ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৩

মিরপুরের উইকেট নিয়ে ধাঁধায় হাথুরুসিংহে

খুব বেশি তথ্য দিতে চাই না কারণ নিউজিল্যান্ড হয়তো এটা শুনতে পারে বা পড়তে পারে- সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই মুচকি হাসিতে বলে দিলেন চান্দিকা হাথুরুসিংহে। বাংলাদেশ কোচের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল দলীয় সমন্বয় নিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই পরিকল্পনার খুব গভীরে তিনি যেতে চাননি। তবে একটা জায়গায় কিছুটা অসহায়ত্বের সুরও থাকল তার কণ্ঠে। উইকেট পুরোপুরি বুঝতে পারলেই না কেবল দলীয় সমন্বয় নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়! মিরপুর শেরবাংলার উইকেটের আচরণ নিয়ে দ্বন্দ্বে থাকার কথা ক্রিকেটাররাও নানা সময়ে বলেছেন। বছরের পর বছর এখানে খেলেছেন, এমন ক্রিকেটাররাও সব সময় উইকেট দেখে বুঝে উঠতে পারেন না সম্ভাব্য আচরণ। এই ২২ গজে ধোঁকা খাওয়ার নজিরও কম নেই। এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগের দিন মিরপুরের উইকেট নিয়ে সেই অনিশ্চয়তার কথাই বললেন হাথুরুসিংহে। মিরপুর শেরবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট।

১৫০ রানে জয়ী হওয়া প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ একাদশ সাজিয়েছিল তিন স্পিনার ও এক পেসার নিয়ে। মিরপুর টেস্টেও একাদশ বাছাইয়ে ক্ষেত্রে একই ব্যাপারগুলো প্রাধান্য বলে ম্যাচের আগের দিন জানালেন হাথুরুসিংহে। দলীয় সমন্বয় নির্ভর করবে উইকেটের ওপর, আমাদের শক্তি ও তাদের সীমাবদ্ধতার ওপর। সিলেটে আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি। পাঁচ দিন ধরে সত্যিই লড়াই করেছি। আমাদের শক্তি ও সিলেটের কন্ডিশন অনুযায়ী আমরা সেখানে দলীয় সমন্বয় ঠিক করেছিলাম।

মিরপুরে সমস্যা হলো কোচ কিংবা দল উইকেটের সম্ভাব্য আচরণ নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। সিলেটের উইকেট স্পিনবান্ধব থাকলেও সেটা একতরফা ছিল না। পেসারদের জন্যও যেমন সেই উইকেটে সহায়তা ছিল তেমনি স্কিল ও নিবেদন দেখাতে পারলে যে রান করা সম্ভব সেটিও দেখা গেছে। সেই উইকেট দারুণ প্রশংসাও আদায় করে নিয়েছে। এমনকি নিউজিল্যান্ড দলের প্রতিনিধি হয়ে যারাই সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন, উইকেট ‘ভালো’ বলে রায় দিয়েছেন সবাই।

মিরপুরেও স্পিনারদের সহায়তা যথেষ্টই থাকার কথা। তবে সম্ভাব্য আচরণের খুঁটিনাটি নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে বলেই হয়তো একাদশে বড় পরিবর্তন হবে না বলে জানালেন কোচ। আপনারা যেমন জানেন, মিরপুরের উইকেট মাঝে মধ্যে বুঝে ওঠা কঠিন, এমনকি গোটা দুয়েক সেশন খেলার আগ পর্যন্ত (বোঝা যায় না)। এত বেশি ব্যস্ততায় থাকতে হয় এই উইকেটকে আমার মনে হয় না বিশ্ব ক্রিকেটে আর কোনো ভেন্যুতে এত খেলা হয়। আমরা তাই ধারণা করতে পারছি না, কী হবে এখানে। আমরা চেষ্টা করব খুব বেশি পরিবর্তন না করতে। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টিম সাউদিও উইকেট সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসে অভিজ্ঞ এই পেসার বলেছেন, উইকেট স্পিনবান্ধব হবে বলেই ধারণা করছেন তারা।

এদিকে ‘দেশে জয়, বিদেশে লড়াই’- এই মন্ত্রে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরু করেছে বাংলাদেশ। সিলেট টেস্টের জয় দিয়ে পথচলার শুরুটা হয়েছে দারুণ। একই রকম আশা মিরপুর টেস্ট ঘিরেও। তবে শুধু দেশের মাঠে নয়, তরুণ এই দলের দেশের বাইরেও নিজেদের মেলে ধরার সামর্থ্য আছে বলে বিশ্বাস কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের।

সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান এখনো সাদামাটা। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপও ব্যতিক্রম নয়। তবে এবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরুর আগে থেকে নতুন সম্ভাবনার আশা শোনাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ। সিলেট টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে যাত্রা শুরুর পর দেশের মাঠে ভালো খেলার ও ম্যাচ জেতার আরো বিশ্বাস জন্মেছে হাথুরুসিংহের। ঢাকায় সিরিজ জেতার সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে আরো একবার তাই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের লক্ষ্য মনে করিয়ে দিলেন হাথুরুসিংহে।

বাস্তবিক লক্ষ্য (আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে) ঘরের মাঠে সব ম্যাচ জেতার চেষ্টা করা। আমার মতে, আমরা এটি করতে পারব। সিরিজ শুরুর আগেও আমি বলেছি, আমাদের লক্ষ্য ঘরে ভালো খেলা। এরপর বাইরে গিয়ে লড়াই করা। আমি মনে করি, বাস্তবিক অর্থেই আমরা এটি করতে পারব। পরিসংখ্যানের দিক থেকে সবশেষ দুই চক্রে ঘরের চেয়ে বাইরেই তুলনামূলক ভালো করেছে বাংলাদেশ। প্রথমবার শ্রীলঙ্কার মাঠে একটি টেস্ট ড্র করেছে তারা, হেরেছে ঘরের মাঠে দুটিসহ বাকি ছয় ম্যাচের সবকটি। পরের চক্রে একমাত্র জয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদেরই মাঠে। এছাড়া ড্র হয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট। সব মিলিয়ে দুই আসরে ১৯ ম্যাচে জয় ১টি, ড্র ২টি। এর মধ্যে ঘরের মাঠে আট ম্যাচে নেই কোনো জয়, ড্র ১টি।

চলতি আসরে কিউইদের বিপক্ষে তুলনামূলক অনভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের নিয়েও ইতিবাচক শুরু করেছে নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন দল। সামনের দিনগুলোতে দেশের বাইরেও এই তরুণ ক্রিকেটারদের ওপর আস্থা রাখছেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ। আমি আগেও বলেছি, ভিন্ন কন্ডিশনে লড়াই করার জন্য আমাদের ভালো ফাস্ট বোলার আছে। আমাদের তরুণ ক্রিকেটাররা এই মুহূর্তে যেকোনো কন্ডিশনে খেলার সামর্থ্য রাখে। আমাদের সেভাবে তৈরি হতে হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close