ছায়েদ আহমেদ, হাতিয়া (নোয়াখালী)

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

অনিয়ম-দুর্নীতিই ফল বিপর্যয়ের কারণ

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার (এইচএসসি) ফলাফলে হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটেছে। কলেজটির ৩১৬ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৭৫ জন। পাসের হার ২৩.৭৩ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের নানান অনিয়মকে দুষছেন শিক্ষার্থীরা। নোয়াখালী জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার একমাত্র সরকারি উচ্চ বিদ্যাপীঠ হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজ। ঐতিহ্যবাহী এই কলেজটিতে শিক্ষার ক্রমাগত অধঃপতন এবং ধাপে ধাপে ফলাফল বিপর্যয়ে ক্রমেই তার মান হারাতে বসেছে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষার মাত্রাতিরক্ত ফলাফল বিপর্যয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে নতুন মাত্রায়।

সম্প্রতি কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলেজে যথারীতি শ্রেণিকার্যক্রম চলে না। শিক্ষকরাও থাকেন প্রায় ছুটিতে। দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক শাখার ইলিয়াস জানান, একটা সরকারি কলেজের যে মূল্য থাকার কথা তার গুরুত্বই নেই এখানে। একই শ্রেণির বাণিজ্য শাখার নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তিন শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষকরা প্রায়ই ছুটিতে থাকেন। আর যারা থাকেন তাদের ডেকে এনে ক্লাস করতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এইচএসসির অকৃতকার্য ৩ শিক্ষার্থীও একই কথা জানান।

এ ছাড়াও, আইসিটির ল্যাবে কোনো কার্যক্রম নেই বলেও জানান শিক্ষার্থীরা। একাদশ শ্রেণির সোহাগ, তারেক এবং নিশান জানান, গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে এ পর্যন্ত তাদের কখনো শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব দেখানো হয়নি। কম্পিউটার শেখানো থাক্ দূরের কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সব বর্ষে ভর্তি এবং ফরম পূরণের ফির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত ইনকোর্স পরীক্ষা (যতটুকু অধ্যায় পড়ানো হয় তার ওপর ভিত্তি করে ৩ মাস পর পরীক্ষা নেওয়া), অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, উন্নয়ন, মেগাজিন, খেলাধুলা এবং বিবিধ ইস্যুসহ নানা খাত দেখিয়ে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা শিক্ষার্থীদের থেকে নিয়ে যায়। অথচ যার কোনো বাস্তবতাই নেই। বেসরকারি উন্নয়ন খাত থেকে অর্থ লুট, এডমিট ফি একবারের জায়গায় দুবার নেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিরও অভিযোগ ওঠে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সপালের বিরুদ্ধে। ডিগ্রি এবং অনার্স পরীক্ষার কেন্দ্র ফি সরকার নির্ধারিত সাড়ে ৪০০ টাকা ধার্য থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

এদিকে, অধ্যক্ষের পদ দীর্ঘ ৩ বছরের অধিক সময় ধরে শূন্য থাকায় সহযোগী অধ্যাপক তোফায়েল হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি স্থানীয় হওয়ায় এবং তার প্রশাসনিক দুর্বলতায় শিক্ষার মান ক্রমেই অধঃপতনের এদিকে এগোচ্ছে বলে জানান কলেজটির একাধিক স্টাফ ও শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার ২য় বর্ষের পরীক্ষার্থীরা হাতিয়া ডিগ্রি কলেজ সেন্টারে পরীক্ষা দিতে গেলে সেখানেও কেন্দ্র ফির নামে ২০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ তোলেন পরীক্ষার্থীরা। অথচ এর আগে, কেন্দ্র ফি ৫০০ টাকা করে নিয়েছে হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ। যেখানে সরকার নির্ধারিত সাড়ে ৪০০ টাকা। আর এভাবে ডিগ্রি ও অনার্সের পরীক্ষার্থীদের থেকেও অতিরিক্ত ফি নিয়ে পুরোটাই ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিজের পকেট তাজা করেন বলে অভিযোগ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কলেজ স্টাফের।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তোফায়েল হোসেন জানান, কোনো অনিয়ম হয়নি। বিধি অনুযায়ী ফি নেওয়া হচ্ছে আর আইসিটি ল্যাব সক্রিয়করণের এখনো পরিবেশ তৈরি হয়নি।

উল্লেখ্য, কলেজটির ১৫টি বিষয়ের জন্য শিক্ষক রয়েছেন ১৯ জন। এরমধ্যে ২ জন ট্রেইনিংয়ে ও কেউ কেউ আছেন বাড়িতে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close