প্রথম লেগে গোল তো দূরের কথা, একটি অন-টার্গেট শটও নিতে পারেননি কিলিয়ান এমবাপ্পে। সেই ব্যর্থতার ষোলো আনাই পুষিয়ে দিয়েছেন দ্বিতীয় লেগে। করেছেন জোড়া গোল। তাতে বার্সেলোনাকে তাদের ঘরের মাঠে উড়িয়ে দিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট কেটেছে পিএসজি। গত মঙ্গলবার রাতে অলিম্পিক স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে বার্সেলোনাকে ৪-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে পিএসজি। পার্ক দে প্রিন্সেসে প্রথম লেগের ম্যাচে ৩-২ গোলের ব্যবধানে জিতেছিল বার্সেলোনা। দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৪ ব্যবধানের অগ্রগামিতায় সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে লিগা ওয়ান চ্যাম্পিয়নরা। প্রথমবারের মতো প্রথম লেগে হেরে অগ্রগামী হলো দলটি।

মূলত একটি লাল কার্ডই ম্যাচের চিত্র বদলে দেয়। অন্যথায় প্রথম আধা ঘণ্টায় দাপট দেখায় স্বাগতিকরাই। এ সময়ে এক গোলের ব্যবধানে এগিয়েও ছিল তারা। কিন্তু ম্যাচের এক তৃতীয়াংশ না যেতেই রনালদ আরাহো যখন লাল কার্ড দেখলেন, তখনই যেন হাল ছেড়ে দেয় বার্সেলোনা। ম্যাচের লাগাম পুরোপুরি চলে যায় পিএসজির হাতে। এরপর দারুণ সব আক্রমণে চারটি গোল আদায় করে নেয় তারা। এদিন জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না পিএসজির। টাইব্রেকার এড়িয়ে সরাসরি সেমিফাইনাল খেলতে হলে জিততে হতো দুই গোলের ব্যবধানে। অন্যদিকে কেবল হার এড়িয়ে ড্র করলেই চলত বার্সেলোনার। কিন্তু পিএসজির কাছে বড় ব্যবধানেই হারে তারা। অনায়াসেই বার্সেলোনার মাঠে দাপুটে জয় তুলে সেমিফাইনালের টিকিট কাটল লুইস এনরিকের দল।

এদিকে ১০ জনের দলে পরিণত হওয়ার পর ছন্নছাড়া হয়ে যায় বার্সা। দাপট দেখিয়ে খেলায় ফিরে পিএসজি এগিয়ে যায়। ম্যাচের এক পর্যায়ে বোতলে লাথি দিয়ে রেফারিকে কিছু একটা বলে লাল কার্ড দেখেন জাভি নিজেও। লাল কার্ড পান বার্সার এক সাপোর্ট স্টাফ। ক্ষুব্ধ বার্সেলোনা কোচ তাই রাখঢাক না রেখেই কড়া ভাষায় করলেন রেফারির সমালোচনা, ‘গোটা মৌসুমের পরিশ্রম রেফারির সিদ্ধান্তে শেষ হয়ে গেল, এটা লজ্জার। রেফারি খুব খারাপ ছিলেন। আমি তাকে বলেছিলাম, তিনি খেলা বুঝেন না। লাল কার্ড দেওয়াটা ছিল বাড়াবাড়ি।’

গত সপ্তাহে পিএসজির মাঠে ৩-২ গোলে জিতেছিল বার্সেলোনা। প্রথম লেগ জিতে ঘরের মাঠে কখনো না হারার রেকর্ড তাদের দিচ্ছিল ভরসা। তবে ভিন্ন এক গল্প লিখেছে পিএসজি। প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে ৪-১ ব্যবধানে জিতে

৬-৪ অগ্রগামিতায় পৌঁছে গেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে। নিজেদের খারাপ খেলার চেয়েও জাভি এই হার রেফারির সিদ্ধান্তের কারণে মানতে পারছেন না।

