ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২২ মে, ২০২৪

বিশ্বকাপে ভয়ডরহীন খেলতে চান লিটন

নিজের প্রতিভা ও সামর্থ্যানুযায়ী বিশ্বকাপে এখনো ভালো কিছু করতে পারেননি বলেই মনে করেন লিটন কুমার দাস। আগের চেয়ে তাই এবারের বিশ্বকাপে একটু হলেও উন্নতি করতে চান তিনি। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে পারলে বাংলাদেশ দলও বিশ্বকাপে ভালো করতে পারবে বলে বিশ্বাস তার। বিশ্বকাপে দলকে ভালো কিছু করতে হলে লিটনের জ্বলে ওঠা জরুরি।

তবে তার সাম্প্রতিক ফর্মের যে অবস্থা, তাতে ভরসার জায়গা খুব একটা নেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লিটনের সামগ্রিক পারফরম্যান্সও হতাশাজনক। অথচ বিশ্বমঞ্চে লিটনের পদাপর্ণ ছিল সাড়াজাগানো। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম কয়েকটি ম্যাচে একাদশের বাইরে থাকার পর প্রথমবার সুযোগ পান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সেদিন টন্টনে স্মরণীয় এক জুটিতে দলকে জয় এনে দেন তিনি। তার ব্যাট থেকে সেদিন এসেছিল ৬৯ বলে ৯৪ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। ওই বিশ্বকাপে পরে আরো চার ম্যাচ খেলে তিনি ফিফটি করতে পারেননি। গত অক্টোবর-নভেম্বরে আরেকটি ওয়ানডে বিশ্বকাপেও প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ করতে পারেননি তিনি। ৯ ইনিংসে ফিফটি করতে পেরেছিলেন মাত্র দুটি। অবশ্য দলের চরম ব্যর্থ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান স্কোরার ছিলেন তিনিই (৩১.৫৫ গড়ে ২৮৪)।

এ দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের মাঝে দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার ব্যাট হাসেনি খুব একটা। গত বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ২৭ বলে ৬০ রানের দারুণ এক ইনিংস অবশ্য উপহার দিয়েছিলেন তিনি। তবে ২০ ওভারের বিশ্বকাপে ১৩ ইনিংস খেলে তার ফিফটি ওই একটিই। ২৬০ রান করেছেন তিনি মাত্র ১১৩.০৪ স্ট্রাইক রেটে। এবার খুব বড় কিছু করার স্বপ্নের কথা তিনি বলেননি। তবে বিসিবির ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের আয়োজন ‘দ্য গ্রিন রেড স্টোরি’তে তিনি বলেন, আগের চেয়ে উন্নতির তাগিদ অনুভব করছেন। আমার (পারফরম্যান্সের) কথা বললে, ‘নট আপ টু দ্য মার্ক।’ আমি যে লেভেলের খেলোয়াড় বা যে পারফর্ম করা উচিত আমার, সেটা করতে পারিনি। জিনিসটা যদি এভাবে বলি যে, আগের দুটি বিশ্বকাপে যদি ১০০ রান না করি, এবারের বিশ্বকাপে যদি ১০১ করতে পারি, তাহলে আরো ভালো করেছি। যা করিনি, চেষ্টা করব তার থেকে ভালো কিছু করার।’

সেই উন্নতির সীমানায় আছে সেঞ্চুরি করার আশাও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো বটেই, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেই বাংলাদেশের সেঞ্চুরি স্রেফ একটি। ২০১৬ বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে যেটি করেছিলেন তামিম ইকবাল। এরপর প্রথাগত ছোট দল বা বড় দলগুলোর সঙ্গে কত ম্যাচই তো হলো, সেঞ্চুরি আর কেউ করতে পারেননি। লিটনের আশা, এবার তিনি কিংবা টপঅর্ডারের অন্য কেউ শতরানে সঙ্গী হবেন পূর্বসূরির। শুধু আমি নই, আমার মনে হয় এখন বাংলাদেশের সব টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানই চিন্তা করে যে (সেঞ্চুরি করবে)- এটা তো সহজ কাজ নয়, টি-টোয়েন্টিতে যাব এবং একশ করে ফেলব। যদিও বিশ্ব ক্রিকেট অন্যভাবে চলছে- আইপিএলের কথা বলব না। কারণ ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট পুরোপুরি ভিন্ন ধরনের। যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখেন, বিশ্বকাপে একশ হয়, তবে হাতেগোনা দুয়েকজন ব্যাটসম্যান করেন টি-টোয়েন্টিতে। আমাদেরও সেই সুযোগ আছে। আমাদের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা খুব ভালো। চেষ্টা সবার ভেতরই থাকবে।’

