ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২১ এপ্রিল, ২০২৪

স্মৃতিকাতর নাফিস

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ক্রিকেটারদের ফেরা

বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক আবেগের নাম বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। এই ভেন্যুতে অনেক স্মরণীয় ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যদিও কালের বিবর্তনে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এখন আর ব্যাট বলের লড়াই হয় না। ২০০৫ সাল থেকে জনপ্রিয় এই ভেন্যুতে ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ঢুকে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বললেন জাতীয় দলের ম্যানেজার নাফিস ইকবাল ‘সবকিছু দেখি বদলে গেছে’। গতকাল সকালে চারপাশে চোখ রেখে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের সহকারী ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফীসও যেন ডুব দিলেন স্মৃতির জগতে। এই সময়ের ক্রিকেটারদের শারীরিক পারফরম্যান্স মূল্যায়নের কাজে দীর্ঘদিন পর এই মাঠে এসে অতীতে ফিরে গেলেন জাতীয় দলের দুই সাবেক ওপেনার।

প্রায় দেড় যুগ আগে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম থেকে দেশের ক্রিকেট পাড়ি জমিয়েছে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এরপর থেকে সব ধরনের ক্রিকেটীয় ব্যস্ততা মিরপুরের মাঠে। মাঝে ২০১১ বিশ্বকাপের উদ্বোধন অনুষ্ঠান অবশ্য হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। দীর্ঘদিন পর নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন কুমার দাসদের ফিটনেস মূল্যায়নে বেছে নেওয়া হয়েছে দেশের খেলাধুলার অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই মাঠটিকে।

৩৫ ক্রিকেটারের পদচারণায় গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ফিরে এলো হারিয়ে যাওয়া ক্রিকেটীয় আবহ। বর্তমান দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমের এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে জানা গেছে। সেটিও কোনো স্বীকৃত ক্রিকেটে নয়। ২০০৪ সালে ঘরোয়া একটি টুর্নামেন্ট খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। বিকেএসপির হয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেছেন মুশফিক।

লম্বা সময় পর এই মাঠে এসেই গ্যালারির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা গেল মাহমুদউল্লাহকে। আঙুল উঁচিয়ে কিছু একটা বললেন তিনি বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামকে। কাছেই থাকা নাফিস ইকবাল তখন যেন নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের সুখস্মৃতিতে ডুব দিয়েছেন।

সম্ভাবনার পূর্ণতা না পাওয়া ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরি এই মাঠেই করেছিলেন নাফিস ইকবাল। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞার সেই লড়িয়ে সেঞ্চুরির পথ ধরে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। এখন সংস্কার কাজ চলতে থাকা মাঠের ঘাস, নতুন অ্যাথলেটকস ট্র্যাক ও অন্যান্য স্থাপনা দেখে নিজের খেলোয়াড়ি সময়ের সঙ্গে মেলাতে পারছিলেন না সাবেক এই ওপেনার। শাহরিয়ার নাফীসও এই মাঠে এসে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লেন।

এই মাঠের জন্মই ক্রিকেটের জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে অবিভক্ত পাকিস্তান প্রথম টেস্ট খেলে এই মাঠেই। ১৯৫৫ সালে ভিনু মানকাডের ভারতের বিপক্ষে এখানে খেলেছিল আবদুল হাফিজ কারদারের পাকিস্তান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে এখানে সাতটি টেস্ট ম্যাচ হয়েছে। পরে ২০০০ সালে বাংলাদেশও নিজেদের প্রথম টেস্ট খেলে এখানেই। এটিই ক্রিকেট বিশ্বের একমাত্র মাঠ, যেখানে অভিষেক টেস্ট খেলেছে দুটি দেশ।

স্বাধীনতার পর এখানে ক্রিকেট ও ফুটবল চলেছে হাত ধরাধরি করেই। গ্রীষ্মকালে ফুটবল আর শীতকালে ক্রিকেট, এভাবেই বছরের পর বছর চলেছে। ফুটবলের জন্য মিরপুরে আলাদা স্টেডিয়াম গড়া হলেও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ছাড়েনি তারা। বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর যখন ক্রমেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততা বাড়তে থাকে, ক্রিকেটের আলাদা স্টেডিয়ামও জরুরি হয়ে পড়ে। ফুটবলের মিরপুর স্টেডিয়ামকেই তখন নতুনভাবে সংস্কার করে গড়ে তোলা হয় ক্রিকেটের জন্য। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম থেকে পাকাপাকিভাবে পাততাড়ি গোটায় ক্রিকেট।

