রাহাত চৌধুরী, জাবি

  ০৩ এপ্রিল, ২০২৪

লেকের পাড়ে ভবন পাখির জন্য হুমকি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আল বেরুনী হলের বর্ধিতাংশে লেকের পাড়ে ছয়তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ওই স্থানেই যদি ভবন নির্মাণ করা হয়, তাহলে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত দুই শতাধিক গাছ কাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর স্থানটি লেকের পাড়ে হওয়ায় হুমকিতে পড়তে পারে প্রতি শীতে আসা পরিযায়ী পাখির বিচরণ, নষ্ট হতে পারে নিরাপদ আবাসস্থল। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ দীর্ঘদিন ধরে মাস্টারপ্ল্যানের দাবিতে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীরা।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভবনের জন্য স্থানটি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিভাগটিকে অনুষদের রূপ দিতে চান বিভাগীয় শিক্ষকরা। এ লক্ষ্যে অনুষদ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ অর্থায়নে ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। মোট বরাদ্দের ৪৭ কোটি ৮৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা বাংলাদেশ সরকার এবং অবশিষ্ট ৫০ কোটি টাকা ভারত সরকার প্রদান করবে। এই প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে আছেন বিভাগীয় শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজউদ্দীন। ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে গত বছরের ১৭ জুন টেন্ডার আহ্বান করা হয়। গত ৯ নভেম্বর টেন্ডার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিডিউল বিক্রি ও জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। নির্ধারিত জায়গায় দুটি টিনশেড ঘরে গত কয়েক বছর ধরে চারুকলা বিভাগ শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা আসছে। তবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যমান জায়গাটির গাছপালা কেটে ও টিডশেড ঘরগুলো ভেঙে ছয়তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের দাবি, ভবন নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থানটির পাশেই যে লেক রয়েছে, প্রতি বছর শীতের সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে সেখানে পরিযায়ী পাখি আসে। আর সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পরিযায়ী পাখির নিরাপদ আবাস। পাশাপাশি ভবন নির্মাণকাজ চলাকালীন ও শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হলে শুরু হবে কোলাহল, মানুষের আনাগোনা আর ভিড়ে বজায় থাকবে না নীরব প্রকৃতির পরিবেশ। এতে বন্ধ হয়ে যেতে পারে পরিযায়ী পাখির বিচরণ। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে ভবনটিকে অন্যত্র স্থানান্তর করা উচিত। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবন নির্মাণ করলে ভবন ও আশপাশের জায়গায় ছোট-বড় মিলিয়ে ২০০ গাছ কাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি মাস্টারপ্ল্যানের দাবি জানিয়ে আসছি। অতিরিক্ত ভবন নির্মাণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা নষ্ট করে বিলাসিতার প্রয়োজন নেই। এরই মধ্যে লেকচার থিয়েটার হচ্ছে। এ সময় এত অতিরিক্ত ভবন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। মূল বিষয় হলো আগে আমাদের মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে একটি দৃষ্টান্ত দেখাতে হবে।

মাস্টারপ্ল্যানের দৃষ্টান্ত ব্যতীত কোনো ভবন হতে দিব না।’

লেকের পাড়ে ভবন নির্মাণে পাখিদের ওপর প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘পাখিদের বিচরণে বাধার বিষয়টি নির্ভর করে লেক ও কনস্ট্রাকশন এরিয়ার পজিশনের ওপর। দ্বিতীয়ত কনস্ট্রাকশনে কোন ধরনের কাজ চলছে এবং তা কোন সিজনে হচ্ছে। যখন পাখি আসবে তখন পুরোপুরি প্রভাব বোঝা যাবে। লেকের পাড়ে বহুতল ভবন হলে তা পাখির ফ্লাই ওয়ের মধ্যে পড়লে একরকম, না পড়লে আরেকরকম প্রভাব। যদি ফ্লাই ওয়ের মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণ হয়, সেক্ষেত্রে পাখির চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।’

এদিকে ২০০ গাছ কাটা পড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ময়েজউদ্দীন। তিনি বলেন, ‘ভবনের ডিজাইন লেকের থেকে কিছুটা সরিয়ে দিয়ে বাস্কেটবল কোর্টের দিকে নিয়ে গেছি। সেখানে শুধু মেহগনি গাছ কিছু আছে, বটগাছের পেছনে ২০-৩০ টা, সেগুলো কাটা পড়বে। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। ২০১৮-১৯ সালের দিকে আমাদের সিন্ডিকেট থেকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ কমিটি এখানে জায়গা সিলেক্ট করেছে।’ সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার একান্ত সচিব কল রিসিভ করে জানান তিনি ব্যস্ত আছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close