লিটনের যা সাম্প্রতিক ফর্ম, তাকে অবশ্য সেঞ্চুরির চিন্তা বহুদূর, আগে ছন্দে ফেরা জরুরি। সর্বশেষ ১০ টি-টোয়েন্টিতে তার ফিফটি নেই। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর তিন সংস্করণ মিলিয়ে টানা ২১ ইনিংসে পঞ্চাশের মুখ দেখেননি তিনি। তবে ফর্ম নিয়ে ভাবনায় কাতর হয়ে নিজের বিপদ আরো ঘনীভূত করতে চান না তিনি। নিজের প্রক্রিয়া অটল থেকেই পথ খুঁজে নিতে চান ২৯ বছর বয়সি ব্যাটসম্যান। খারাপ সময়ে অতি বেশি চিন্তার কিছু থাকে না। কারণ আপনি ব্যাডপ্যাঁচে যখন থাকেন, যত বেশি চিন্তা করবেন, যত কিছু নিয়ে ভাববেন, তত আপনার জন্য খারাপই হয়ে আসবে। আপনার কাছে একটা বিকল্পই থাকে, কতটুকু কঠোর পরিশ্রম করছেন অনুশীলনে, অনুশীলনকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে নিচ্ছেন, সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, খারাপ সময়ে যত শান্ত ও স্থির থাকা যায়, যত কম অতিরিক্ত করা যায় (তত ভালো)- স্রেফ নিজের ক্রিকেটে মনোযোগ রাখা।’ বাজে সময়টায় কাছের অনেক মানুষকেই তিনি পাশে পান। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও আছে তার। তবে তার জন্য প্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস তার স্ত্রী।

অনেক মানুষই আছেন, যারা সবসময় আমাকে প্রেরণা জোগান। অনেক কোচ আছেন, যাদের সঙ্গে কথা হয়, অনুপ্রাণিত করেন। এ সময়ে এটা অনেক বড় ব্যাপার, সাহস দেওয়াটা। ‘সবচেয়ে কাছের মানুষ আমার স্ত্রী। সবসময় আমাকে সাহস দেয় সে। এর থেকে বড় কিছু লাগে না।’ নিজে যেমন খারাপ সময় কাটানোর আশা করছেন, একই আশা আছে তার দলকে নিয়েও। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে এ সংস্করণে পারফরম্যান্সে উন্নতির যে ছাপ রেখে আসছে দল, সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বকাপেও দল ভালো করতে পারে বলে বিশ্বাস তার। ২০২২ বিশ্বকাপের পর থেকেই টি-টোয়েন্টিতে আমাদের দলটা অনেক ব্যালান্সড। আমরা অনেকগুলো সিরিজ জিতেছি এবং ভালো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটও খেলছি। এমন নয় যে, স্রেফ এমনি জিতে যাচ্ছি। ভালো দলের সঙ্গে জিতেছি, ভালো ক্রিকেট খেলে জিতেছি। অবশ্যই বিশ্বকাপে একটা আলাদা চাপ থাকবে। সব দলেরই থাকে। আমার মনে হয়, আমরা যদি ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি এবং ক্রিকেটের ভাষায় যেটি বলে, শান্ত ও স্থির থেকে যদি ক্রিকেট খেলা যায়, ভয়ডরহীন ক্রিকেট, কোনো ফল না ভেবে যদি খেলা যায়, আমার মনে হয়, আমাদের খুব ভালো সুযোগ আছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close