ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজ

বৃষ্টিতে ভেসে গেল দ্বিতীয় দিন

মিরপুর শেরেবাংলার আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরছে অবিরত। কখনো হালকা আবার কখনো ঝুম; বন্ধ হয়নি মিনিটখানেকের জন্যও। আগের দিন যে উইকেট ঢাকা হয়েছে কাভারে, সেটা সরানোর প্রয়োজন কিংবা পরিস্থিতি হয়নি একবাও। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির পেটে চলে যায় ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন। বৃষ্টির প্রকোপ বাড়তে থাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দিনের খেলার ইতি ঘোষণা করেন ম্যাচ অফিসিয়ালরা। এর আগে একবার মাঠ পর্যবেক্ষণে নামেন তারা। এরপর আর নামতে হয়নি; বৃষ্টিই বার্তা দিয়ে দিয়েছে খেলার দিন নয়!

এমন বৃষ্টিস্নাত দিনে ব্যাট-বল দূরে রেখে আড্ডা আর খোশগল্পে মেতেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। সবকিছুর মাঝে ব্যতিক্রম থাকে, এখানেও ছিল। শুধু খোশগল্পে দিনটি অপচয় করতে চাননি অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও একাদশে না থাকা সাদমান ইসলাম। দুজনে ইনডোরে নিজেদের ঝালিয়ে নেন বেশকিছুক্ষণ ধরে। মুশফিক-সাদমান অনুশীলন করলেও শান্তরা ছিলেন ড্রেসিংরুমে। কারো হাতে ধোঁয়া ওঠা কফির মগ, কারো সামনে ফলের বাটি। এসব নিয়ে নিজেদের মধ্যে গল্পে শান্তরা দিন পার করেন। বৃষ্টি হলেও কিছুসংখ্যক দর্শক এসেছিলেন মাঠে। শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে বেশ সরব। কিন্তু বৃষ্টির অবিরাম ঝরায় শেষ পর্যন্ত তাদের আশাহত হতে হয়েছে। আশাহত হয়েছেন তামিম ইকবালও। দ্বিতীয় দিনও আসেন ধারাভাষ্য দিতে। কিন্তু বৃষ্টি আর তা হতে দিল কই। প্রথম দিন বাংলাদেশ টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ১৭২ রানে অলআউট হয়। জবাবে প্রথম ইনিংস খেলতে নেমে আরো বিপাকে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ৫৫ রান তুলতে কিউইরা হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট। বাংলাদেশ শিবিরে ফিরে স্বস্তি। প্রথম দিন ১৫ উইকেট পড়ায় প্রশ্ন ওঠে- এ টেস্ট কয়দিন গড়াবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি হয়ে আসা মেহেদী হাসান মিরাজকেও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। বৃষ্টি এসে যেন মুখ রক্ষা হলো, এখন এটি গড়াতে পারে চতুর্থ দিন কিংবা পঞ্চম দিন পর্যন্ত!

এদিকে মিরপুরে প্রথম দিনে এত বেশি উইকেট আগে কখনো পড়েনি। তবে আউট হওয়া ব্যাটসম্যানের সংখ্যার কারণেই শুধু নয়। পিচ নিয়ে এত প্রশ্ন উঠছে এটির আচরণের কারণেই। প্রথম দিন প্রথম সেশন থেকেই মনে হয়েছে যেন পঞ্চম দিনের পিচ। নতুন বলে টিম সাউদি বেশ সুইং আদায় করেন, তারপরও দ্রুত নিজেকে সরিয়ে নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। আরেক প্রান্তে দীর্ঘদেহী পেসার কাইল জেমিসনকেও বেশিক্ষণ বোলিং করানো হয়নি। ম্যাচের ষষ্ঠ ও সপ্তম ওভার থেকেই দুই প্রান্তে স্পিন আক্রমণে আনা হয় এবং দিনজুড়েই দেখা যায় দুই দলের স্পিনারদের দাপট।

স্পিনারদের প্রথম ওভার থেকেই বল বিশাল বাঁক নিয়েছে। কোনো কোনো বল আবার পিচ করে সোজা গেছে। কোনোটি লাফিয়ে উঠেছে বিপজ্জনকভাবে। অসম বাউন্স ছিল দিনজুড়েই। সব মিলিয়ে প্রথম দিনের উইকেট হিসেবে এটাকে ব্যাটসম্যানদের দুঃস্বপ্নই বলা যায়। তবে এমন উইকেটের পেছনে আছে দলের জয়ের স্বপ্ন। সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের জয়টা অনেকের কাছেই ছিল অভাবনীয়। এগিয়ে যাওয়ার পর সিরিজ জয়ের সুযোগটা লুফে নিতে চেয়েছে বাংলাদেশ। এ ভাবনায় অন্যায্য কিছু দেখেন না মিরাজ। আমরা যখন দেশের বাইরে খেলতে যাই, প্রতিটি দলই কিন্তু ঘরের মাঠের সুবিধা নিতে চায়। আমরাও ঘরের মাঠের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছি। যেহেতু টেস্ট ক্রিকেট, যেহেতু আমরা এগিয়ে আছি (সিরিজে), এখানে জিততে পারলে পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে থাকব। এটা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা। দুটি ম্যাচই জিতলে আমাদের অবস্থান অনেক ওপরে চলে যাবে। যতটুকু বাড়তি সুবিধা নেওয়া যায়, অবশ্যই নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

ব্যাটসম্যানরা অবশ্যই এসব উইকেটে অনেক ভোগান্তিতে পড়ে। তবে এটা অবশ্যই টিম ম্যানেজমেন্টের একটা পরিকল্পনা। যেহেতু আমরা ওপরে আছে, টপে আছি, অবশ্যই বাড়তি সুবিধাটা আমরা নিতে চাইব। চান্দিকা হাথুরুসিংহে যখন আগের দফায় বাংলাদেশের কোচ ছিলেন, তখন প্রতিপক্ষ বুঝে দেশের মাঠে নিয়মিতই এ কৌশল বেছে নিত বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড ও ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে স্মরণীয় দুটি জয় ধরা দিয়েছিল মিরপুরে টার্নিং উইকেট বানিয়েই। পরে গত কয়েক বছরে এ ধারা থেকে কিছুটা সরে এসেছিল বাংলাদেশ। তাতে জয়ও দূরে সরে গিয়েছিল অনেকটা। এ বছর আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রত্যাশিত দুটি জয়ের আগে টানা চার টেস্টে মিরপুরে হারতে হয়েছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে।

এবার হাথুরুসিংহে কোচ হয়ে আসার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে আবার দেখা গেল পুরোনো সেই কৌশল। এবার প্রথম দিনেই জয়ের ভিত গড়ার পর ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই জয়ের কথা মনে করিয়ে দিলেন মিরাজও। আমরা যদি প্রতিপক্ষকে অলআউটই না করতে পারি, তাহলে তো জিততে পারব না। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে অনেকটা এরকম উইকেটেই আমরা জিতেছি। আমাদের স্পিন আক্রমণ ভালো, সুযোগ তো অবশ্যই থাকে। ‘আমরা যদি ওদের অলআউট করতে না পারি, তাহলে তো জেতা কঠিন। দেশের বাইরে গিয়ে ভালো উইকেটে আমরা হয়তো অলআউট করতে পারি, কিন্তু অনেক রান হয়ে যায়। এটা তো রাতারাতি বদলানো যায় না। সময় দিলে আস্তে আস্তে বদলাবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close