প্রতিদিন এক হাজার মন শসা বেচাকেনা হচ্ছে।

এদিকে চাপরি গ্রামের শসাচাষি শিরিষচন্দ্র জানান, চারহাজার টাকা খরচ করে ১ বিঘা জমিতে শসার আবাদ করলে প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা আয় হয়। একই গ্রামের কৃষক আব্দুর বারেক অন্যদের দেখাদেখি জমি বর্গা নিয়ে শসার আবাদ করে স্বচ্ছল হয়েছেন।

গ্রামের বৃদ্ধ মান্নান ব্যাপারি বলেন, ‘বাপ দাদারে দেখছি কচু ফলাইতে তাই আমরাও করছি। এটি সিজনাল সবজি হলেও তা বর্তমানে সারাবছরই ফলছে। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩ হাজার পিস কচু ফলে।’

স্থানীয় সবজির পাইকার আনোয়ার আলী জানান, প্রতিদিন ২-৩ ট্রাকযোগে কম করে ৮০০ থেকে এক হাজার মণ শসা ঢাকায় চালান করা হচ্ছে।

আরো দেখা গেছে, গ্রামের নাম বেলুন। এ গ্রামটি বেগুন উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। বেগুন চাষ করে এ গ্রামের মানুষ এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। কৃষক রামকমল, গাজী আনোয়ার জানান, বেলে দোঁ-আশ মাটিতে বেগুন ভাল হয়। তবে বেগুন চাষের জন্য গোবর, সার ও ছাইয়ের বিশেষ প্রয়োজন।

রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুরাদুল হাসান বলেন, সত্যিই রূপগঞ্জ সবজির গ্রাম। এখানের সবজি এখন বিদেশ রফতানি হচ্ছে। তবে অধিকাংশ সবজি খেতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। ফলে বিদেশে তার চাহিদা কম। সম্পূর্ন কীটনাশকবিহীন সবজি ফলে এ এলাকাগুলোতে। সরকারীভাবে সহযোগীতা পেলে তারা আরো ভালো করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close