তুহিন আহমদ, সিলেট
চোরাই চিনিতে সয়লাব সিলেটের বাজার
ভারত থেকে চোরাইপথে আসা চিনি ভর্তি ১৪টি ট্রাক জব্দ করেছে সিলেট মহানগর পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে সদর উপজেলার উমাইরগাঁও এলাকার ভাদেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে ট্রাকগুলো জব্দ করা হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় চোরাকারবারিরা। তবে তাদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, সিলেটে আটক হওয়া চোরাই চিনির এটি সবচেয়ে বড় চালান। প্রায় ১২৫ টন চিনি জব্দ করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, সকালে চিনিবোঝাই ট্রাকগুলো কোম্পানীগঞ্জের ফাঁড়ি পথ উমাইরগাঁওয়ের দিক থেকে সারিবদ্ধভাবে সিলেট শহরের দিকে যাচ্ছিল। ট্রাকগুলোর সামনে একটি প্রাইভেট কার ও একটি মোটরসাইকেল ছিল। সকাল ৬টার দিকে চিনিভর্তি ট্রাকগুলো উমাইরগাঁও এলাকার ভাদেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছায়। পুলিশ সদস্যদের দেখে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও ট্রাকচালকরা মালামাল ফেলে পালিয়ে যান।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, এটিই সিলেটে আটক হওয়া ভারতীয় চিনির সবচেয়ে বড় চালান। চোরাকারবারিরা ভারত থেকে অবৈধ পথে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত থেকে সিলেট শহরের দিকে চিনি নিয়ে আসছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে নিম্নমানের চিনি : সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো দিয়ে প্রতিদিনই দেশে ঢুকছে বিপুল পরিমাণে চোরাই চিনি। চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে জেলার সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলাকে বেছে নিয়েছে চোরাকারবারিরা। রাতের আঁধারে সাপ্তাহে দুই দিন দেশে ঢুকছে অবৈধ চিনির চালান। নিম্নমানের এসব চিনি দেশি চিনির বস্তায় ভরে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় ও মদতে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। এসব চিনি ‘বুঙ্গার চিনি’ নামে পরিচিত।
সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার এলাকার সীমান্তে চোরাচালান বলতেই এখন যে পণ্য, সেটা হচ্ছে চিনি। গত প্রায় দুই বছর ধরে চিনির চোরাচালানের জেরে এখন কোনটা ভারতীয়, আর কোনটা দেশি চিনি সেটা চেনা দায়। সিলেটের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতীয় চিনি ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার থেকে ৬ হাজার ১০০ টাকায়। দেশি চিনির দাম ৬ হাজার ৭০০ থেকে ৬ হাজার ৮৫০ টাকা।
সিলেট মহানগর পুলিশ জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে চোরাই চিনি ধরপাকড়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে গোয়েন্দা পুলিশও সক্রিয়। তবে সুফল মিলছে না। বস্তার পর বস্তা চিনি ধরা পড়লেও থামছে না চোরাই চিনির কারবার। চালান ধরা পড়লেও এর সঙ্গে জড়িত চোরাকারবারিরা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, চোরাচালান প্রতিরোধে পুলিশ আগের চেয়ে আরো তৎপর। নিয়মিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অবৈধ পথে আসা বিপুল পরিমাণ মালামাল জব্দ হচ্ছে। বাহকরাও ধরা পড়ছে।
"