ক্রীড়া ডেস্ক

  ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

হেরেও আক্ষেপ নেই গার্দিওলার

রিয়ালের রয়্যালটিতে সিটির স্বপ্নের সমাধি

নির্ধারিত ৯০ মিনিটে আলাদা করা গেল না দুই ক্লাবকে। অতিরিক্ত ৩০ মিনিট শেষেও থাকল সমতা। ম্যানচেস্টার সিটির আক্রমণের তীব্র ঝাপটা সামলে লড়াইয়ে টিকে রইল রিয়াল মাদ্রিদ। অবধারিতভাবে তাই রোমাঞ্চকর ম্যাচ গড়াল পেনাল্টি শুটআউটে। সেখানে দুটি শট সেভ করে নায়ক বনে গেলেন গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিন। শিরোপাধারীদের ছিটকে দিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে উঠল আসরের রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা। গত বুধবার রাতে সিটির মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের খেলা ১-১ গোলে শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জিতেছে রিয়াল। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গত সপ্তাহে দুই পরাশক্তির প্রথম লেগের ম্যাচ ড্র হয়েছিল ৩-৩ গোলে।

এদিকে শিরোপা ধরে রাখার আশা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সিটিজেনদের কোচ পেপ গার্দিওলা বললেন, জেতার জন্য তারা সম্ভাব্য সবকিছুই করেছেন। কিন্তু সেটাও যথেষ্ট হয়নি। ম্যাচের উল্লেখযোগ্য সব পরিসংখ্যানে অনেক ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও পারল না ম্যানচেস্টার সিটি। রোমাঞ্চকর দ্বৈরথে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে টাইব্রেকারে হেরে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিতে হলো তাদের। শিরোপা ধরে রাখার আশা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সিটিজেনদের কোচ পেপ গার্দিওলা বললেন, জেতার জন্য তারা সম্ভাব্য সবকিছুই করেছেন। কিন্তু সেটাও যথেষ্ট হয়নি।

টাইব্রেকারের আগে ১২০ মিনিটের প্রায় পুরোটা সময় আধিপত্য ছিল স্বাগতিকদের। ম্যাচের ৬৮ শতাংশ সময় বল দখলে রাখে তারা। গোলমুখে তাদের নেওয়া ৩৩টি শটের ৯টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, রিয়াল গোলমুখে আটটি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারে তিনটি। এমনকি সিটির ১৮টি কর্নারের বিপরীতে সফরকারী আদায় করতে পারে স্রেফ একটি কর্নার। সিটির আক্রমণের ঝড় অবশ্য বারবার গিয়ে থমকে যায় রক্ষণাত্মক কৌশল বেছে নেওয়া রিয়ালের জমাট দেয়ালে। এরপর পেনাল্টি শুটআউটে নায়কে পরিণত হয় আন্দ্রি লুনিন। রিয়ালের ইউক্রেনিয়ান গোলরক্ষক আটকে দেন বার্নার্দো সিলভা ও মাতেও কোভাচিচের শট।

নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দেওয়া সত্ত্বেও রিয়ালকে হারানোর জন্য সেই সর্বাত্মক প্রচেষ্টা পর্যাপ্ত ছিল না বলে মনে করেন গার্দিওলা। ম্যাচের পর প্রতিপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদকে অভিনন্দন। তারা অনেক নিচে নেমে অসাধারণ সংহতি দেখিয়ে রক্ষণ সামলেছে। আর আমরা সবকিছুই করেছি। যা করেছি তা নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। রিয়াল মাদ্রিদকে হারাতে আমাদের সেরা পারফর্ম করতে হতো। আমরা সেরাটা খেলেছি। তবে তা যথেষ্ট হয়নি।’ শিষ্যদের তাদের পারফরম্যান্সের জন্য ধন্যবাদ জানান ম্যানসিটির কোচ। হার মেনে নেওয়ার বার্তাও দেন তিনি, ‘সব বিভাগেই আমরা দুর্দান্ত খেলেছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা জিততে পারিনি। এটা মেনে নিতে হবে। আমার দায়িত্ব হলো আমার খেলোয়াড়রা যেভাবে খেলেছে সেটার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানানো। কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই ফলাফলের ওপর নির্ভর করে। রিয়াল সেমিফাইনালে খেলবে, আমরা থাকব না। তবে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ও দায়বদ্ধতা ছিল অসাধারণ।’ গার্দিওলার মতে, ম্যাচ টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়াতে দেওয়াই উচিত হয়নি, ‘পেনাল্টি শুটআউটে আপনি কখনো কখনো জিতবেন, আবার কখনো কখনো জিতবেন না। আমরা যেভাবে খেলেছি, আমাদের আরো আগেই ফলাফল নির্ধারণ করে ফেলা উচিত ছিল। যে সুযোগগুলো পেয়েছি, সেগুলো আমরা কাজে লাগাতে পারিনি।’ গত মৌসুমে এই মাঠেই সেমিফাইনালের ফিরতি লেগে রিয়ালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে ফাইনালে ওঠার পর প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার স্বাদ নিয়েছিল ম্যানসিটি। এবার তাদের শিরোপা ধরে রাখার অভিযানের ইতি ঘটল শেষ আটেই। সঙ্গে ধূলিসাৎ হয়ে গেল তাদের টানা দ্বিতীয়বারের মতো ট্রেবল জয়ের স্বপ্নও।

অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদকে সাধারণত এমন খেলতে দেখা যায় না। এক গোলে এগিয়ে গিয়ে বাকিটা সময় প্রবল রক্ষণ প্রতিরোধ গড়ে ম্যাচ বের করার ধরনও নয় স্প্যানিশ জায়ান্টদের। তবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার সিটির মাঠে গিয়ে জয় তুলতে এই কৌশলই নেন কার্লো আনচেলেত্তি। অ্যান্তোনিও রুডিগার, নাচো, মেন্ডি, কারবাহালরা দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে কোচের কৌশলের সফল বাস্তবায়ন করে দেন। সিটিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে পৌঁছে তাই এই কারণে ভীষণ গর্বিত রিয়াল কোচ।

ম্যাচ শেষে প্রতিক্রিয়া দিতে এসে আনচেলেত্তি শুরুতেই প্রশংসায় ভাসান নিজেদের রক্ষণের, ‘খুশি, কঠিন ম্যাচ ছিল। আমরা জানতাম ভুগতে হবে, আমরা ভুগেছি। অবশ্যই কঠিন ম্যাচ। কিন্তু জিততে পারা...আমরা দারুণ অভিপ্রায় দেখিয়েছি, দারুণ মনোভাব প্রদর্শন করেছি। অসাধারণভাবে রক্ষণ সামলেছি।’ পুরো ম্যাচে আক্রমণে প্রবল প্রাধান্য ছিল স্বাগতিক সিটির। ৬৭ শতাংশ বল দখলে রেখে গোলের জন্য ৩৩ শটের ৯টা লক্ষ্য রাখে তারা। রিয়াল কেবল ৮ শটের ৩টা লক্ষ্যে রেখেছিল। ১২ মিনিটে রদ্রিগোর গোল ধরে রক্ষণ প্রাচীর গড়ে তোলে রিয়াল। একের পর এক আক্রমণের তোড় থেকে ৭৬ মিনিটে সিটির হয়ে সমতা আনেন কেভিন ডি ব্রুইনা। এরপর আবার জমাট রক্ষণে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়ে গিয়ে সাফল্য আনে ইউরোপের সফলতম ক্লাব। রক্ষণ বিভাগকে নিয়ে তাই ভীষণ গর্ব হচ্ছে আনচেলেত্তির, ‘আমি অবশ্যই ভীষণ গর্বিত কারণ এমন রক্ষণ করতে আমরা অভ্যস্ত নই। আমরা ফোকাস রেখেছি, মনোযোগ সরাইনি, রক্ষণ ভালো করেছি এই দিক থেকে আমরা খুব ভালো ছিলাম। অবশ্যই আমরা আরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খেলতে পারতাম। কিন্তু সিটির বিপক্ষে কাজটা সহজ ছিল না, তারা এখনো ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন।’

সেমিফাইনালে মুখোমুখি

বরুশিয়া ডর্টমুন্ড-পিএসজি

বায়ার্ন মিউনিখ-রিয়াল মাদ্রিদ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close