আরিফ খান, বেড়া (পাবনা)

  ০১ অক্টোবর, ২০২২

বেড়া-সাঁথিয়া সড়কে অটোভ্যান আতঙ্ক

মহাসড়কে নছিমন, করিমন, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার মহাসড়কগুলোতে নছিমন ও করিমনের চলাচল প্রায় বন্ধ হলেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোভ্যানের চলাচল বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে অটোভ্যানগুলো পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়ার মহাসড়কে আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। চলতি বছরের সাত মাসে (জানুয়ারি থেকে জুলাই) দুই উপজেলায় এই অটোভ্যানের কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অন্তত সাতজনের। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ২৫ জনেরও বেশি।

অটোভ্যানের চালক ও মিস্ত্রিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পায়েচালিত ভ্যানে ব্যাটারি যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে অটোভ্যান। বৈদ্যুতিক চার্জে অটোভ্যানগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুর্দান্ত গতিতে ছুটে চলে। যাত্রী ও পণ্য নিয়ে অবৈধ এই যানগুলো মহাসড়কে বিভিন্ন ভারি যানবাহনগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলে। দুর্বল ব্রেক ও কাঠামোগত কারণে অটোভ্যানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা বেজায় কঠিন। ফলে মহাসড়কে এগুলো একের পর এক দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। এ ছাড়া অটোভ্যানের ব্যাটারি প্রতিদিন চার্জ দিতে হয় বলে এর পেছনে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়ে যাচ্ছে।

বেড়া ফায়ার স্টেশন ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৯ জনুয়ারি পাবনা-ঢাকা মহাসড়কে সাঁথিয়া উপজেলার আতাইকুলায় ট্রাকের ধাক্কায় পাবনা সদর উপজেলার পুটিগাড়া গ্রামের ভ্যানচালক রবিউল বিশ্বাস ও আব্দুল মোমিন নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন আরও দুজন ভ্যানযাত্রী। গত ২৬ মে একই মহাসড়কে সাঁথিয়া উপজেলার চাড়া বটতলা নামক স্থানে ট্রাকচাপায় এখলাসউদ্দিন নামের এক ভ্যানচালক নিহত হন। তিনি বেড়া উপজেলার খাস আমিনপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। গত ২৯ মে মহাসড়কের বেড়া উপজেলার চাকলা বাসস্ট্যান্ডে বাসচাপায় বেড়ার চাকলা পূর্বপাড়া গ্রামের বাচ্চু শেখ নামের আরেক ভ্যানচালক নিহত হন। এর পরে গত ২৮ জুলাই পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের সাঁথিয়া উপজেলার বেঙ্গলমিট নামক স্থানে একটি অটোভ্যানকে বাস চাপা দিলে অটোভ্যানের চালক আবু সাঈদ ও তার ছেলে তাওহিদ এবং আরেক শিশু রোজা (৫) মারা যায়।

অটোভ্যান তৈরির কারিগর ও চালকেরা জানান পায়েচালিত ভ্যানে ব্যাটারি সংযোজন করলেই সেটি অটোভ্যানে পরিণত হয়। রিকশা-ভ্যান চালাতে শারীরিক পরিশ্রম হলেও অটোভ্যান চলে ব্যাটারির শক্তিতে। একটি অটোভ্যানে আট থেকে ১০ জন যাত্রী নিয়ে অথবা পায়েচালিত রিকশা-ভ্যানের তুলনায় চার-পাঁচগুণ মাল নিয়ে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে ছোটা যায়। এর ব্রেক খুব দুর্বল বলে দ্রুত গতিতে ছোটার সময় একে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তাই প্রায়ই এটি দুর্ঘটনায় পড়ে। এছাড়া এর চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না থাকার কারণেও মহাসড়কে গিয়ে এটি নিজে যেমন দুর্ঘটনায় পড়ে তেমনি অন্য যানবাহনকেও দুর্ঘটনায় পড়তে বাধ্য করে।

বেড়া বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় অটোভ্যানচালক তোরাব আলী, আব্দুল হকসহ চার থেকে পাঁচজনের সঙ্গে। তারা জানান, কাছাকাছি দূরত্বের জায়গাগুলোতে যাতায়াতে যাত্রীরা বাসের পরিবর্তে অটোভ্যানে উঠতেই বেশি পছন্দ করেন। তাদের দাবি, ব্যাটারির চার্জে চলে বলে অটোভ্যান চালাতে এখন আর শারীরিক কষ্ট হয় না। এছাড়া চলেও বেশ জোড়ে। যাত্রী বহন করে প্রতিদিন একেকজনের কমপক্ষে পাঁচশ টাকা রোজগার হয়।

পাবনা জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি রইসউদ্দিন বলেন, ‘মহাসড়কে অটোভ্যানের চলাচল চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো নিজেরা দুর্ঘটনায় পড়ছে, বড় যানবাহনগুলোকেও বিপদে ফেলছে।’

পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের মাধপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) ইসাহাক আলী বলেন, ‘মহাসড়কে অটোভ্যানসহ তিন চাকার যেকোনো যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। অল্প জনবল থাকা সত্ত্বেও আমরা এগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছি। তা সত্ত্বেও এগুলো সুযোগ পেলেই মহাসড়কে নেমে পড়ে। এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান আরও কঠোর করা হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close