চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২৩ মে, ২০২৪

কর্ণফুলী নদীর বুকে বর্জ্য শোধনাগার বন্ধের দাবি

দাবি না মানলে ২৭ মে সিটি করপোরেশন ঘেরাও কর্মসূচি

কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে বাকলিয়া দ্বীপে বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প স্থাপন বন্ধের দাবি জানিয়েছে কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন। এসব সংগঠনের নেতারা বলছেন, নদী হলো জীবন্ত সত্তা। এর মাঝখানে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করার মানে নদীকে ধ্বংস করা। তারা পাঁচ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে বলেন, এর মধ্যে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনা বন্ধের ঘোষণা না হলে আগামী ২৭ মে সিটি করপোরেশন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে। সেইসঙ্গে উচ্চ আদালতে নির্দেশ অমান্য করাসহ সংশ্লিষ্ট আইনে প্রতিকার প্রার্থনা করে লিগ্যাল নোটিস প্রদান ও হাইকোর্টে রিট মামলা করা হবে বলেও জানানো হয়।

গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র, আরএসকে ফাউন্ডেশন, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন, গ্রিন ফিঙ্গার্স ফাউন্ডেশন, তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদ। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে প্রকল্প হয় জনস্বার্থে নয়, কিছু মানুষের পকেট ভারী করতে। বাকলিয়া দ্বীপে বর্জ্য শোধনাগারও এর ব্যতিক্রম নয়। নদীর মাঝখানে চট্টগ্রাম শহরের বর্জ্য নিয়ে নদী হত্যার পরিকল্পনা সুস্থ মানুষের মাথায় কী করে আসে- প্রশ্ন রাখেন তিনি।

ডা. মাহফুজ আরো বলেন, ‘নদীর মাঝে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন বন্ধের ঘোষণা না দিলে সর্বস্তরের জনগণ রাস্তায় নামবে। এ পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য করবে।’ চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আলীউর রহমান। উপস্থিত ছিলেন রাজনীতিবিদ ও পরিবেশ সংগঠক মিঠুল দাশ গুপ্ত, পরিবেশ সংগঠক ডা. মঞ্জুরুল করিম বিপ্লব, নারীনেত্রী ও পরিবেশ সংগঠক হাসিনা আক্তার টুনু, চট্টগ্রাম মহানগর যুব লীগের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারশন সভাপতি এস এম পেয়ার আলী, আওয়ামী লীগ নেতা ও পরিবেশ সংগঠক এম শাহাদাৎ নবী খোকা, চট্টগ্রাম জেলা নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি এম নুরুল হুদা চৌধুরী, এইচ ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান শাহিন শিরিন, আর এস কে ফাউন্ডেশন প্রধান নির্বাহী জাহেদুল করিম শিকদার, সাবেক ছাত্রনেতা জাফর আল তানিয়ার, বাঁশখালী নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি মো. আজগর হোসেন তালুকদার, পতেঙ্গা নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি মো. হাছান বাদশা প্রমুখ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, নদী জীবন্ত সত্তা, জুরিসটিক পারসন বা লিগ্যাল পারসন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষের মতো নদীর মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। হাইকোর্টের এ আদেশ অনুযায়ী নদীর মাঝখানে বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প করা অবৈধ এবং আদালতের আদেশের লঙ্ঘন। সুতারাং এ প্রকল্প হতে পারে না। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরে বন্দরনগরীভিত্তিক পরিবেশ সংস্থা ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপিনিয়নের (ইসিএইচও) সহযোগিতায় কর্ণফুলী নদীর প্রাণ প্রকৃতি, উদ্ভিদ বৈচিত্র্য ও দূষণ নিয়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী ৮১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। দূষণ রোধে কোনো ব্যবস্থা না নিলে আরো ৬১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে পড়বে। ৫৩টি শিল্পসহ ৮৯টি উৎস থেকে কর্ণফুলী নদী দূষিত হচ্ছে। গবেষণায় কর্ণফুলী নদীর তীরে এখনো ৫২৮ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া গেছে।

গবেষণা তথ্যমতে, কর্ণফুলীর তীর থেকে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা ৮১ প্রজাতির দেশীয় উদ্ভিদ সংগ্রহ করে নাসারিতে বিকাশিত করে সামনের বর্ষা মৌসুমে এ চরে লাগানো হোক। এতে কর্ণফুলী নদী প্রাণ ফিরে পাবে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে মানুষের বিনোদনের কোনো স্থান নেই। পৃথিবীতে অনেক দেশে নদী বা সাগরের মাঝখানের চরে নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করে দেশি বিদেশি পর্যটক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ চরটি পরিবেশবান্ধন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি ইকো ট্যুরিস্ট স্পট গড়ে তোলা যায়। এতে করে কর্ণফুলীর নাব্য রক্ষার পাশাপাশি চট্টগ্রামের ও দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close