ক্রীড়া ডেস্ক

  ১৬ মে, ২০২৪

বড় হুমকি নিরাপত্তা

নিজেদের প্রমাণে মুখিয়ে জার্মানি

২০০৬ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্য দিয়ে সর্বশেষ ঘরের মাঠে বড় কোনো ফুটবল টুর্নামেন্টের স্বাগতিক হয়েছিল জার্মান। ২০২৪ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ সেই স্মৃতিকে আবারও ফিরিয়ে আনার উপলক্ষ্য করে দিয়েছে। ফুটবলপাগল জাতি হিসেবে পরিচিত জার্মানি চায় সফল আয়োজনের পাশাপাশি নিজেদের হারানোর গৌরব আবারও ফিরে পেতে। গ্রীষ্মকালীন রূপকথা হিসেবে এবারের ইউরোকে বিবেচনা করছেন জার্মানরা। বিশ্বের কাছে নিজেদের পুরোনো শক্তিমত্তা নতুনভাবে ফিরিয়ে আনাই এখন তাদের সামনে একমাত্র লক্ষ্য।

১৮ বছর আগে জার্গেন ক্লিন্সম্যানের অধীনে সেমিফাইনালে খেলেছিল জার্মানি। যদিও টুর্নামেন্টের আগে শেষ চারের লক্ষ্যের কথাই বারবার জার্মানরা বলেছিলেন। সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে ইতালির কাছে পরাজিত হয়ে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় হয় স্বাগতিকরা। প্রায় এক দশক পর ব্রাজিলে আবার শিরোপা জিতে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় মিরোস্লাভ ক্লোজা, সামির খেদিরা, থমাস মুলার,টনি ক্রুসের দল। আট বছর পর চতুর্থ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের পর অধিনায়ক ফিলিপ লাম বলেছিলেন, ‘২০০৬ সালে পুরো জাতি যেভাবে আমাদের সঙ্গে ছিল আমরা সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। সেটাই আমাদের সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে। সবাই মিলে এখন আমরা যেভাবে এ জয় উদযাপন করব তা চিন্তাও করতে পারছি না। এটা পুরো জাতিকে উৎসবের আমেজ দিয়েছে।’

ওই আসরের সময় জার্মানির আর্থিক অবস্থা বেশ নিম্নমুখী ছিল। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বকাপের শিরোপাটি ওই সময় জার্মানিকে পুরো বিশ্বের কাছে অন্য এক পরিচয় উপহার দিয়েছিল। প্রথম ম্যাচে কোস্টারিকার বিপক্ষে ফিলিপ লামের গোলের পর থেকে জার্মান দল যেন অন্য এক উত্তেজনায় নিজেদের উন্নীত করে। ১৮ বছর পর জার্মানির সঙ্গে সঙ্গে পুরো বিশ্বও পরিবর্তিত হয়েছে। আবারও জার্মানির আর্থিক পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। দেশটির অবকাঠামো উন্নতিও বাধার সম্মুখীন হয়েছে। যার প্রভাব অতি সম্প্রতি ফুটবল মাঠেও দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছে আবারও ফুটবলের মাধ্যমে অনেক কিছুই পরিবর্তন করা সম্ভব। টানা দুটি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের হতাশা কাটিয়ে জার্মানরা এবার কোচ জুলিয়ান নাগলসম্যানের কাঁধে চড়ে নিজেদের ফিরিয়ে আনতে চায়। ২০২৩ সালে তারা ১১টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জয়ী হয়েছে। কিন্তু মার্চে ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসকে প্রীতি ম্যাচে হারিয়ে শক্তিশালী ভাবে ফিরে এসেছে। ইউরোয় ফল যাই হোক না কেন, জাতীয়ভাবে এর প্রভাব থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

আসন্ন ইউরো সামনে রেখে সমর্থক ও খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জার্মানদের সামনে এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে দুটি বড় সহিংসতা চলমান থাকায় বিশ্ব পরিস্থিতিই এখন হুমকির মুখে। হুলিগান থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার পাশাপাশি সাইবার অ্যাটাককেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজকরা। প্রায় আড়াই লাখ মিলিয়নেরও বেশি সমর্থকের সঙ্গে ২৪টি দলের বেস ক্যাম্প, ১০টি স্টেডিয়াম মিলে বিশাল একটি অংশকে সারাক্ষণ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখতে হবে। আগামী ১৪ জুন থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। এছাড়া প্রতিযোগিতার অনুমোদিত নির্দিষ্ট কিছু ফ্যান জোনেও প্রায় ১২ মিলিয়ন প্রত্যক্ষদর্শীর উপস্থিতির কথা রয়েছে।

২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ও এবারের টুর্নামেন্ট পরিচালক ফিলিফ লাম বলেন, ‘সব মিলিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’ টুর্নামেন্টের নজিরবিহীন পদক্ষেপ হিসেবে জার্মানি টুর্ণামেন্টে অংশ নেওয়া দেশগুলোর কাছ থেকে প্রায় ৩০০ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তারা টুর্নামেন্ট চলাকালীন জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নেসাসে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ কো-অপারেশন সেন্টারের (আইপিসিসি) সঙ্গে প্রকল্প মনিটরিংয়ে কাজ করবে। এছাড়া পুরো আয়োজনের সুষ্ঠু পরিচালনায় জার্মানি, ইউরোপোল ও ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা তো রয়েছেনই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close