এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর

  ২৭ নভেম্বর, ২০২২

হারিয়ে যাচ্ছে হাতে ভাজা মুড়ি

কারখানায় উৎপাদন হওয়ায় নারীরা কর্মহীন হয়ে পড়ছে

আধুনিক জীবনযাত্রায় হাতে ভাজা দেশি মুড়ি প্রায় বিলুপ্তির পথে। পবিত্র মাহে রমজানে মুড়ি ছাড়া ইফতার যেন অকল্পনীয়। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে নানান খাবারের সঙ্গে এখনো ওতপ্রতভাবে মিশে আছে মুড়ির কদর। কিন্তু হাতে ভাজা মুড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে কারখানার মেশিনের তৈরি মুড়ি। যা স্বাদবিহীন ও স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

ফরিদপুরের ৯টি উপজেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে হাতে ভাজা এই মুড়ির বাজার পুরোপুরি আধুনিক কল-কারখানার দখলে। তাই শহর-উপশহর আর গ্রাম্য অঞ্চলে মানুষের কাছে মুড়ির কদর থাকলেও হাতে ভাজা মুড়ি মেলে না। পল্লী গাঁয়ের পরিবার-বাড়িতেও কারখানার মুড়ির দখল। অথচ আগেকার দিনে গ্রামের ছোট-বড় যেকোনো পরিবারে সারা বছরই হাতে ভাজা মুড়ি পাওয়া যেত।

ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু কারখানায় মুড়ি উৎপাদিত হওয়ায় হারিয়ে গেছে সুস্বাদু হাতে ভাজা দেশি মুড়ি। দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলোও মুড়ি তৈরি করে শহর থেকে শুরু করে পল্লীর ছোটখাটো দোকানগুলোতে পৌঁচ্ছে দিচ্ছে। ফলে এ শিল্পটি একেবারে হারানোর পথে।

সরেজমিনে সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের সদরদি গ্রামে চোখে পড়ে মুড়ি হাতে ভাজার দৃশ্য। ওই গ্রামের মৃত কাদের মোল্লার স্ত্রী নুরজাহান বেগম হাত দিয়ে মুড়ি ভাজার কাজে পারদর্শী। আশপাশের গ্রামের বিভিন্ন পরিবারের মুড়ি ভেজে দেন তিনি।

তিনি বলেন, ছোট সময় থেকেই মা-দাদির কাছ থেকে দেখা ও শেখা। মুড়ি ভাজাও একটি শিল্প। সহজ মনে হলেও এর কায়দা আছে। ধান সংগ্রহ করে প্রথমে আধা সিদ্ধ তারপর পুরোপুরি সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে তা দিয়ে মুড়ির চাল তৈরি করা হয়। এরপর সেই চাল থেকে তৈরি হয় হাতে ভাজা দেশি মুড়ি। হাতে ভাজা মুড়ি সু-স্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত। তবে এখনো এর চাহিদা থাকলেও পাওয়া যায় না। তাই গ্রামের মানুষও মুড়ির দরকার হলে দোকান থেকে এক প্যাকেট কিনে এনে চাহিদা পূরণ করেন। বর্তমানে মুড়ি কারখানায় উৎপাদিত হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়ছি। তারপরও মুড়ি ভাজার কাজে কেউ ডাক দিলে বসে থাকতে পারি না।

এ ব্যাপারে সদরদী গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা মো. কাশেম শেখ, রুস্তম মোল্যা, রূপবান বেগম ও সজীব বলেন, আমরা ছোটকাল থেকে দেখে এসেছি, খেয়ে এসেছি হাতে ভাজা মুড়ি। এখনো নিজেদের জমির ধান থেকে আলাদাভাবে মুড়ি ভাজার জন্য চাল তৈরি করে মুড়ি ভাজি। সারা বছরই ঘরে মুড়ি থাকে। কোন সকালে অথবা কোন বেলা ভাতের বদলে মুড়ি খেয়ে থাকে অনেকেই। তাই বলে গ্রামের সব বাড়িতে হাতে ভাজা মুড়ি পাওয়া যাবে না। এখন গ্রামের যেকোনো মুদি দোকানে গেলেই কারখানার তৈরি প্যাকেট মুড়ি পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সংবাদকর্মী সঞ্জীব দাস বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য ও স্বাদের বিবেচনা করে এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে ক্রেতা সাধারণের উচিত সুস্বাদু এই হাতে ভাজা দেশি মুড়ির স্বাদ নেওয়া।

কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, এ চিরচেনা ঐতিহ্য আমাদের মাঝ থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে। সদরদী গ্রামের নুরজাহান বেগমের হাতে মুড়ি ভালো হয়।

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক পান্না বালা বলেন, হাতে ভাজা মুড়ি আমাদের একটি হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য। এটা এক ধরনের শিল্প। কিন্তু আমাদের এই পুরনো ঐতিহ্য এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। সবদিক দিয়ে বিবেচনা করলে হাতে ভাজা মুড়ি অতুলনীয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close