ক্রীড়া প্রতিবেদক
মোহামেডানকে হারিয়ে কিংসের ট্রেবল জয়
ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে গতকাল উত্তেজনায় ঠাসা এক ফাইনালের সাক্ষী হলো দেশের ফুটবল সমর্থকরা। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল বসুন্ধরা কিংস এবং মোহামেডান। এ ম্যাচ দুদলের কাছেই ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
মোহামেডানের সামনে ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর সমান ফেডারেশন কাপ জয়ের সুযোগ। অন্যদিকে কিংসের সামনে স্বপ্নের ট্রেবল জয়ের সুযোগ। তবে উত্তেজনায় ঠাসা ফাইনাল ২-১ গোলে জিতে দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন পূরণ করে বসুন্ধরা কিংস।
ম্যাচের শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে কিংস। এরপর দুর্দান্ত কামব্যাক। নির্ধারিত সময়ে খেলা শেষ হয় ১-১ সমতায়। অতিরিক্ত সময়ে জাহিদ হোসেনের গোলে ফেরে কিংসের স্বস্তি। খেলা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় মোহামেডান। নাটকীয়তার পর আবারও মাঠে গড়ায় ম্যাচ। সর্বশেষে কিংসের স্বপ্নের ট্রেবল জয়। পেশাদার ফুটবল যুগে দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ের ইতিহাস গড়লো দেশের অন্যতম সফল ক্লাবটি।
এ ম্যাচটা দুদলের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যাচ্ছিল শুরু থেকেই। গোলের জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে দুদল। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে বসে দুদল। শুরুতে আক্রমণের চেষ্টা চালিয়ে গেলেও কোনো গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না কোনো দলই।
একটু পরই অবশ্য ভালো সুযোগ আসে দরিয়েলতনের সামনে কিন্তু মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন হোসেন দারুণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। রাকিবের বাড়ানো বল বক্সে পেয়ে শটও নেন দরিয়েলতন কিন্তু তা আটকে দেন সুজন। ৩৭ মিনিটে সুযোগ নষ্ট করেন সোহেল রানা জুনিয়র। রাকিবের কাটব্যাক বক্সের ওপর থেকে পোস্টে রাখতে পারতেন কিন্তু ফাঁকায় পেয়েও ঠিকঠাক শটই নিতে পারেননি এ মিডফিল্ডার।
খেলার ৪১ মিনিটে প্রথম ভালো সুযোগ পায় মোহামেডান। দিয়াবাতের সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে বক্সে ঢুকে পড়া এমানুয়েল সানডের শট তপু বর্মণের গায়ে লেগে দিক বদলে বাইরে চলে যায়। দুই মিনিট পরই আরেকবার কিংসের রক্ষণ কাঁপায় সাদা-কালোরা। বাম প্রান্ত থেকে আরিফের ক্রস অন্য প্রান্তে দিয়াবাতে ভলি করেছিলেন কিন্তু মেহেদি হাসান তা গ্লাভসে নিয়ে নেন।
প্রথমার্ধে হলুদ কার্ড দেখার পর স্বাভাবিক ছন্দে খেলতে পারছিলেন না বিশ্বনাথ ঘোষ যে কারণে মধ্যবিরতির পর তাকে আর মাঠে নামাননি কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোন। তার পরিবর্তে বদলি নামেন জাহিদ হোসেনকে।
দ্বিতীয়ার্ধের ৪৮ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে তপুর ক্রসে দারুণ সুযোগ এসেছিল দোরিয়েলতনের সামনে। তপুর ক্রসে অ্যাক্রোবেটিক শট করতে চেয়েছিলেন এ ব্রাজিলয়ান। তবে বলে পা ছোয়াতে পারেননি তিনি। দুই মিনিট পরেই পাল্টা আক্রমণে মোজাফরভের দূর পাল্লার শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়।
৫৬ মিনিটে মাহবুবের ডিফেন্স চেরা পাস বক্সের মধ্যে পেয়ে যান সুলেমানে দিয়াবাতে। তবে কোনো বিপদ হতে দেননি ববুরবেক। ৫৯ মিনিট থেকে ৬৩ মিনিট বসুন্ধরার ওপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে মোহামেডান। বদলি নেমেই মোহামেডানের খেলার ধরন বদলে দেন শাহরিয়ার ইমন। দিয়াবাতের ক্রস থেকে ইমনের শট ঠেকান কিংস গোলরক্ষক শ্রাবন। পরের মিনিটেই দিয়াবাতের কর্নার থেকে ইমনের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর বসুন্ধরার উপর চাপ বজায় রেখে খেলতে থাকে মোহামেডান। ৬৩ মিনিটে ডেডলক ভাঙেন এমানুয়েল সানডে। ইমনেরর পাস থেকে বল পেয়ে নিজের জন্য যায়গা তৈরি করে নেন সানডে। তার গ্রাউন্ডেড শট ফেরানো জন্য কোনো জবাব ছিল না শ্রাবনের কাছে।
