ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২০ এপ্রিল, ২০২৪

নাসুম-ঘূর্ণিতে জিতল মোহামেডান

প্রথম ২ ওভারে নাসুম আহমেদ নিলেন ২ উইকেট। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে তিনি ভেঙে দিলেন প্রতিপক্ষের সবচেয়ে বড় জুটি। শেষ নয় সেখানেই। পরে শিকার ধরলেন আরো দুটি। পাঁচ উইকেটের ক্ষুধা মেটালেন তিনি পাঁচ বছর অপেক্ষার পর। তার বাঁহাতি স্পিনে সাজিয়ে দেওয়া মঞ্চ পরে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে রাঙালেন ইমরুল কায়েস। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্রাথমিক পর্বের শেষ দিনে ১০ ওভারে ২২ রানে ৫ উইকেট নেন নাসুম। পরে ইমরুলের ঝোড়ো অপরাজিত ইনিংসে ৫ উইকেটের জয় পায় মোহামেডান। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার ১৩৬ রানের লক্ষ্য ২৩.২ ওভারে ছুঁয়ে ফেলে তারা। ছোট্ট রান তাড়ায় ইমরুল একাই করেন ৭১ বলে অপরাজিত ৯২।

মোহামেডানের জয়ে আলাদা করে বলতে হবে মেহেদী হাসান মিরাজের কথাও। এই অফ স্পিনার নিয়েছেন তিন উইকেট। তবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্বিতীয়বার পাঁচ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা নাসুমই। খেলা শেষে তিনি বলেছেন, তীব্র তাড়না নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন এই দিনের। অনেক দিন ধরে উইকেটের একটা ক্ষুধা নিয়ে ছিলাম। দু-একটা করে উইকেট পেতাম, প্রথম চার ম্যাচে মনে হয় দুইটা উইকেট পেয়েছি। বোলিংয়ের তালিকা যখন দেখতাম, একদম তলানিতে আছি... তো অনেক বেশি ক্ষুধার্ত ছিলাম আমি যে, একটা ম্যাচে ভালো করব। এই সংস্করণে তার আগের ৫ উইকেট ছিল ২০১৯ প্রিমিয়ার লিগে। সেবার ব্রাদার্সের বিপক্ষেই ৪৯ রানে ৫ উইকেট নেন এই বাঁহাতি স্পিনার। মাঝের পাঁচ বছরে ৫৬ ইনিংসে দুবার চার উইকেট পেয়েছেন। অবশেষে পাঁচ উইকেটের ভুলতে বসা স্বাদ পেলেন আবার। লিগে এখন পর্যন্ত ১১ ইনিংসে নাসুমের শিকার ১৮ উইকেট।

টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নামা মোহামেডানকে দ্রুতই সাফল্য এনে দেন আবু হায়দার। প্রথম ওভারে আবদুল মজিদকে ফেরান দারুণ ফর্মে থাকা এই বাঁহাতি পেসার। পরের ওভারে নাসুমের শিকার রহমতউল্লাহ আলি। বাঁহাতি এ স্পিনারের দ্বিতীয় ওভারে ফেরেন অভিজ্ঞ ইমতিয়াজ হোসেন। স্লিপে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ দুটি ক্যাচ নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ব্রাদার্সের শুরুর সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন জাকিরুল ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান। জাকিরুল ২৫ রানে ফিরলে জোট বাঁধেন মাহমুদুল ও রাহাতুল ফেরদৌস। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে নাসুম ভাঙেন ৫৩ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি। ৪৫ রান করে ফেরেন মাহমুদুল। রাহাতুল আরো কিছুক্ষণ এগিয়ে নেন ব্রাদার্সকে। তাকেও ৪৫ রানে থামান নাসুম। অন্য প্রান্তে মিরাজ জোড়া আঘাত করলে দেড়শর আগেই গুটিয়ে যায় ব্রাদার্স।

রান তাড়ায় শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন ইমরুল। অন্য প্রান্তে রনি তালুকদার যেন দর্শক বনে যান। ৬৬ রানের উদ্বোধন জুটিতে রনির অবদান স্রেফ ১০ রান। এরপর ১ রান করে ফেরেন মাহিদুল ইসলাম। প্রথম সাত ম্যাচে ছয়টি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলা তরুণ কিপার-ব্যাটসম্যান সবশেষ চার ম্যাচেই ব্যর্থ হরেন দুই অঙ্ক ছুঁতে।

লক্ষ্য কঠিন না হলেও রুবেল মিয়া, মাহমুদউল্লাহ, আরিফুল হকরা বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। প্রাথমিক পর্বের আট ম্যাচে এক ফিফটিতে মাহমুদউল্লাহর সংগ্রহ মাত্র ১৫৭ রান। তবে মোহামেডানকে বেগ পেতে হয়নি জিততে। মিরাজকে নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন ইমরুল। ৩৬ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর একই ছন্দে এগোতে থাকেন মোহামেডান অধিনায়ক। রহমতউল্লাহর বলে ছক্কায় দলের জয় নিশ্চিত করেন তিনি। প্রাথমিক পর্বে ৮ জয়ে ১৬ পয়েন্ট মোহামেডানের ঝুলিতে। নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগ শুরু করবে মোহামেডান। সমান ম্যাচে তিন জয়ে অবনমন অঞ্চল এড়াতে পেরেছে ব্রাদার্স।

এদিকে নিজের লক্ষ্য নিয়ে বাঁহাতি এই স্পিনার বলেন, ‘অনেক দিন ধরে একটা ক্ষুধা নিয়ে ছিলাম। উইকেটের ক্ষুধা নিয়ে ছিলাম। এক-দুইটা করে পেতাম কিন্তু প্রথম চার ম্যাচে মনে হয় আমি দুইটা করে উইকেটে পেয়েছি। বোলারদের তালিকা যখন দেখতাম, একদম তলানিতে আছি তো অনেক বেশি ক্ষুধার্ত ছিলাম আমি যে একটা ম্যাচ ক্লিক করব ইনশাআল্লাহ।’ বল হাতে ১৮ উইকেট নিলেও নাসুমের উইকেট নেওয়ার ক্ষুধা এখনো কমেনি। এমনকি বল হাতে সেরা ছন্দে ফিরেছেন কি না সেটাও বাকি ম্যাচগুলোয় যাচাই করে দেখতে চান নাসুম। বিশেষ করে রান দেওয়ার ক্ষেত্রে আরো কৃপণ হতে চান তিনি।

নাসুম বলেন, ‘এখনো ছন্দে ফিরে এসেছি কি না, বুঝতে পারছি না। পাঁচটা ম্যাচ আছে। আমি সব সময় যা চেষ্টা করি, সেটাই চালিয়ে যাচ্ছি। ডট বল করা, যত কম রান দেওয়া যায়। পাওয়ারপ্লেতে ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে আমি চ্যালেঞ্জ নিতে চাই। একটা জায়গায় বল করতে চাই, যতটুকু আটকানো যায়।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ব্রাদার্স ইউনিয়ন

৩৪.৩ ওভারে ১৩৫/১০

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব

২৩.২ ওভারে ১৪০/৫

ফল : মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৫ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ

নাসুম আহমেদ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close