ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ১৩ মে, ২০২৪

ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ শান্তরা

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যুক্তরাষ্ট্রে উড়াল দেওয়ার তিন দিন আগে হারের যন্ত্রণা পেল বাংলাদেশ। সেটাও যেনতেন কোনো হার নয়, বেশ বিব্রতকর বললেও কম হবে। জিম্বাবুয়ের জন্য ম্যাচটা ছিল হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম চারটি জিতে আগেই সিরিজ জিতে নিয়েছিল বাংলাদেশ। সিরিজ জিতলেও পারফরম্যান্সে ছিল বিশাল ঘাটতি। ব্যাটিং, বোলিং দুই বিভাগেই ছিল আত্মবিশ্বাসের কমতি। শেষ ম্যাচে সে সব শুধরে বিশ্বকাপের পথে এগিয়ে যেতে চেয়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। কিন্তু মিরপুর শেরে বাংলায় নিজেদের ডেরায় উল্টো হারের যন্ত্রণা পেতে হলো। জিম্বাবুয়ে তুলে নিয়েছে ৮ উইকেটের বিশাল জয়।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স ঠিক মন ভরাতে পারেনি ভক্তদের। দুই ম্যাচে ধুঁকে ধুঁকে জিতলেও শেষ ম্যাচে হারতেই হয়েছে। দলের প্রত্যাশিত দাপট ছিল অনুপস্থিত। বিশেষ করে ব্যাটারদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি আগ্রাসী পারফরম্যান্স। প্রতিপক্ষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল হলেও দেড়শো স্ট্রাইকরেট রেখেও খেলতে পারেননি কেউ। টি-টোয়েন্টি ঠিক টি-টোয়েন্টির মেজাজে কেন খেলতে পারে না বাংলাদেশ, বিশ্বকাপের আগে তাই এ প্রশ্ন উঠেছে। তবে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তাতে কোনো সমস্যা খুঁজে পাচ্ছেন না।

পাঁচ ম্যাচের সিরিজের সবগুলো খেলে ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম দুই ফিফটিতে করেছেন সর্বোচ্চ ১৬০ রান, তার স্ট্রাইকরেট ১২৩.০৭। সমান ম্যাচে ১৪০ করা তাওহিদ হৃদয় স্ট্রাইকরেট রাখতে পেরেছেন ১৪৭.৩৬। আর কেউ কাছাকাছি নন। অধিনায়ক শান্ত ৫ ম্যাচে ৮১ রান করেছেন ১৬.২০ গড় ও মাত্র ১০৩.৮৪ স্ট্রাইকরেটে। গতকাল রবিবার পঞ্চম টি-টোয়েন্টিতে বেশ ভালো উইকেটেও বড় রান করতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০ ওভারে স্বাগতিকদের করা ১৫৭ রান ৯ বল আগেই টপকে ৮ উইকেটে জিতে যায় জিম্বাবুয়ে। এর আগের দুই ম্যাচেও জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল সফরকারী দল। টি-টোয়েন্টি খেলা কি বাংলাদেশ দল খেলে ওয়ানডের মেজাজে? ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাতে একমত হলেন না শান্ত। পরে ব্যাখ্যা করে বললেন পরিস্থিতি বিচার না করেই দেশে স্ট্রাইকরেট নিয়ে অনেক কথা হয়, ‘আমাদের দেশে স্ট্রাইক রেট নিয়ে অনেক কথা হয়। স্ট্রাইক রেট, স্ট্রাইক রেট কিন্তু জিনিসটা হলো যে আপনি যদি চিন্তা করেন আমরা সম্প্রতি ভালো উইকেটে খেলা শুরু করেছি। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা খেললাম, ওটা ভালো উইকেটে খেলেছি। কিন্তু এ জিনিসটা সময় দিতে হবে (বড় রান)।’ ঘরোয়া ক্রিকেটেও ভালো উইকেটে খেললে স্ট্রাইকরেটের উন্নতির আশা তার, ‘আমরা যদি লম্বা সময় ধরে ভালো উইকেটে খেলার শুরু করি, ৬ মাস, এক বছর, দুই বছর তারপর আপনি দেখবেন প্রত্যেকটা ব্যাটসম্যান ভালো স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করছে। এটা শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হলে হবে না, আমরা যে বিপিএলে খেলি ওই জায়গাতেও ভালো উইকেটে খেলতে হবে অনেক লম্বা সময় ধরে তারপর আপনি এ পার্থক্যটা দেখতে পাবেন।’