৬৭ মিনিটে প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে মিগেলে ফ্রি-কিক পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। গোলের পর আক্রমণে ধার বাড়ায় মোহামেডান। ৭১ মিনিটে সানডের বাড়ানো বলে বক্সের মধ্যে বল পান সানডে। তবে ডিফেন্স ভেদ করতে পারেননি তিনি। পরের মিনিটেই বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে নেওয়া আরিফের শট ফিরিয়ে দেন শ্রাবন। ৭৭ মিনিটে গোলরক্ষকে একা পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি দোরিয়েলতন গোমেজ। রবসনের বাড়ানো বল বক্সের মধ্যে পেয়ে যান দোরিয়েলতন। তবে তার শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন মোহামেডানের গোলরক্ষক সুজন হোসেন। পরের মিনিটেই কাউন্টার অ্যাটাকে কিংসের রক্ষণে আবারও ভীতি ছড়ায় সাদা-কালোরা।
৮১ মিনিটে প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে রবসনের বুলেট গতির শট সাইড বারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলেই কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠে মোহামেডান। সতীর্থের পাস থেকে বল ধরে একাই কিংসের বক্সে ঢুকে যান দিয়াবাতে। তার শট ফিরিয়ে দেন শ্রাবন। গোলরক্ষককে একা পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।
৮৫ মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন রবসন রবিনহো। রবসনের শট সরাসরি গ্লাভসবন্দী করেন সুজন। তবে ৮৭ মিনিটে কিংসের ত্রাতা হয়ে আসেন মিগেল। প্রায় মাঝ মাঠ থেকে একাই বল টেনে নিয়ে যান এ ব্রাজিলিয়ান। বক্সের ভেতর ঢুকে দারুণ এক শটে ফারপোস্টে বল জালে জড়ান মিগেল। উল্লাসে ফেটে পড়েন গ্যালারির সমর্থকরা। এরপর দুদলই লিড নিতে মরিয়া হয়ে উঠলেও নির্ধরাতি সময়ের খেলা শেষ হয় ১-১ সমতায়। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ে শুরু থেকেই চাপ ধরে রেখে খেলতে থাকে কিংস। খেলার ১০৪ মিনিটে রবসনের দূর পাল্লার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ১০৪ মিনিটে কিংসকে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন জাহিদ হাসান। মিগেলের কর্নার ঝাপিয়ে ফেরান মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন। ফিরতি বলে আলতো টোকায় বল জালে জড়ান জাহিদ হোসেন। গোলের বাঁশি বাজান রেফারি। তবে এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে নারাজ মোহামেডানের খেলোয়াড়রা। তারা ফাউলের দাবি জানায়। তবে রেফারি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে রেফারির ওপর চড়াও হন মোহামেডানের ফুটবলাররা। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় সেখানে কোনো ফাউল হয়নি।
প্রাথমিকভাবে খেলা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় মোহামেডান। খেলা বন্ধ থাকে প্রায় ১০ মিনিট। মোহামেডানের কোচণ্ডকর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে আবারও খেলায় ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তারা। অতিরিক্ত সময়ের মাঠে গড়ায় দ্বিতীয়ার্ধের খেলা। ১১৭ মিনিটে ইমনের প্লেসিং শট বাস ঘেষে বাইরে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত আর কোনো অঘটন ঘটাতে পারেনি কোচ আলফাজের শিষ্যরা। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে কিংসের গ্যালারি। ইতিহাসে নাম তুলে হাসি মুখেই মাঠ ছাড়ে কোচ অস্কার ব্রুজনের শিষ্যরা।
"