ক্রীড়া প্রতিবেদক
হতশ্রী ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা দিলেন সৌম্য
তানজিদ হাসান তামিমের সঙ্গে দারুণ সূচনাই করলেন সৌম্য সরকার। দেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো গড়লেন শতরানের জুটি। তখন মনে হয়েছিল পুঁজিটা ২০০-এর কাছাকাছি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের। কিন্তু এরপর যা হয়েছে তা অবিশ্বাস্য। একের পর এক ব্যাটারদের আত্মাহুতিতে পুরো ২০ ওভারও খেলতে পারেনি টাইগাররা। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৫ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে এ জয়টা হতে পারতো আরো বড়। যদি ওপেনারদের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের ধারায় দায়িত্ব নিতে পারতেন পরের ব্যাটাররা। কিন্তু সেখানে ৪২ রান তুলতে ১০টি উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
এদিন তানজিদণ্ডসৌম্যের বিদায়ের পর দুই অংক স্পর্শ করতে পেরেছেন কেবল তাওহিদ হৃদয়। এরপর বাকি ব্যাটাররা যেভাবে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন তাতে মনে হয়েছে মিরপুরের উইকেটে ব্যাটিং করাটা কতোই না কঠিন। অবশ্য শেষ দিকে বল পুরোনো হয়ে যাওয়ায় ব্যাটিং করাটা কিছুটা কঠিন হয়ে গেছেও বলে মনে করেন সৌম্য। ম্যাচ শেষে এমন ব্যাটিং ধসের ব্যাখ্যায় এ ওপেনার বললেন, ‘না, দেখেন। প্রথম দিকে আমি আর (তানজিদ হাসান) তামিম যখন ব্যাট করছিলাম নতুন বলে একটু ভালো ছিল। বলটা ব্যাটে আসছিল। হঠাৎ বলটা একটু পুরোনো হওয়ায় একটু ডাবল পেস, একটু আপস অ্যান্ড ডাউন করছিল। প্রথম দিকে হয়তো সবাই একটু ভুল করেছে এটা বুঝতে ভুল করেছে।’
তবে ব্যাটাররা আরেকটু রয়েসয়ে খেলতে পারলে ভালো হতে পারতো বলে মনে করেন তিনি, ‘প্রথমে আমাদের দেখে যেমন মনে হয়েছিল উইকেট ১৭০-১৮০ এর। হঠাৎ যখন বলটা একটু পুরোনো হয়েছে। বলটা তখন একটু আপস অ্যান্ড ডাউন স্লো হচ্ছিল। এটা হয়তো সবাই একটু আর্লি গিয়ে অ্যাটাকিংয়ে চলে গেছে, এটা হয়তো মিস্টেক করেছে আমার মনে হয়েছে।’ বল পুরোনো হওয়ার পর ব্যাটিং কিছু কঠিন হয়ে গিয়েছিল বলেই মনে করেন এ ওপেনার, ‘বলটা পুরোনো হয়ে যাওয়ার পর চেঞ্জ হয়েছে। টি-টোয়েন্টি জিনিসটাই প্রতি বলে সিচুয়েশন চেঞ্জ হতে পারে। কিন্তু আমরা ছিলাম যে আমরা যেভাবে খেলছি তামিম আর আমি। পরপর দুই ওভারে আমরা আউট হইছি, সাত আট বল পর আমি আউট হয়েছি। ওই সময় গিয়ে তাওহীদ কিন্তু ওইভাবেই ব্যাটিং করেছে।’
‘আজকের শটটা হয়তো ভালো পিকআপ শটটা ছক্কা হয়নি। ওই সময়টা স্পিনাররাও যখন বল করছিল, আমার মনে হয় ওরা ভালো জায়গায় বল করেছে। আমরা হয়তো আরেকটু সোজা বলে খেললে আরেকটু ভালো হতো। ওখান থেকে কেউ যদি ১০ বা ১৫ রানের জুটি গড়ত তাহলে হয়তো শেষের দিকে গিয়ে আরেকটু ভালো হতো,’ যোগ করেন সৌম্য।
সতীর্থরা যখন সিরিজ খেলছেন, সৌম্য সরকার তখন ইনজুরির সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। সতীর্থরা যখন বিশ্বকাপের আঁটসাঁট প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, সৌম্য তখন ছুটেছেন বিসিবির (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) মেডিকেল ও ফিজিওদের কাছে হারানো ফিটনেস ফিরে পেতে। শান্ত, তানজিদ, তাওহীদরা যখন মিরপুরের সবুজ চত্বরে ফিটনেসের উন্নতিতে দৌড়ান, সৌম্য তখন একাডেমির বালুতে হাঁটাহাঁটি করেন নিজেকে ফিরে পেতে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এ পুরো বিষয়টি বর্ণনাতীত কষ্টে ভুগিয়েছে বাংলাদেশের ওপেনিং ব্যাটার সৌম্য সরকারকে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সেই কষ্টের কথাই তুলে ধরলেন এ টাইগার বাঁহাতি ওপেনার। তিনি বলছিলেন, ‘ভালো লাগছে যে মাঠে ফিরতে পেরেছি। ইনজুরড ছিলাম, ইনজুরড থাকাটা আসলে অনেক কষ্টের। সবাই খেলে, খেলতে পারি না, বাইরে থেকে দেখাটা, তারপরে যে রিহ্যাব বলেন বা অন্য যে কাজগুলো থাকে; ওগুলো একা করাটা আসলে অনেক সময় কী হয়, যে সবাই খেলছে আমি একটা আলাদা একা কাজ করছি। মনের মধ্যে একটা (কষ্ট) থাকে।’ গেল ৯ মার্চ সিলেটে সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিংয়ের সময় কাঁধে চোট পান সৌম্য, যা তাকে প্রায় দুই মাসের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে দেয়। ফলে তার খেলা হয়ে ওঠেনি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান পাঁচ ম্যাচ সিরিজের টি-টোয়েন্টির শুরু থেকে। শঙ্কার উদ্রেক হয়েছিল ১ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে গড়ানো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে না খেলা নিয়েও। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চতুর্থ ম্যাচে ফিরে সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন।
"