এদিন দলের হারের পেছনেও মাঝারি পুঁজির দায় না দিয়ে বোলিং-ফিল্ডিং দুষেছেন শান্ত, ‘আমার মনে হয় যে আমরা যেভাবে ব্যাটিং করেছি, শুরুটা আমাদের ভালো হয় নাই। তারপরে আমরা যেভাবে ফিরে এসেছি, ভালোভাবে ক্যারেক্টার শো করেছি। যেই রানটা করেছিলাম এ উইকেটের জন্য এটা পর্যাপ্ত ছিল। কিন্তু আমরা বোলিংটা ভালো করিনি। ফিল্ডিংয়েও একটু সফট ছিলাম কিছু জায়গায়। জিনিসগুলো হলো যে সিকান্দার রাজা এবং ব্রায়ান বেনেট যে রান করল তারা খুব ভালো ব্যাট করেছে। কোনো সুযোগই দেয় নাই। এ কৃতিত্ব তাদের দিতেই হবে।’

সিরিজজুড়ে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে বাংলাদেশ। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অনেক ইতিবাচক দিকই খুঁজে পেয়েছেন শান্ত। সেগুলোকে সঙ্গী করে নিয়েই আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেতে চায় বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ের পর শান্ত বলেন, ‘আমার মনে হয় খুব ভালো একটা সিরিজ গিয়েছে। সিরিজ জিতলে অবশ্যই আত্মবিশ্বাস বাড়ে। তৃপ্তির জায়গা বলব আমাদের যে সব এক্সপেরিমেন্ট ছিল, যে সব বিষয় দেখার ছিল ক্লোজ ম্যাচ জিতেছি। একটা ম্যাচে টপ অর্ডার খুব ভালো শুরু এনে দিয়েছে। আজ (গতকাল) মিডল অর্ডার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছে। রিশাদ পুরো সিরিজে ভালো বোলিং করেছে। এভাবে অনেক ইতিবাচক দিকই আছে। আমরা যা যা আশা করেছিলাম, প্রায় তার কাছাকাছি যেতে পেরেছি।’

‘স্পিনাররা খুব ভালো বোলিং করেছে। রিশাদ ভালো করেছে। শেখ মেহেদীও ভালো করেছে, মাঝখানে ওকে বিরতি দিয়ে তানভীরকে দুই ম্যাচ খেলানো হয়েছে সে-ও ভালো করেছে। এ জিনিসগুলো ভালো ছিল। জাকেরের আজকের এবং মাঝখানের একটা ইনিংস ছোট ছোট বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে আমরা কাছাকাছি যেতে পেরেছি।’ পুরো সিরিজে দলীয়ভাবে বড় রান তুলতে দেখা যায়নি বাংলাদেশকে। লাল-সবুজের দলের অধিনায়ক এতে অবশ্য উইকেটের দায়ই দেখছেন। উইকেট ব্যাটিং বান্ধব না থাকায় সেভাবে রান তুলতে পারেনি বাংলাদেশ, দাবি শান্তর।

তিনি আরো বলেন, ‘উন্নতির জায়গা তো অবশ্যই আছে। খেলোয়াড়রা আত্মবিশ্বাসী। পুরো সিরিজে উইকেট ব্যাটিং বান্ধব ছিল না। ব্যাটাররা এর মধ্য দিয়েই ভালো করার চেষ্টা করেছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রত্যাশা অনুযায়ী এ সিরিজে পারফরম্যান্স হয়নি। তবে আমি আমার প্রক্রিয়া, ব্যাটিং, স্কিল উন্নতি নিয়ে কাজ করছি। প্রতি সিরিজই ভালো যাবে এমন কিছু না। এটা এরই মধ্যে অতীত, সামনে ভালো কিছু করার চিন্তা করছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close