২০০৫ সালের ৩১ জানুয়ারির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়নি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের জমকালো উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় দেশের এই ক্রীড়াকেন্দ্রে। এরপর শনিবারের আগে আর কোনো ক্রিকেটীয় ব্যস্ততা দেখা যায়নি এই মাঠে। বর্তমান জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারই তাই এবারই প্রথম ক্রিকেটীয় প্রয়োজনে এলেন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে।

তীব্র গরমে ক্লান্তিকর ফিটনেস পরীক্ষার মাঝেও তাই ইতিহাসের অংশ এই মাঠে আসার রোমাঞ্চ ছুঁয়ে গেছে ক্রিকেটারদের। দৌড়ঝাঁপ শেষে অবসন্ন শরীরেই তরুণ এক পেসার বলছিলেন, ‘এই মাঠের কথা কত শুনেছি। কত ইতিহাস এখানে! আজকে এলাম। সত্যিই অন্যরকম অনুভূতি।

নাফিসে বলেন, যারা একদম নতুন, তারা এই মাঠে খেলেনি। তবে সব সময় এই মাঠের কথা শুনেছে। এখন তো জাতীয় দলে এমন খেলোয়াড়ও আছে, যার জন্ম ২০০০ সালের কাছাকাছি সময়ে। তারা খুবই রোমাঞ্চিত। শুধু ক্রিকেটার নয়, আপনারাও হয়তো খুব রোমাঞ্চ অনুভব করেছেন। সাধারণত ভোর ৬টায় ফিটনেস টেস্ট দেখতে এত মানুষ আসার কথা না। আমি নিশ্চিত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দেখেই এসেছেন। সবার জন্য এটা দারুণ একটা অভিজ্ঞতা ছিল।

ক্রিকেটারদের জন্য অবশ্য রোমাঞ্চের পাশাপাশি অভিজ্ঞতা বেশ কঠিনই ছিল। হালকা গা-গরমের পরই শুরু হয়ে যায় তাদের শারীরিক মূল্যায়নের পরীক্ষা। প্রথমে দুই দফায় ৪০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নেন ক্রিকেটাররা। জাতীয় দলে সদ্য যোগ দেওয়া স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ ন্যাথান কিলির সঙ্গে বিসিবির দুই ট্রেনার মীর ইফতি খায়রুল ইসলাম ও তুষার কান্তি হাওলাদার কাছ থেকে তাদের পর্যবেক্ষণ করেন। প্রয়োজনীয় তথ্য খাতায় টুকে রাখেন।

এরপর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে ১ হাজার ৬০০ মিটার দৌড়। দৌড় শুরুর আগে খুনসুটি করে সেরা দৌড়বিদের জন্য স্বর্ণ পদকের আবদার করে বসেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।

সত্যিই সেই ব্যবস্থা থাকলে স্বর্ণ পদক পেতেন তানজিম হাসান ও নাহিদ রানা। দৌড় শেষ করে বিশ্বের দ্রুততম মানব উসাইন বোল্টের মতোই উদযাপন করেন নাহিদ। তবে এই দৌড়ে যে উত্তীর্ণ-অনুত্তীর্ণ বা প্রথমণ্ডদ্বিতীয় বলতে কিছু নেই, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে সেটিও মনে করিয়ে দেন ট্রেনার ইফতি।

মূলত টানা খেলার মধ্যে থাকায় জাতীয় দল ও আশপাশে থাকা ক্রিকেটারদের ফিটনেসের সবশেষ অবস্থা বোঝার জন্য এই মূল্যায়ন করতে চেয়েছিলেন জাতীয় দলের নতুন অস্ট্রেলিয়ান ট্রেনার কিলি। ৩৫ ক্রিকেটার অংশ নেন এ দিন। চোটের কারণে ছিলেন না সৌম্য সরকার ও তাইজুল ইসলাম। আইপিএলে ব্যস্ত মুস্তাফিজুর রহমান ও টানা খেলার ধকলের কারণে তাসকিন আহমেদ আসেননি এদিন। সাধারণত মিরপুর স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসেই ক্রিকেটারদের ফিটনেসের নানান পরীক্ষা করা হয়। তবে এবার কিলির পরামর্শই বেছে নেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাককে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close