রাজশাহী ব্যুরো

  ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ধর্ষণের ভিডিও ধারণ

ব্ল্যাকমেইল চক্রের সদস্য স্বামী-স্ত্রী শ্যালিকা আটক

স্ত্রী ও শ্যালিকাকে নিয়ে এক ব্যক্তি গড়ে তুলেছে অনৈতিক চক্র। ওই ব্যক্তি বিভিন্ন নারীকে ফাদে ফেলে বাসায় নিয়ে আসতেন। এক পর্যায়ে ধর্ষণ করতো, আর আড়াল থেকে স্ত্রী ও শ্যালিকা এর ভিডিও ধারণ করে রাখতো। একইভাবে স্ত্রী ও শ্যালিকাও বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে একই কাজ করতেন আর একইভাবে আড়াল থেকে স্বামী তা ভিডিও ধারণ করতেন। পরে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। সম্প্রতি এ ব্ল্যাকমেইল চক্রের হোতাদের গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহানগরীর চন্দ্রিমা থানাধীন ভদ্রা পদ্মা আবাসিক এলাকা থেকে তাদের আটক করে র‌্যাব। গতকাল শুক্রবার দুপুরে র‌্যাব-৫ এর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি ১০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, পাঁচটি মোবাইল ফোন, চারটি সিম কার্ড, তিনটি চেক বই ও দুইটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে।

আটকরা হচ্ছেন রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন হেতেম খাঁ এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে আলমগীর ওরফে রয়েল (৪০), তার স্ত্রী হেলেনা খাতুন (৩০), স্ত্রীর বোন (শ্যালিকা) দিলারা বেগম (৩৫) ও চন্দ্রিমা থানাধীন উপ-ভদ্রা এলাকার আফজালের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৪২)।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানান, গ্রেপ্তার আলমগীর ওরফে রয়েল মহানগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকার ৩ নম্বর সড়কের এক বাসায় স্ত্রী-শ্যালিকাদের নিয়ে ভাড়া থাকেন। আলমগীর কৌশলে নারীদের বাসায় নিয়ে এসে ধর্ষণ করতেন। আর এর ভিডিও ধারণ করতেন তার স্ত্রী ও শ্যালিকা। আর আলমগীরের স্ত্রী ও শ্যালিকারাও পুরুষদের ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে এনে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতেন। যার ভিডিও ধারণ করতেন আলমগীর। তারপর সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তারা মোটা অংকের অর্থ আদায় করতেন। সর্বশেষ ৭ ফেব্রুয়ারি এক নারীর সঙ্গে এমন ঘটনার পর অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে আলমগীর, তার স্ত্রী হেলেনা খাতুন এবং শ্যালিকা দিলারা বেগম ও মমতাজ বেগমকে আটক করে র‌্যাব।

র‌্যাব বলছে, এ চক্রটি অনেক নারী-পুরুষের সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। চক্রটি ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করতো। শুধু তাই নয়, পরে যেন আইনের আশ্রয় নেওয়ার সাহস না দেখায় এ কারণে তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে কিংবা চেকে স্বাক্ষরও নিয়ে রাখতেন। যার প্রমাণ হিসেবে র‌্যাবের অভিযানে বাড়িটি থেকে কয়েকটি স্ট্যাম্প ও চেকবই জব্দ করা হয়েছে।

অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানান, গত বুধবার এক নারী মহানগরীর কোর্টস্টেশনে তার মোবাইল ফোন হারিয়ে ফেলেন। ঘটনাটি শুনে সেই নারীর ফোন উদ্ধারের কথা বলে আলমগীর কৌশলে তার ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। এরপর সেখানে তাকে ধর্ষণ করা হয়। আর এ ঘটনার ভিডিও করেন তার স্ত্রী হেলেনা। পরে সেই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তিনটি ১০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন এবং তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। আর এ টাকা না দিলে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যমানের জমি দাবি করেন চক্রের সদস্যরা। তখন ভুক্তভোগী ওই নারী সেই বাসা থেকে কৌশলে পালিয়ে বাড়ি ফিরে বিষয়টি তার পরিবারের সদস্যদের জানান। এরপর থানায় গিয়ে মামলা করেন। বিষয়টি জানতে পেরে র‌্যাব এ চক্রের সদস্যদের আটক করে।

র‌্যাব অধিনায়ক জানান, আলমগীরের কাজই হলো স্বামী পরিত্যক্তা কিংবা বিধবা নারীদের টার্গেট করে ফাঁদে ফেলে বাসায় নেওয়া। এরপর ধর্ষণ করা এবং তার ভিডিও করে রাখা। লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগীরা কেউ মুখ খুলতেন না। সর্বশেষ ভুক্তভোগী নারী এ বিষয়ে মামলা করলে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আলমগীর ও তার স্ত্রী হেলেনাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আলমগীরের বিরুদ্ধে এর আগেও নারী ও শিশু আইনে একটি মামলা আছে বলেও জানিয়েছেন রাজশাহীর র‌্যাবের এ শীর্ষ কর্মকর্তা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close