মো. জাহিদুল ইসলাম
বিপিএল ফাইনালের টিকিটে রমরমা কালোবাজারি
‘কাউন্টারে সাইনবোর্ড ঝোলানো “টিকিট নেই”, কিন্তু বাইরে ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে’- একরাশ হতাশা নিয়ে বলল স্কুলপড়ুয়া ছাত্র সিফাত সিকদার। তারা পাঁচ বন্ধু এসেছিল বিপিএলের ফাইনাল দেখতে। কিন্তু টিকিট না থাকায় অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তাদের মাঠে প্রবেশ করা।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের এক নম্বর গেটে টিকিট কাউন্টারে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়- ‘বিপিএল ফাইনালের টিকিট ইনডোর স্টেডিয়ামে পাওয়া যাবে।’ কাউন্টারের আশপাশে হাঁটতে দেখে এক ব্যক্তি ৩০০ টাকা মূল্যের ইস্টার্ন গ্যালারির টিকিট বিক্রি করতে চাইলেন ১ হাজার ২০০ টাকায়।
এত টাকা খরচ করার সাধ্য নেই, তাই মুখ কালো করে এদিক-সেদিক হাঁটতে লাগলেন সিফাত ও তার বন্ধুরা। স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই এই পাঁচ বন্ধুর মতো হাজারো মানুষের ভিড় ছিল।
ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও ফরচুন বরিশালের লড়াই শুরুর আগে স্টেডিয়াম এলাকার চিত্র ছিল এমনই। কেউ অনেক অপেক্ষার পর পেয়েছেন টিকিট, কেউ টিকিটের জন্য ঘুরেছেন হন্যে হয়ে। কালোবাজারির অভিযোগ প্রায় সবার মুখে মুখে। মাঠের চারপাশে ঘুরে সেসবের সত্যতাও মিলেছে।
মিরপুরে পরিবার নিয়ে খেলার দেখার আশায় স্টেডিয়ামে আসা রবিউল ইসলাম ক্ষোভ ঝারলেন টিকিট বিড়ম্বনায়। বলেন, ‘সেই ছাত্রজীবন থেকে বহু ম্যাচ দেখেছি এই মাঠে বসে। টিকিট নিয়ে সমস্যা আগেও হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই ব্যবস্থা করতে পেরেছি। এবার কোথাও টিকিট পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে, বাসায় টিভিতেই খেলা দেখতে হবে।’
রবিউলের মতো টিকিটপ্রত্যাশী মানুষের ভিড় ছিল স্টেডিয়ামের বিভিন্ন গেটে। সকাল থেকেই দেখা যায় দর্শক সমাগম। তাদের অনেকের টিকিট থাকলেও টিকিটপ্রত্যাশী দর্শকই যেন বেশি ছিল এলাকা জুড়ে।
গভীর রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট না পাওয়ার ঘটনা ঘটে শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামের বুথে। সে কথাই বলছিলেন মিরপুর ৬ এলাকার বাসিন্দা আলিম হোসেন।
‘রাত ৩টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাইনে ছিলাম। তবু টিকিট পেলাম না। কয়েকবার মারামারি লেগে গিয়েছিল লাইনে। ভয়েই ছিলাম। শেষ পর্যন্ত আর ধৈর্যে কুলায়নি। তাই বাসায় চলে গিয়েছিলাম। এখন দেখা যাক, অন্য কোনো ব্যবস্থা হয় কি না।’
আলিমের মতো টিকিটপ্রত্যাশীদের জন্য এই ‘অন্য ব্যবস্থা’ মূলত কালোবাজারিদের কাছ থেকে কেনা। ইনডোর কিংবা শেরেবাংলার বিভিন্ন গেটের সামনে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য দেখা গেছে প্রকাশ্যেই। ৩০০ টাকার টিকিট ১২০০, ৮০০ টাকার টিকিট ৩ হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়।
টিকিটের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে আমতাণ্ডআমতা করতে নাম না-জানা ওই ব্যক্তি বলেন, ‘কাউন্টার থেকে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে পেয়েছি টিকিট।’ পরে আবার বলেন, ‘টিকিট কীভাবে পেয়েছি, সেই তথ্য দেওয়া যাবে না।’
কালোবাজারিদের নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে স্টেডিয়ামের এক নম্বর গেটের কাছে। টিকিট ভাগাভাগি নিয়ে শুরুতে কথা কাটাকাটি, পরে হাতাহাতি শুরু করেন দুজন। পরে পুলিশ এসে তাদের উত্তমণ্ডমধ্যম দিয়ে স্টেডিয়াম এলাকা থেকে বিদায় করেন।
শুধু কালোবাজারি নয়, অনলাইনে পেমেন্ট করে টিকিট নিশ্চিত করার পরও কাউন্টার থেকে সেটি সংগ্রহ করতে না পারার অভিযোগও মিলেছে কয়েকজনের কাছ থেকে। দুপুরের পর ইনডোর স্টেডিয়ামের বুথে অনলাইনে কাটা টিকিট দেওয়া হয়েছে কিছু। কিন্তু ভিড় ঠেলে নিজের টিকিট সংগ্রহ করতে না পেরে হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অনেককে।
অনলাইনে টিকিট কেটে সেটি সংগ্রহ করতে না পারার অভিযোগ ছিল প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচেও। ফাইনালেও যেন বদলায়নি সেই চিত্র। অনলাইনে টিকিট কেটেও যদি সেই টিকিট কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করার ঝামেলা পোহাতে হয়, তাহলে এই অনলাইনে করে লাভ কী, এই প্রশ্ন তুলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
"