অন্যদিকে ঘরের মাঠে প্রথম লেগ হেরে সেমিফাইনালের দৌড়ে অনেক পিছিয়ে ছিল পিএসজি। প্রতিপক্ষ বার্সেলোনার মাঠে গিয়ে তারা বড় জয় পাবে বলে বিশ্বাসীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। মানুষের বিশ্বাস না থাকলেও নিজেদের ওপর আস্থা ছিল এমবাপ্পেদের। সেই আত্মবিশ্বাসের তোড়েই বার্সাকে উড়িয়ে সেমিতে পা রেখেছে পিএসজি। এমন অর্জনের পর জোড়া গোল করে নায়ক হওয়া এমবাপ্পে বলছেন, এটা তাদের জন্য গর্বের রাত।

প্রথম লেগে ৩-২ গোলে বার্সেলোনার কাছে হেরেছিল পিএসজি। সেই ম্যাচে বিবর্ণ ছিলেন এমবাপ্পে। গা ঝাড়া দিয়ে দ্বিতীয় লেগে তাকে পাওয়া যায় সেরা ছন্দে। তার পা থেকে আসে দুই গোল। অথচ এদিনও শুরুতে গোল করে ব্যবধান আরো বাড়িয়ে নেয় বার্সা। ১২ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান তারকা রাফিনহা করেন গোল। ২৯ মিনিটে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন বার্সা ডিফেন্ডার রোনাল্ড আরাহু। বাকি ম্যাচ ১০ জন নিয়ে খেলতে হয় তাদের। পরে লাল কার্ড পান তাদের কোচ জাভি হার্নান্দেজ ও এক সাপোর্ট স্টাফ। এমন অবস্থায় প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে জিতে যায় পিএসজি। ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এমবাপ্পে বলেন, তার স্বপ্ন শিরোপা জয়- ‘প্যারিসের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার স্বপ্ন আমার আছে।’ চলতি মৌসুম শেষে এমবাপ্পে পিএসজি ছেড়ে যাচ্ছেন বলে আগেই জানা। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিতে যাওয়ার পর এই ফরোয়ার্ড ক্লাবটির হয়ে খেলার গর্বের কথা জানালেন বড় করে, ‘পিএসজির হয়ে প্রথম দিন থেকে আমি গর্বিত। শুধু ভালো সময়ে নয়, খারাপ সময়েও আমার গৌরব বহাল ছিল। এই গর্ব এই ক্লাবের হয়ে খেলার জন্য, আমার দেশের রাজধানী শহরকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। এটা আমার জন্য বিশেষ, কারণ আমি এখানে (প্যারিস শহরে) বড় হয়েছি।’

‘প্যারিসিয়ান হিসেবে এ রকম রাতের অভিজ্ঞতা দারুণ। ওয়েম্বলির ফাইনালে যেতে আমাদের আরো এক ধাপ বাকি। কাজেই আমাদের শান্ত থাকতে হবে।’ এদিন হেরে গেলেও ক্লাব নিয়ে গর্বিত হতেন এমবাপ্পে। জিতে যাওয়ায় গর্বটা দ্বিগুণ। আর এমন উৎসবমাখা রাত ভক্ত-সমর্থকদের উৎসর্গ করেছেন তিনি, ‘আজ রাতে আমরা দুর্দান্ত দল ছিলাম। যদি আমরা হেরেও যেতাম, তবু প্যারিসিয়ান হিসেবে গর্বিত হতাম। এমন ফল হওয়ার পর গর্বটা আরো বেশি।’ ‘আমরা খুব খুশি। আমরা এমন একটা দলকে হারিয়েছি, যাদের তীব্রভাবে হারাতে চেয়েছি ফাইনালের কাছে যেতে। এই জয় ভক্তদের জন্য, যারা এখানে এসে সমর্থন করেছেন, যারা ঘরে আছেন। এটা আমাদের জন্য গর্বিত হওয়ার রাত।’

"