জুনাইদ কবির, ঠাকুরগাঁও

  ২৬ নভেম্বর, ২০২২

ঠাকুরগাঁওয়ে খেজুর বাগান

রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছি

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে শীত একটু আগেই আসে। এবার শীত নামার সঙ্গে সঙ্গে গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত। শুরু করেছেন রস আহরণ। এজন্য প্রথমে হাতে দা ও কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুর গাছে ওঠে নিপুণ হাতে গাছ চাছা-ছেলা করেন, পরে ছেলা স্থানে বাঁশের কঞ্চির নল বসানো হয়। সেই নল বেয়ে নেমে আসে সুস্বাদু খেজুর রস। নওগাঁ থেকে গাছিরা ঠাকুরগাঁওয়ে এসে খেজুর বাগানে রস সংগ্রহ করে গুড় ও পাটালি তৈরি করছেন। পাখিডাকা ভোর থেকে সকাল ৮-৯টা পর্যন্ত গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন গাছিরা। দুপুর পর্যন্ত রস জাল দিয়ে গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। বিকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি রস সংগ্রহের জন্য গাছে গাছে হাঁড়ি বাঁধা হয়। এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক যুগ আগে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন মোগন ইক্ষু খামারে ঠাকুরগাঁও সুগারমিলের উদ্যোগে প্রায় ১ হাজার ৫০০টি খেজুরের গাছ নিয়ে একটি বাগান গড়ে তোলা হয়। অযত্ন ও ফসলি আবাদের কারনে অনেক গাছ নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে ওই বাগানে ৭০০টির মতো খেজুরের গাছ আছে।

গাছিরা জানান, খেজুরের রস পেতে হলে বেশকিছু কাজ করতে হয়। গাছের উপরিভাগের নরম অংশকে কেটে সেখানে বসিয়ে দেওয়া হয় বাঁশের তৈরি নালা। আবার পাখিরা যাতে রস না খেতে পারে আর কোন জীবাণু না ছড়াতে পারে, সেজন্য আবার জাল বিছিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। গাছের কাটা অংশ থেকে চুইয়ে-চুইয়ে রস নল দিয়ে জমা হয় মাটির হাঁড়িতে। একবার গাছ কাটার পর ২-৩ দিন রস পাওয়া যায়। রসের জন্য গাছ একবার কাটার পর ৫-৬ দিন বিশ্রাম দেওয়া হয়। রোদে কাটা অংশ শুকিয়ে গেলে আবার ওই অংশ চেছে দেওয়া হয়। এতে ফের রস নিঃসৃত হতে থাকে। এ কারণেই সাধারণত খেজুর গাছ পূর্ব ও পশ্চিম দিকে কাটা হয়, যাতে সূর্যের আলো সরাসরি ওই কাটা অংশে পড়ে।

নাটোর থেকে আসা গাছি আবদুল মালেক বলেন, আমি দেশে অনেক জায়গায় রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজে গিয়েছি কিন্তু আমাদের উত্তরবঙ্গে এক জায়গায় সাজানো এত সুন্দর ও এত বড় বাগান আর কোথাও দেখিনি।

দর্শনার্থী জিনু আহম্মেদ বলেন, মোহন ইক্ষু খামারের খেজুর বাগানে আমরা টাটকা রস সংগ্রহ করি। সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশে তৈরি আসল গুড় পাচ্ছি। যা দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ এসে নিয়ে যাচ্ছেন। বাগানটি অনেক বড়। এটিকে পরিচর্যা করা খুবই প্রয়োজন। বাগানের অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। খেজুর বাগানকে ঘিরে বিভিন্ন দোকানো বসতে শুরু করেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান মনির জানান, ঠাকুরগাঁও সুগারমিলের আওতাও থাকা এ খেজুর বাগান ১ লাখ ৭২ হাজার টাকায় লিজ নিয়েছি। বাগানের ৭ শতাধিক গাছ আছে। নাটোর থেকে ৮ গাছি দিয়ে রস সংগ্রহ ও গুর তৈরি করা হচ্ছে। শীত বাড়লে গাছ থেকে বেশি রস পাওয়া যায়। বেশি রস পেলে গুড়ও বেশি উৎপাদন করা যায়।

এদিকে, সারা দিন খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি দেখতে শত শত মানুষ ভিড় করছেন। আগের বছরের মতো এবারও ভালো খেজুরের রস পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা লিজ গ্রহীতার। রস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়।

নারগুন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল জলিল বলেন, নতুন করে খেজুরের বাগান চাইলেই চট করে করা যায় না। গাছ বড় হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। বাগানটির বয়স অনেক। এর পরিচর্যা করা খুবই দরকার। এ জেলায় খেজুরের গাছ রোপণের তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায় না। সবাই আম, কাঁঠাল আর লিচু নিয়েই ব্যস্ত। তিনি খেজুর বাগান উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close