নাজিম উদ্দিন, মুরাদনগর (কুমিল্লা)

  ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

দেয়ালেই ঝুলছে হাজিরা যন্ত্র

শিক্ষকরা যেন ক্লাস ফাঁকি দিতে না পারে এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ১৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে বায়োমেট্রিক হাজিরা যন্ত্র। কিন্তু তিন বছরেও চালু করা হয়নি সেই হাজিরা যন্ত্র। দেয়ালেই ঝুলে থাকছে রাষ্ট্রীয় অর্থে বসানো মেশিনগুলো। এছাড়াও মেশিন ক্রয়ে রয়েছে অনিয়মের অভিযোগও।

দুপুর ১২টায় মুরাদনগর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষকের কথা জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক জানান, স্যার অফিসের কাজে উপজেলায় আছেন। আমরা আছি, ক্লাস নিতে কোনো সমস্যা হয় না। স্যারদের তো অধিকাংশ সময় অফিসের কাজে উপজেলায় থাকতে হয়।

শুধু মুরাদনগর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমান না, প্রতিনিয়ত শিক্ষা অফিসের নাম ভাঙিয়ে ক্লাস ফাঁকি দিচ্ছেন শিক্ষক নেতা ও অধিকাংশ স্কুল প্রধানরা।

অথচ শিক্ষকরা যেন ক্লাস ফাঁকি দিতে না পারে সেজন্য উপজেলার ১৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয় বায়োমেট্রিক হাজিরা যন্ত্র। তবে এতেও কোনো কাজ হয়নি। সফটওয়্যারের অজুহাত দেখিয়ে তিন বছরেও চালু করা হয়নি হাজিরা যন্ত্র।

উপরন্তু মেশিন ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের স্লিপের ফান্ড থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনার জন্য ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২২-৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বাজার যাচাই করে মেশিন ক্রয়ের কথা থাকলেও অফিসের নির্দেশনায় একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে মেশিন ক্রয় করেছেন সবাই। এসব মেশিনের বাজার দর জানা নেই শিক্ষকদের। তারা ভয়ে নামও বলছেন না সেই প্রতিষ্ঠানের। ২৫-৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে যে ডিজিটাল হাজিরা মেশিনটি বিদ্যালয়ে গিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার সঠিক বাজারমূল্য আনুষঙ্গিক খরচসহ সাড়ে নয় হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। প্রতিটি মেশিন ক্রয়ে ১৫-২০ হাজার টাকা অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে উপজেলা শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে।

একাধিক সহকারি শিক্ষক বলছেন, মেশিন কবেই চালু হয়ে যেত, আমাদের শিক্ষক নেতারাই চান না, এটি চালু হোক। কারণ প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষা অফিসের নাম ভাঙিয়ে উপজেলায় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সময় কাটান শিক্ষক নেতারা। মেশিন চালু হলে তো আর তারা এটা পারবে না।

মুরাদনগর উত্তর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, হাজিরা মেশিন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বন্ধ রয়েছে। এখানে আমাদের প্রতিবাদের কিছু নেই।

বাঙ্গরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, মেশিন আমরা যাচাই-বাছাই করেই ক্রয় করেছি। দুই বছরের সার্ভিস ও প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ মেশিন ক্রয় করাতে দামটা বেশি পড়েছে। করোনার কারণে মেশিন চালু করতে পারিনি। আবার সার্ভিসের মেয়াদও চলে গেছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফৌজিয়া আকতার বলেন, মেশিন ক্রয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে শুনেছি স্লিপের টাকা থেকে প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে হাজিরা মেশিন স্থাপন করেছে। মেশিনগুলো কেন চালু করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কোম্পানি থেকে এগুলো ক্রয় করা হয়েছে তারা মেশিনের সফটওয়্যার দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো দেয়নি। তবে আমি যতটুকু জানি সিম কার্ডের মাধ্যমে এসব মেশিন থেকে শিক্ষকদের হাজিরা প্রিন্ট করা সম্ভব। এটিও তারা কেন করছে না তা আমার জানা নেই। অবশ্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসব মেশিন ক্রয় করতে মানা করেছিলেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম সরকার কিশোর বলেন, শুরুতে আমার কাছে এ বিষয়ে একটি প্রজেক্ট চেয়েছিল। আমি তাতে রাজি হইনি। উপজেলায় একটি সিন্ডিকেটের মতো আছে তারা পরবর্তীতে স্লিপের টাকা থেকে এসব মেশিনগুলো ক্রয় করিয়েছে। এখন শুনছি মেশিন ক্রয়ের তিন বছরেও নাকি তা চালু করা হয়নি। আমার মনে হয় শিক্ষকদের ক্লাস ফাঁকি দেওয়া বন্ধ করা মেশিন ক্রয়ের মূল লক্ষ্য ছিল না, লক্ষ্য ছিল মেশিনের নামে ওই সিন্ডিকেটের পকেট ভারি করা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close